‘কাজির গরু কিতাবে আছে, গোয়ালে নেই’- এমনই অবস্থা সাতক্ষীরার কলারোয়ায়। কাগজে-কলমে-মুখে কলারোয়া উপজেলা ভিক্ষুকমুক্ত হলেও ঝাঁকে ঝাঁকে দেখা মেলে ভিক্ষুকদের। শুক্রবারে তো রীতিমতো ভিক্ষুকের মেলা বসে এখানে। আর চলতি রমজান মাসে পেশাদারী-অপেশাদারী ভিক্ষুকের চাপে অনেকটা অসহায় হয়ে পড়ে বাজারের দোকানদারসহ বাসা-বাড়ির গৃহকর্তারা। যারা সত্যিকার অর্থে ভিক্ষুক বা অত্যন্ত অসহায়-গরীব তাদের সহায়তা করতে চান যেকোন সামর্থবান মানুষই। তবে বর্তমানে এখানকার ভিক্ষুকদের সিংহভাগই ভিক্ষাবৃত্তিকে পেশায় পরিণত করেছে, যাদের অনেকেই ভিক্ষা না করে কাজ করে চলার সামর্থ রয়েছে।
শুক্রবার, ১৫ রমজান (৭ এপ্রিল) সকাল থেকে উপজেলা সদরের কলারোয়া বাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় এ দৃশ্য চোখে পড়ে। এছাড়া জুম্মা নামাজের পর বিভিন্ন মসজিদে মাত্রাতিরিক্ত ফকিরের আনাগোনায় সাধারণ মুসল্লিরা মসজিদ থেকে বের হতেই হিমশিম খেয়ে যায়। উপজেলা সদরের থানা জামে মসজিদ, কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ, কাছারি জামে মসজিদ, বাসস্ট্যান্ড জামে মসজিদ, উপজেলা পরিষদ জামে মসজিদসহ বিভিন্ন মসজিদের বহু সংখ্যক নারী-পুরুষ-শিশু ভিক্ষুকদের চোখে পড়ে। এক এক মসজিদের সামনে ৫জন থেকে ২০/২৫জন পর্যন্ত ভিক্ষুকদের আনাগোনা চোখে পড়েছে। তাছাড়া ভোর থেকে বাসাবাড়ি আর একটু সকাল হলে বাজারের দোকানপাটে কালেকশনে নেমে পড়েন ঝাঁকে ঝাঁকে ভিক্ষুক। তাদের অনেকেই আবার ভিক্ষা চান না, সাহার্য চান। এদের অনেকেই ভিন্ন উপজেলা, জেলাসহ অন্য স্থান থেকে এখানে এসেছেন বলে জানা গেছে।
থানা মসজিদ থেকে জুম্মার নামাজ পড়ে বের হওয়া কয়েকজন মুসল্লি জানান, ‘সামর্থ অনুযায়ী কয়েকজনকে ভিক্ষা প্রদান করছেন, তখন হাত পাতছেন আরো অনেক ভিক্ষুক। এতে বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে পড়তে হচ্ছে।’
কয়েকজন দোকানদার জানান, ‘সকালে দোকান খোলার পর থেকে ভিক্ষুকদের সিরিয়াল পড়ে যায়। গড়ে প্রতিদিন ১২০-১৫০ জন ভিক্ষুককে ভিক্ষা দিতে হয়। একটাকার কয়েন এখন আর ভিক্ষুকরা নিতে চান না। তবু কয়েকশ’ টাকা ভিক্ষা প্রদান করতে হয়।’
ওসমান গনি, শেখ কবিরুল, কামরুল হোসেনসহ অনেকে জানান, ‘ভিক্ষার হাত বাড়ানো অনেক নারী-পুরুষের শারীরিক অবস্থা দেখে কর্মঠ মনে হয়। তাদের অনেকেই স্বাভাবিক হাটা-চলা করছে। তবু ভিক্ষা করা তাদের পেশায় পরিণত হয়েছে। তাদের অনেকে আবার ছোট শিশুদের সামনে নিয়ে অনুভূতি সৃষ্টি করে ভিক্ষা নেয়ার জন্য।। নিত্যনতুন ও পেশাদারী ভিক্ষুকদের মাত্রাতিরিক্ত পদচারণায় অনেকটা বিড়ম্বনা আর বিব্রতের মধ্যে মুসল্লি, দোকানদার ও সাধারণ মানুষ অনেকেই অসন্তুষ্ট হচ্ছেন।’
