পবিত্র ঈদুল ফিতরের বাকি এখনো প্রায় ছয় দিন। এরই মধ্যে ঢাকা ছেড়েছে নগরের হাজার হাজার মানুষ। ঈদযাত্রায় সড়কের দুর্ভোগ ও যানজটের কথা চিন্তা করেই আগেভাগে পরিবার-পরিজন দিয়ে গ্রামের পথে পাড়ি দিচ্ছেন অনেকেই। এরই পরিপ্রেক্ষিতে রাজধানীর মহাখালী বাস টার্মিনালে চাপ বেড়েছে ঘুরমুখো মানুষের।
মঙ্গলবার সকাল থেকেই এই স্পটে যাত্রীর চাপ ছিল চোখে পড়ার মতো। অনেকেই বলছেন, করোনার কারণে গত দুই বছর ধরে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় ঈদ উদযাপন করতে পারেননি। এবার করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকার কারণে সবচেয়ে বেশি মানুষ ঢাকা থেকে গ্রামে যাবে। সমীক্ষা বলছে, এবার ঈদে ঢাকা ছাড়বেন ১ কোটিরও বেশি মানুষ।
দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পেতে আগেই গ্রামের পথে রওনা দিচ্ছেন অনেকে। কেউবা পরিবারের সদস্যদেরকে ঈদের ছুটির আগেই পাঠিয়ে দিচ্ছেন নিজ নিজ গন্তব্যে।
সরেজমিনে দেখা যায়, গত কয়েক দিনের তুলনায় চাপ বেড়েছে মহাখালী বাস টার্মিনালে। পরিবার-পরিজনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে বাড়ি ফেরা মানুষেরা ভিড় করছেন এই টার্মিনালে। কেউ কেউ অগ্রিম টিকিটের জন্য ভিড় করছেন। যাত্রীর চাপ বাড়ায় কাউন্টারগুলোতে বেড়েছে ব্যস্ততা। ঈদ ঘিরে দূরপাল্লার বাসে অগ্রিম টিকিটের সংকট থাকলেও নিয়মিত যানবাহনের টিকিট মিলছে সহজেই। এতে আগেভাগে যাওয়া যাত্রীরা ভোগান্তি ছাড়াই যাতায়াত করতে পারছেন।
মহাখালী পরিবহণ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এবারের ঈদে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষ গ্রামে যাবে। গার্মেন্ট-শিল্প-কারখানা ও সরকারি অফিসে একসঙ্গে ছুটি হবে। এতে শেষ সপ্তাহে যাত্রীদের চাপও বাড়বে কয়েকগুণ।
এনা ট্রান্সপোর্ট বাস কাউন্টারের দায়িত্বে থাকা এক কর্মী বলেন, বিপুল পরিমাণের মানুষ ইতোমধ্যে ঢাকা ছেড়েছেন। অন্যবারের তুলনায় এবার অনেক আগেই টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে। তবে বাড়তি চাপ এখনো শুরু হয়নি।
শ্যামলি পরিবহণের কাউন্টারের দায়িত্বে থাকা আনোয়ার হোসেন জানান, প্রতিবারের তুলনায় এবার অনেক বেশি চাপ। তবে আগাম টিকিট নিতে এসে কাউকে অপেক্ষা করতে হচ্ছে না। যাত্রীর চাপ এখনো শুরু হয়নি সেভাবে, তবে শেষ সপ্তাহে হতে পারে। এখন স্বাভাবিকের চেয়ে একটু বেশি বলে মনে হচ্ছে।
বৃদ্ধা মা এবং স্ত্রী-সন্তানকে বাসে উঠিয়ে দিতে মহাখালী বাস টার্মিনালে এসেছেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. শিহাব উদদীন। তিনি বলেন, বিশেষ কারণে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত আমাকে ঢাকায় থাকতে হবে। ওই সময় বাড়ি ফেরা মানুষের চাপ থাকবে। বাসেও অগ্রিম টিকিট পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে পরিবার নিয়ে বাড়ি ফিরতে নানা অসুবিধা ও পথের দুর্ভোগ পোহাতে হবে। নানা বিষয় চিন্তা করে আগেই সবাইকে পাঠিয়ে দিচ্ছি। ব্যস্ততা শেষ হলে আমি একা মানুষ কোনো না কোনোভাবে যেতে পারব।
মহাখালী টার্মিনালে অগ্রিম টিকিট নিতে আসা কয়েকজন যাত্রী বলেন, এখনো কোনো গার্মেন্টসে ছুটি দেয়নি। ছুটি হলে চাপ বাড়বে। তাই আগেই বাসের অগ্রিম টিকিট নিতে এসেছি। তবে কোনো বাসের টিকিট পাওয়া যাচ্ছে না। ময়মনসিংহ, কুড়িগ্রাম, জামালপুরগামী কোনো বাসে টিকিট নেই।
সম্প্রতি একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ঈদের আগে চার দিনে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৩০ লাখ মানুষ ঢাকা ছাড়বেন। এ সময় প্রতিদিন বাসে ৮ লাখ, ট্রেনে ১ লাখ, লঞ্চে দেড় লাখ, ব্যক্তিগত গাড়িতে প্রায় ৪ লাখ, মোটরসাইকেলে প্রায় ৪ লাখ মানুষ ঢাকা ছাড়বেন। বাকি প্রায় ১২-১৩ লাখ মানুষ ঢাকা ছাড়বে ট্রাক, ট্রেনের ছাদে করে।
প্রকাশক : আরিফ মাহমুদ, প্রধান সম্পাদক : কাজী আবু ইমরান, সম্পাদক : আবু রায়হান মিকাঈল
ফেসবুক পেইজঃ facebook.com/kalaroanewsofficial, ই-মেইল : [email protected]