পরিবারের স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনার স্বপ্ন নিয়ে সৌদি আরব পাড়ি জমান বুক ভরা আশা নিয়ে প্রভাষক হাফিজুর রহমান। পাঁচ মাস অবস্থান করেও সেখানে কাজ দেয়নি দালাল। অবশেষে ঝাড়ুদার হিসেবে কাজ দেয়া হয় হাফিজুরকে। এরপর সৌদি আরবে রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে হাফিজুরের।
হাফিজুর রহমান (৪০) সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার জয়নগর ইউনিয়নের কৃপারামপুর গ্রামের রোস্তম আলী সানার ছেলে। তিনি কলারোয়ার নন এমপিওভুক্ত ইঞ্জিনিয়ার শেখ মুজিবুর রহমান মহাবিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট বিভাগের প্রভাষক ছিলেন। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে এক বছর দায়িত্ব পালন করেন তিনি। কলেজে বেতন না পাওয়ায় ব্যর্থতার গ্লানি নিয়ে, নতুন স্বপ্ন নিয়ে পাড়ি জমিয়েছিলেন সৌদি আরবে, কিন্তু ফিরতে হচ্ছে লাশ হয়ে।
হাফিজুর রহমানের দুলাভাই আবুল কালাম আজাদ জানান, কলেজে বেতন না পাওয়ায় বউ-বাচ্চা নিয়ে অভাব অনটনে দিন কাটছিলো হাফিজুরের। একই গ্রামের সিদ্দিকুর রহমান খাঁর ছেলে মোখলেছুর রহমান খাঁ সৌদি আরব প্রবাসী। এমএ পাস শিক্ষিত ছেলের এমন অভাব অনটন দেখে সিদ্দিকুর রহমান তার ছেলের মাধ্যমে সৌদি আরবে যাওয়ার জন্য প্রলোভন দেখায়। ৬ লাখ টাকা দিয়ে ২০২২ সালের (২৮ ডিসেম্বর) সৌদি আরব পাড়ি জমান হাফিজুর। সেখানে নেয়ার পর কোনো কাজ দেয়নি দালাল মোখলেছুর খাঁ। তাকে খাবার দেয়া হতো দিনের বেলা ১২টায় ও রাত ১২টায়। এভাবে চলতে থাকে দিনের পর দিন। তখন হাফিজুর রহমান দেশে ফিরে আসতে চান। তখন দালাল মোখলেছুর এতদিনে খাওয়া খরচ বাবদ আরও এক লাখ ১০ হাজার টাকা দাবি করে। অবশেষে চলতি বছরের মে মাসের ১৫ তারিখে হাফিজুরের পরিবার ব্যাংকের মাধ্যমে সেই টাকাটিও প্রদান করে মোখলেছুরকে।
তিনি আরও জানান, এরপর যে বিল্ডিংয়ে ওই দালাল থাকতেন সেই বিল্ডিংয়ের (১৭ মে) ঝাড়ুদার হিসেবে কাজ দেয় হাফিজুরকে। আর পরবর্তীতে নেয়া এক লাখ ১০ হাজার টাকা ফেরত দেয়ার কথা জানায় মোখলেছুর। ১০-১২ দিন আগে দালাল মোখলেছুর সৌদি আরব থেকে স্ত্রীকে নিয়ে গ্রামের বাড়ি কলারোয়ার কৃপারামপুরে ফেরেন। গত বৃহস্পতিবার (১৫ জুন) এক লাখ ১০ হাজার টাকা ফেরত দেয়ার কথা ছিল মোখলেছুরের, কিন্তু দেয়নি। ওই দিন থেকে সৌদি আরবে থাকা হাফিজুরের মোবাইলে কোন সন্ধান মিলছিল না। পরবর্তীতে একত্রে থাকা অন্য একজনের সঙ্গে যোগাযোগ করলে শনিবার (১৭ জুন) সৌদি আরব থেকে জানায়, হাফিজুর গলায় রশি দিয়ে মারা গেছে।
এ ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর মোখলেছুর গ্রাম ছেড়ে পালানোর চেষ্টাকালে হাফিজুরের পরিবারের সদস্যরা তাকে আটক করে পুলিশে দেয়। ঘটনায় কলারোয়া থানায় একটি প্রতারণার অভিযোগে মামলা করেছে হাফিজুরের পরিবার। আসামি করা হয়েছে সিদ্দিকুর রহমান খাঁসহ তার আরেক ছেলে জুয়েল খাঁকে।
কলারোয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক তদন্ত আবুল কালাম আজাদ জানান, সৌদি আরব প্রবাসী দালাল মোখলেছুর রহমান খাঁকে আটক করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। বাকি দুই আসামি পলাতক রয়েছে। তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা করা হচ্ছে।
এদিকে, মৃত্যুর আগে হাফিজুরের হাতে লেখা বেশকিছু চিরকুট পাওয়া গেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। সেখানে তার মৃত্যুর জন্য সিদ্দিকুর ও মোখলেচুরকে দায়ী করেছেন তিনি।
এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তার লাশ এখনো বাংলাদেশে আনা হয়নি। লাশ আনার প্রক্রিয়া চলছে বলে পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে।
প্রকাশক : আরিফ মাহমুদ, প্রধান সম্পাদক : কাজী আবু ইমরান, সম্পাদক : আবু রায়হান মিকাঈল
ফেসবুক পেইজঃ facebook.com/kalaroanewsofficial, ই-মেইল : [email protected]