অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ম্যাচের পঞ্চমদিনে ৩২৮ রানের লক্ষ্য তাড়া করে জেতার সুখস্মৃতি ছিল ভারতীয় ক্রিকেট দলের সঙ্গী। ফলে ঘরের মাঠে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৪২০ রানের বিশাল লক্ষ্য দেখেও আশা হারায়নি তারা। কিন্তু শেষপর্যন্ত আর কাজে লাগেনি অসিদের মাটিতে ৩২৮ রান তাড়া করে জেতার সেই অনুপ্রেরণা।
৩৮ বছর বয়সী পেসার জেমস অ্যান্ডারসন ও বাঁহাতি স্পিনার জ্যাক লিচের জাদুকরী স্পিনে ভারত অলআউট হয়ে গেছে মাত্র ১৯২ রানে। ইংল্যান্ড পেয়েছে ২২৭ রানের বিশাল ব্যবধানে জয়। শ্রীলঙ্কাকে তাদের মাটিতে হোয়াইটওয়াশ করে আসা ইংল্যান্ড এবার ভারতের বিপক্ষে চার ম্যাচ সিরিজেও করল উড়ন্ত সূচনা।
এ জয়ের ফলে এখন আইসিসি বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের পয়েন্ট টেবিলেও শীর্ষে উঠে গেছে ইংল্যান্ড। পয়েন্টের হিসেবে ৪৪২ ও শতাংশের হিসাবে ৭০ দশমিক ২ শতাংশ পয়েন্ট পেয়ে সবার ওপরে তারা। এরপর যথাক্রমে নিউজিল্যান্ড (৭০.০ শতাংশ), অস্ট্রেলিয়া (৬৯.২ শতাংশ) ও ভারত (৬৮.৩ শতাংশ)।
এদিকে প্রায় চার বছর পর ঘরের মাঠে কোনো টেস্ট ম্যাচ হারল ভারত। সবশেষে ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে পুনে টেস্টে স্টিভ ও'কিফের স্পিন বিষে নীল হয়ে ৩৩৩ রানের বিশাল ব্যবধানে হেরেছিল ভারত।
এবার চেন্নাইয়ের চিপক স্টেডিয়ামে তারা ইংল্যান্ডের কাছে হারল ২৪৫ রানে। চেন্নাইয়ের কোনো মাঠে প্রায় ২২ বছর পর হারল তারা। ১৯৯৯ সালে এমএ চিদম্বরম স্টেডিয়ামে পাকিস্তানের কাছে ১২ রানে হেরেছিল ভারত।
ঘরের মাঠে ইংল্যান্ডের কাছে এ নিয়ে ১৪টি ম্যাচ হারল ভারত। যা কি না ভারতের নিজেদের মাঠে কোনো নির্দিষ্ট প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ পরাজয়ের রেকর্ড। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষেও ঘরের মাঠে ১৪টি ম্যাচ হেরেছে তারা। এছাড়া অস্ট্রেলিয়ার কাছে তারা ঘরে হেরেছে ১৩টি ম্যাচ।
নিজের শততম টেস্ট খেলতে নেমে ইংল্যান্ড অধিনায়ক জো রুট ডাবল সেঞ্চুরি করে যেমন জিতেছেন ম্যাচসেরার পুরস্কার, তেমনি পেয়েছেন অধিনায়কত্ব ক্যারিয়ারের ২৬তম জয়। যা কি না ইংল্যান্ডের যেকোনো অধিনায়কের সর্বোচ্চ টেস্ট জয়ের রেকর্ড। সাবেক অধিনায়ক মাইকেল ভনের অধীনেও ২৬ ম্যাচ জিতেছিল ইংলিশরা।
রুট যখন গড়েছেন সাফল্যের রেকর্ড, তখন নেতিবাচক কীর্তি লেখা হয়েছে ভারতের অধিনায়ক বিরাট কোহলির নামে। তার অধীনে খেলা সবশেষ চারটি ম্যাচেই হারল ভারত। নিউজিল্যান্ড সফরে ওয়েলিংটন ও ক্রাইস্টচার্চের পর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে এডিলেইডেও হেরেছিল ভারত। আর এবার তো হেরে গেল ঘরের মাঠেই।
অবশ্য ম্যাচ বাঁচানো বা জেতানোর সর্বোচ্চ চেষ্টাই করেছিলেন কোহলি। কিন্তু অন্যান্যদের ব্যর্থতায় সফল হননি ভারতীয় অধিনায়ক। আজ (মঙ্গলবার) ১ উইকেটে ৩৯ রান নিয়ে শেষদিনের খেলা শুরু করেছিল ভারত। অর্থাৎ পঞ্চম দিনের ৯০ ওভারে ম্যাচ জেতার জন্য তাদের প্রয়োজন ছিল ৩৮১ রান। যা রীতিমতো অসম্ভবের কাতারেই পড়ে।
তবু ইতিবাচক খেলার প্রত্যয় ছিল ভারতীয়দের মনে। কিন্তু দিনের সপ্তম ওভারেই তারা হারায় নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান চেতেশ্বর পুজারার (৩৮ বলে ১৫) উইকেট। পরে একই ওভারে অসাধারণ দুইটি ডেলিভারিতে শুবমান গিল (৮৩ বলে ৫০) ও অজিঙ্কাকে রাহানের (৩ বলে ০) স্ট্যাম্প ছত্রখান করে দেন জিমি অ্যান্ডারসন।
তখন মাত্র ৯২ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে বিপদে ভারত। তাদের চার আরও বাড়ে দলীয় ১১০ রানের মাথায় রিশাভ পান্তও (১৯ বলে ১১) ফিরে গেলে। এরপর একা হাতে খানিক লড়াই চালিয়ে নেন অধিনায়ক কোহলি, করেন ফিফটি। কিন্তু বেন স্টোকসের নিচু হয়ে আসা ডেলিভারিতে বোল্ড হয়ে থেমে যায় কোহলির ৭২ রানের ইনিংস।
ভারতীয় অধিনায়কের বিদায়ের মাধ্যমেই মূলত নিশ্চিত হয়ে যায় তাদের পরাজয়। বাকি কাজটুকু সারতে সময় নেননি জ্যাক লিচ, জোফরা আর্চাররা। ইনিংসের ৫৯তম ওভারের প্রথম বলে জাসপ্রিত বুমরাহকে উইকেটের পেছনে ক্যাচ বানিয়ে ভারতকে অলআউট করে দেন আর্চার।
পুরো ইনিংসে এই একটি উইকেটই পেয়েছেন আর্চার। সর্বোচ্চ ৪ উইকেট দখল করেছেন বাঁহাতি স্পিনার লিচ। এছাড়া অ্যান্ডারসনের শিকার ৩ উইকেট। বাকি দুই উইকেট গেছে ডম বেস ও বেন স্টোকসের ঝুলিতে।
প্রকাশক : আরিফ মাহমুদ, প্রধান সম্পাদক : কাজী আবু ইমরান, সম্পাদক : আবু রায়হান মিকাঈল
ফেসবুক পেইজঃ facebook.com/kalaroanewsofficial, ই-মেইল : [email protected]