‘গৃহকর্মীর নির্যাতনের সময় ভাগ্যক্রমে প্রাণে বেঁচে যান আমার বৃদ্ধা মা। এমন নির্মম ঘটনা যেন আর কোনো মায়ের সঙ্গে না ঘটে, সেজন্য নির্যাতনকারী গৃহকর্মী রেখার কঠোর শাস্তি হওয়া উচিত। শহরে অনেক কর্মজীবী আছেন, যারা বয়স্ক মা-বাবার দেখভালের দায়িত্ব গৃহকর্মীকে দিতে বাধ্য হন। সেই গৃহকর্মীই যদি ঘাতক হয়ে ওঠে, তাহলে আমরা যাব কই?’
কথাগুলো বলেছেন রাজধানীর শাহজাহানপুরে গৃহকর্মীর নির্যাতনের স্বীকার হওয়া বৃদ্ধা বিলকিস বেগমের মেয়ে মেহেবুবা জাহান।
বিলকিস বেগমকে নির্যাতনের ঘটনায় মেহেবুবা জাহান গত ১৯ জানুয়ারি শাহজাহানপুর থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলাটি তদন্ত করছে শাহজাহানপুর থানা পুলিশ। গত ২৭ জুন এ মামলায় তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের তারিখ ধার্য ছিল। কিন্তু ওই দিন শাহজাহানপুর থানা পুলিশ প্রতিবেদন দাখিল করতে পারেনি। এজন্য ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সাদবীর ইয়াছির আহসান চৌধুরীর আদালত আগামী ২২ আগস্ট প্রতিবেদন দাখিলের পরবর্তী তারিখ ধার্য করেছেন।
মেহেবুবা জাহান বলেন, ‘মামলাটির তদন্ত চলছে। পুলিশ এসে মামলার বিষয়ে কথা বলে গেছে। নির্মমভাবে আমার মাকে নির্যাতন করেছে রেখা। সত্য ঘটনা, সবাই তো বিষয়টা দেখেছে। তবে, একটা ঝামেলা হয়েছিল মেডিক্যাল রিপোর্ট নিয়ে। মাকে বাঁচাতে আমার ভাই তাকে হলি ফ্যামিলি হসপিটালে ভর্তি করে। তখন তারা ভাইয়ের কাছ থেকে একটা স্বাক্ষর নেয় যে, তারা কোনো পুলিশ রিপোর্ট দিতে পারবে না। আমার ভাইয়ের তখন চিন্তা ছিল—কীভাবে মাকে বাঁচানো যায়। তিনিও স্বাক্ষর করেন। তবে তদন্ত কর্মকর্তা বিষয়টি দেখবেন বলে জানিয়েছেন। দেখা যাক, কী হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘মা বরাবরই আমার সাথেই থাকেন। এখনও আমার সাথে মালিবাগে আছেন। মা এখন ভালোই আছেন। তবে, রেখাদের মতো অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক সাজা চাই। যেন আর কোনো গৃহকর্মী এ ধরনের ঘটনা ঘটানোর সাহস না পায়।’
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহজাহানপুর থানার এসআই রেজাউল করিম বলেন, ‘তদন্ত শেষ হয়েছে। এখন চার্জশিট রেডি করছি। মেডিক্যাল রিপোর্ট নিয়ে একটু ঝামেলা ছিল। সমাধান হয়ে গেছে। গৃহকর্মী রেখা আক্তার ও তার স্বামী ফরহাদ এরশাদকে অভিযুক্ত করেই চার্জশিট দেওয়া হবে।’
রেখা ও ফরহাদ কোনো গ্যাংয়ের সঙ্গে জড়িত কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, ‘তাদের বিষয়টি খতিয়ে দেখেছি। তারা এর আগে এরকম কোনো ঘটনা ঘটায়নি। রেখা আগে বিদেশে গিয়েছিল। এখন টাকা-পয়সা নেই। স্বামী আবার বিয়ে করেছে। নানা বিষয় নিয়ে মানসিক যন্ত্রণায় ছিল সে। সেজন্য এরকম করেছে। সে ভেবেছিল, নির্যাতনের কথা প্রকাশ পাবে না। কিন্তু তা তো প্রকাশ হয়ে গেছে। যাই হোক, মামলার তদন্ত শেষ। লকডাউনের কারণে চার্জশিট দেওয়া হচ্ছে না। লকডাউন শেষ হলেই চার্জশিট আদালতে দাখিল করব।’
রেখার স্বামী ফরহাদ এরশাদের আইনজীবী জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘ফরহাদ ঘটনাস্থলে ছিল না। ঘটনার বিষয়ে কিছু জানেও না। রেখার স্বামী হওয়ায় তাকে মামলায় সম্পৃক্ত করা হয়েছে। মামলাটির তদন্ত চলছে। আসামির বিরুদ্ধে চার্জশিট হলে মামলাটি ট্রায়ালে যাবে। চেষ্টা করব তাকে নির্দোষ প্রমাণ করতে। আদালত বিচারে যে রায় দেবেন, মাথা পেতে নেবো।’
উল্লেখ্য, মেহেবুবা জাহান তার মা বিলকিস বেগম ও বোন দিলরুবা জাহানকে নিয়ে একই বাসায় থাকতেন। গত ১৭ জানুয়ারি মেহেবুবা জাহান কাজের জন্য বরিশালে যান। ১৮ জানুয়ারি দিলরুবা ব্যাংকের কাজে বাইরে যান। ওই বাসায় বৃদ্ধাকে দেখাশোনার দায়িত্বে ছিল গৃহকর্মী রেখা। বৃদ্ধাকে একা পেয়ে তার ওপর নির্যাতন চালায় গৃহকর্মী। এমনকি শরীরের ওপর বসে এবং বাথরুমে নিয়ে শীতের দিনে ঠান্ডা পানি ঢেলে নির্যাতন করে। একপর্যায়ে বৃদ্ধা বাথরুম থেকে বের হয়ে আসেন। সে সময় ওই বৃদ্ধার ব্যবহৃত ছড়ি (লাঠি) দিয়ে রেখা তাকে মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে। এরপর আলমারি থেকে সোনা ও টাকা লুট করে পালিয়ে যায়। যার আনুমানিক মূল্য ২০ লাখ ৭৮ হাজার টাকা। নির্যাতনের পুরো ঘটনাটি বাসায় থাকা সিসি ক্যামেরায় রেকর্ড হয়। এ ঘটনায় ১৯ জানুয়ারি বৃদ্ধার মেয়ে মেহবুবা জাহান শাহজাহানপুর থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পর ২১ জানুয়ারি ভোরে ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল থেকে রেখাকে স্বামীসহ গ্রেপ্তার করে শাহজাহানপুর থানা পুলিশ। ২২ জানুয়ারি আদালত তাদের ৮ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ড শেষে ৩১ জানুয়ারি রেখা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। পরে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। ওই দিন তার স্বামীকে রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠানো হয়। গত ২ মে ফরহাদকে জামিন দেন আদালত। রেখা কারাগারে আছে। সূত্র : রাইজিংবিডি
প্রকাশক : আরিফ মাহমুদ, প্রধান সম্পাদক : কাজী আবু ইমরান, সম্পাদক : আবু রায়হান মিকাঈল
ফেসবুক পেইজঃ facebook.com/kalaroanewsofficial, ই-মেইল : [email protected]