ভারত-কানাডা দ্বন্দ্বে কার পক্ষ নেবে যুক্তরাষ্ট্র?
শিখ নেতা হরদীপ সিং নিজ্জার হত্যাকাণ্ডে ভারত সরকার জড়িত অভিযোগ করে সম্প্রতি বিতর্কের ঝড় তুলেছে কানাডা। এর জেরে পাল্টাপাল্টি কূটনীতিক বহিষ্কারের ঘটনা ঘটেছে। কানাডীয়দের ভিসা দেওয়াও বন্ধ করে দিয়েছে ভারত। দুই দেশের সম্পর্ক নেমে গেছে একেবারে তলানিতে।
প্রশ্ন হচ্ছে, দুই গুরুত্বপূর্ণ মিত্রের এই বিরোধে যদি কারও পক্ষ নিতেই হয়, তাহলে কোনদিকে যাবে যুক্তরাষ্ট্র?
রাজনৈতিক পরামর্শক সংস্থা সিগনাম গ্লোবাল অ্যাডভাইজরসের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান চার্লস মায়ার্স মনে করছেন, ভারত-কানাডা দ্বন্দ্ব থেকে যতটা সম্ভব দূরত্ব বজায় রাখার চেষ্টা করবে যুক্তরাষ্ট্র। মোদী সরকারের সঙ্গে সাম্প্রতিক সময়ে যে সুসম্পর্ক তৈরি করেছে বাইডেন প্রশাসন, তা কোনোভাবেই ঝুঁকির মুখে ফেলতে চাইবে না তারা।
জো বাইডেনের দল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির দীর্ঘদিনের সমর্থক ও দাতা মায়ার্স। বাইডেনের জন্য অতীতে তহবিলও সংগ্রহ করেছেন তিনি।
সম্প্রতি বিএনএন ব্লুমবার্গ টেলিভিশনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে চার্লস মায়ার্স বলেন, চীনকে প্রতিযোগিতায় হারানোর জন্য ভারতের সঙ্গে যুক্ত হতে আমরা যা যা করতে পারি, তা করছি। আমি মনে করি না, যুক্তরাষ্ট্র (ভারত-কানাডা দ্বন্দ্বে) খুব বেশি জড়াবে।
চলতি বছরের জুনে কানাডায় গুলিতে নিহত হন খালিস্তানি আন্দোলনের নেতা হরদীপ সিং নিজ্জার। গত সপ্তাহে কানাডীয় প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো দাবি করেছেন, এই হত্যাকাণ্ডে ভারত সরকার জড়িত থাকার ‘বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ’ পেয়েছেন তারা।
গত ১৮ সেপ্টেম্বর হাউজ অব কমন্সের সভায় ট্রুডো বলেন, কানাডার মাটিতে একজন কানাডীয় নাগরিক হত্যায় বিদেশি কোনো সরকারের সংশ্লিষ্টতা আমাদের সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন। স্বাধীন, মুক্ত ও গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা যেভাবে কাজ করে, তার সম্পূর্ণ পরিপন্থি এ ধরনের ঘটনা।
তবে নিজ্জার হত্যাকাণ্ডে ভারত সরকার জড়িত থাকার গুরুতর এই অভিযোগকে ‘মনগড়া’ এবং ‘উদ্দেশ্য প্রণোদিত’ বলে নাকচ করে দিয়েছে নয়াদিল্লি।
ভারত সরকারের দাবি, ট্রুডো প্রশাসনের এই ‘ভিত্তিহীন অভিযোগ’ খালিস্তানি সন্ত্রাসী ও উগ্রপন্থিদের ওপর থেকে দৃষ্টি ঘুরিয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টা। ভারতের সার্বভৌমত্ব ও ভৌগোলিক অখণ্ডতার প্রতি হুমকি হয়ে ওঠা ব্যক্তিদের কানাডায় আশ্রয় দেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছে নয়াদিল্লি।
নিজ্জার হত্যাকাণ্ডে ভারত সরকার জড়িত অভিযোগ করার পরপরই এক জ্যেষ্ঠ ভারতীয় কূটনীতিককে বহিষ্কার করেছে কানাডা। জবাবে ভারতও এক জ্যেষ্ঠ কানাডীয় কূটনীতিককে বহিষ্কার করেছে। পাশাপাশি, কানাডীয়দের জন্য ভিসা পরিষেবাও স্থড়িত করেছে তারা।
এ অবস্থায় গত শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) নিজ্জার হত্যার তদন্তে সহযোগিতা করতে ভারতের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেছেন, তারা এ বিষয়ে ‘জবাবদিহিতা’ নিশ্চিত করতে চান।
কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র বা অন্য কোনো মিত্র এখন পর্যন্ত ভারতের বিরুদ্ধে শক্ত পদক্ষেপ নেয়নি।
চার্লস মায়ার্স বলেন, প্রধানমন্ত্রী ট্রুডোর জন্য এই অভিযোগগুলো প্রকাশ্যে আনতে এবং সেগুলো কতটা গুরুতর তা বিবেচনা করতে তার কাছে খুব ভালো গোয়েন্দা তথ্য ও প্রমাণ থাকতে হবে। যদি তা সত্য হয়, এটি হবে কানাডার মাটিতে রাষ্ট্রীয় মদদপুষ্ট সন্ত্রাসবাদের উদাহরণ।
কিন্তু এরপরও, যুক্তরাষ্ট্র এই বিষয়টি থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করবে বলে বিশ্বাস করেন এ বিশেষজ্ঞ।
সূত্র: এনডিটিভি
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)