শরীরে অনেক ধরনের ক্যানসার হতে পারে। সলিড ক্যানসার (ব্রেইন, লাং, ব্রেস্ট, পাকস্থলী, কোলন, লিভার, কিডনি, জরায়ু, ওভারি, প্রস্টেট ক্যানসার ইত্যাদি)। ব্লাড ক্যানসার (লিউকেমিয়া, লিম্ফোমা, মাল্টিপল মায়েলোমা ইত্যাদি)। ব্লাড ক্যানসার লোহিত রক্তকণিকা থেকে হয়। এই রোগ যে কোনো বয়সে হতে পারে। এটা সাধারণত শিশুদের বেশি হয়ে থাকে। ব্লাড ক্যানসার বা রক্তের ক্যানসার নিয়ে অনেক ভুল ধারণা প্রচলিত। সময়ের সঙ্গে এ ধরনের রোগের চিকিৎসা পদ্ধতি পাল্টেছে, অনেক উন্নতিও লাভ করেছে।
ব্লাড ক্যানসার কি : মূলত লিউকেমিয়াকে আমরা ব্লাড ক্যানসার বলে থাকি। এটি হলো রক্তকোষের ক্যানসার, বিশেষত শ্বেত রক্তকণিকার ক্যানসার। রক্তকোষ তৈরি হয় বোনম্যারো বা অস্থিমজ্জায়, তারপর ধাপে ধাপে পরিপক্ব বা পরিণত হয়ে অবশেষে এটি রক্তে আসে। যদি কোনো কারণে অতিমাত্রায় ও অস্বাভাবিকভাবে এই রক্তকোষ তৈরি হয়, তাহলে সেগুলো পরিপক্ব হতে পারে না। এতে প্রচুর অপরিপক্ব ও অস্বাভাবিক রক্তকোষ রক্তপ্রবাহে চলে আসে। মূলত শ্বেত রক্তকণিকাই বেশি আক্রান্ত হয়। কিন্তু ক্রমে অস্থিমজ্জা পুরোপুরি আক্রান্ত হওয়ার কারণে রক্তের অন্যান্য কোষের অভাবও দেখা দেয়।
ব্লাড ক্যানসার কেন হয় : সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ ছাড়াও ব্লাড ক্যানসার হতে পারে। তবে রেডিয়েশন, ইন্ডাস্ট্রিয়াল কেমিক্যাল, কীটনাশক বা পেস্টিসাইড, ভেজাল খাবার, হেয়ার ডাই, লুব্রিকেন্টস, বার্নিশ, কেমোথেরাপি ড্রাগস ও কিছু জেনেটিক অসুখ এর জন্য দায়ী থাকতে পারে। যে কোনো বয়সে, যে কারোই ব্লাড ক্যানসার হতে পারে।
উপসর্গ ও লক্ষণ
# রক্তস্বল্পতার জন্য দুর্বলতা, খাবারের অরুচি, বুকধড়ফড়, পায়ে পানি জমে যাওয়া, ফ্যাকাসে হয়ে যাওয়া ইত্যাদি।
# দীর্ঘদিনের জ্বর বা ঘন ঘন জ্বর হওয়া।
# অস্বাভাবিক রক্তক্ষরণ (শরীরে র্যাশ, দাঁতের গোড়া-প্রস্রাব-পায়খানা-কাশির সঙ্গে রক্ত পড়া, মাসিক বেশি হওয়া ইত্যাদি)।
# গ্লান্ড ফুলে যাওয়া, লিভার-প্লীহা বড় হওয়া।
# হাড়ে ব্যথা, কোমর ব্যথা।
ব্লাড ক্যানসারের ধরণ
# লিউকেমিয়া, লিম্ফোমা, মাল্টিপল মায়েলোমা হচ্ছে ব্লাড ক্যানসার।
# লিউকেমিয়া মূলত দুই ধরনের। একিউট লিউকেমিয়া ও ক্রনিক লিউকেমিয়া।
# একিউট লিউকেমিয়া আবার দুই ধরনের, যথা-একিউট মায়েলোব্লাস্টিক লিউকেমিয়া বা এএমএল এবং একিউট লিম্ফোব্লাস্টিক লিউকেমিয়া বা এএলএল।
# ক্রনিক লিউকেমিয়াও দুই ধরনের যেমন-ক্রনিক মায়েলোয়েড লিউকেমিয়া বা সিএমএল ও ক্রনিক লিম্ফোসাইটিক লিউকেমিয়া বা সিএলএল।
# লিম্ফোমা নামক ব্লাড ক্যানসার দুই ধরনের যেমন-হজকিনস লিম্ফোমা ও নন হজকিনস লিম্ফোমা।
# মাল্টিপল মায়েলোমাও ব্লাডের শ্বেত রক্ত কণিকা বি লিম্ফোসাইট থেকে তৈরি প্লাজমা সেল ক্যানসার। এতে রক্তস্বল্পতা, কোমর ব্যথা, হাড় ক্ষয় ও কিডনির সমস্যা হয়ে থাকে।
ব্লাড ক্যানসার নির্ণয়ের পদ্ধতি : ব্লাড ক্যানসারের উপসর্গ ও লক্ষণগুলোর সঙ্গে সঙ্গে রক্তের সিবিসি পরীক্ষায় অস্বাভাবিকতা দেখা দেয়; যেমন- হিমোগ্লোবিন, ডব্লিউবিসি এবং প্লেটলেট কমে যাওয়া অথবা বেড়ে যাওয়া। বোনম্যারো টেস্ট, ফ্লোসাইটোমেট্রি, মলিকুলার সাইটোজেনেটিক টেস্ট এবং এনজিএস টেস্ট করে ব্লাড ক্যানসার নির্ণয় করা হয়ে থাকে। লিম্ফোমা নামক ব্লাড ক্যানসারের ক্ষেত্রে গ্লান্ড বা টিস্যু বায়োপসি এবং পরবর্তীকালে ইমিউনোহিস্টোকেমিস্ট্রি করা লাগে।
চিকিৎসা কি : সাধারণত কেমোথেরাপি, মলিকুলার টার্গেটেড থেরাপি, ইমিউনো থেরাপি এবং কিছু ক্ষেত্রে অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন (বিএমটি) করে ব্লাড ক্যানসারের চিকিৎসা করা হয়। কী ধরনের ওষুধ বা থেরাপি দিতে হবে এবং ফলাফল কী হবে তা জানার জন্য লিউকেমিয়া, লিম্ফোমা, মায়েলোমাকে নির্ভুল পরীক্ষার মাধ্যমে বিভিন্ন উপভাগে ভাগ করা হয়।
ভালো হওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু : ব্লাড ক্যানসার মানেই মরণব্যাধি নয়। সময়ের সঙ্গে এ ধরনের রোগের চিকিৎসা পদ্ধতি পাল্টেছে, অনেক উন্নতিও লাভ করেছে। সঠিক সময়ে সঠিকভাবে রোগ নির্ণয় করে সঠিক চিকিৎসা নিলে অনেক ব্লাড ক্যানসার ভালো হয় ও নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। তবে মনে রাখবেন, ব্লাড ক্যানসার কোনো ছোঁয়াচে রোগ নয়।
লেখক : ডা. মো. কামরুজ্জামান, ক্লিনিক্যাল হেমাটোলজিস্ট, সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতাল, ঢাকা।
প্রকাশক : আরিফ মাহমুদ, প্রধান সম্পাদক : কাজী আবু ইমরান, সম্পাদক : আবু রায়হান মিকাঈল
ফেসবুক পেইজঃ facebook.com/kalaroanewsofficial, ই-মেইল : [email protected]