জানা গেছে, কয়েক বছর আগে কলারোয়া ভিক্ষুকমুক্ত উপজেলা ঘোষনা করা হলেও বর্তমানে প্রায় প্রতিদিনই উপজেলা সদরসহ ১২টি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় ভিক্ষুকদের হরহামেশা দেখা যায়। কাগজে-কলমে-মুখে ভিক্ষুকমুক্ত উপজেলা হলেও বাস্তবে বিপরীত। ভিক্ষুকমুক্ত কলারোয়ায় ভিক্ষুকের আধিক্যতা যেনো আগের চেয়ে বেশিতে পরিণত হয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই উপজেলা সদরসহ বিভিন্ন এলাকায় ভিক্ষুকদের ভিক্ষা করতে দেখা যায়। আর শুক্রবার এলে তো কথাই নেই। প্রতি সপ্তাহের শুক্রবার ভিক্ষুকের হাট বসে যেখানে সেখানে। বাজারগুলোতে দোকানে দোকানে গিয়ে, বাসাবাড়িতে গিয়ে টাকা, চালসহ অন্যান্য ভাবে ভিক্ষা চায় বিভিন্ন বয়সী ভিক্ষুকরা। সাথে যোগ করে সাহায্য এর অনুনয়-বিনয়। সাহায্য করুন কিংবা টাকা দেন বলে ভিক্ষুকেরা হাত বাড়িয়ে দেন যত্রতত্র। আর জুম্মার দিন হওয়ায় বিভিন্ন মসজিদের সামনে ভিক্ষুকদের জটলা বসে।
আরো জানা গেছে- সরকার ভিক্ষুকমুক্ত করতে বিভিন্ন কর্মসংস্থান ও এককালীন সহযোগিতা দিচ্ছেন। নগদ টাকার পাশাপাশি কর্মসংস্থানের জন্য বিভিন্ন উপকরণ দেয়া হচ্ছে অনেক ভিক্ষুকদের। কিন্তু স্বভাব না বদলিয়ে বিভিন্ন বয়সী অনেক ভিক্ষুক হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন ভিক্ষার জন্য। অল্প বয়সী শিশু থেকে মধ্য বয়সী এমনকি ৭০/৮০ বছর বয়সী পুরুষ-মহিলা ভিক্ষুক ভিক্ষাবৃত্তিতে থেকেই যাচ্ছেন। দূর্ভাগ্যজনক ভাবে শিশুদের সাথে নিয়ে ভিক্ষা করার ফলে অল্প বয়স থেকেই ভিক্ষাবৃত্তিতে আগ্রহী হয়ে পড়ছে শিশু-কিশোররা।
সব মিলিয়ে কলারোয়াবাসী এ রকম দৃশ্য আর দেখতে চান না। উন্নয়নশীল মধ্যম আয়ের রাষ্ট্রের কলারোয়া উপজেলাকে বাস্তবিক অর্থে ভিক্ষুকমুক্ত করতে প্রশাসনের সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন তারা।
[caption id="attachment_113104" align="alignleft" width="300"] কলারোয়া থানা মসজিদের সামনের চত্বরে এ দৃশ্য। ৭ এপ্রিল, ২০২৩, শুক্রবার।[/caption]
[caption id="attachment_113105" align="alignleft" width="300"] কলারোয়া থানা মসজিদের সামনের চত্বরে এ দৃশ্য। ৭ এপ্রিল, ২০২৩, শুক্রবার।[/caption]
[caption id="attachment_113106" align="alignleft" width="300"] কলারোয়া উপজেলা পরিষদ জামে মসজিদের সামনের ফাইল ছবি।[/caption]
প্রকাশক : আরিফ মাহমুদ, প্রধান সম্পাদক : কাজী আবু ইমরান, সম্পাদক : আবু রায়হান মিকাঈল
ফেসবুক পেইজঃ facebook.com/kalaroanewsofficial, ই-মেইল : [email protected]