কেউ যেন ভোটের অধিকার কুক্ষিগত করার ষড়যন্ত্র করতে না পারে সেজন্য জনগণকে সর্তক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
শনিবার (১০ মে) বিকেলে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বুদ্ধ পূর্ণিমা উপলক্ষে বিএনপির উদ্যোগে আয়োজিত শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। ত্রিপিটক পাঠের মধ্য দিয়ে এ অনুষ্ঠান শুরু হয়। ত্রিপিটক পাঠ করেন এম শ্রী ইন্দ্র বংশ ভিক্ষু, ভদন্ত সুধর্ম ভিক্ষু, ভদন্ত সমৈত্রী রতন ভিক্ষু ও আনন্দ প্রিয় শ্রমন।
বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের বুদ্ধ পূর্ণিমার শুভেচ্ছা জানান তারেক রহমান।
তারেক রহমান বলেন, নাগরিকদের প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে বিএনপি দেশে এমন একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত করতে চায়, যে সরকার জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য থাকবে। তবে কেউ যেন আপনার-আমার, আমাদের গণতান্ত্রিক ও রাজনৈতিক অধিকার, ভোটের অধিকার কুক্ষিগত করে রাখার ষড়যন্ত্র করতে না পারে সেজন্য জনগণের কাছে দায়বদ্ধ একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত আমরা প্রত্যেকটি মানুষ, এই ঘরে ও ঘরের বাইরে সারাদেশের বিভিন্ন স্থানে আমরা যে যেখানেই আছি না কেন, যে যার অবস্থান থেকে সর্তক এবং সজাগ থাকতে হবে। আপনাদের সবার কাছে আমি আজ সেই আহ্বান জানাই।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আরও বলেন, নিরাপদ ও মানবিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য বিশ্বে এখন পর্যন্ত গণতন্ত্রই একমাত্র উত্তম বিকল্প। মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নিয়ে বাংলাদেশে বিগত দশক ধরে যারা অথবা যে দলটি ফ্যাসিবাদী শাসন-শোষন চালিয়েছিল দেশের গণতন্ত্রকামী জনগনের কাছে তারা এখন অপশক্তি হিসেবে চিহ্নিত। দেশের গণতন্ত্রকামী জনগন বর্তমানে দুইটা বিষয়ে সম্পূর্ণভাবে একমত। তা হলো- বাংলাদেশকে যাতে আর কেউ ভবিষ্যতে তাবেদার রাষ্ট্রে পরিণত করতে না পারে এবং গণতন্ত্রবিরোধী পলাতক অপশক্তি যাতে আর মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে। এই দু্ইটা বিষয়ে জনগণ আর কোনো আপস করতে রাজি নয়। রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে এটি আমি উপলব্ধি করি।
‘পতিতদের পুনর্বাসন চায় না জনগণ’
তারেক রহমান বলেন, আমাদের বক্তব্য স্পষ্ট- যারা সংবিধান বারবার লঙ্ঘন করেছে, দেশে অবৈধ সংসদ এবং সরকার গঠন করেছে, যারা সংবিধান লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িত ছিল তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে আইনগতভাবে ব্যবস্থা নিতে হবে। দেশের জনগন, সরকার এবং রাজনীতিতে কোনোভাবেই গুম-খুন-অপহরণ-দুর্নীতি-লুটপাট-টাকা পাচার-বর্বর আয়নাঘরের প্রতিষ্ঠাতা পতিত পলাতক পরাজিত অপশক্তির পুনর্বাসন চায় না এই বাংলাদেশের মানুষ। বিএনপিসহ বাংলাদেশের পক্ষের প্রতিটি রাজনৈতিক দল জনগণের এই দাবির সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত।
‘সরকারকে বিএনপি সফল দেখতে চায়’
তারেক রহমান বলেন, বিএনপি এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সফল দেখতে চায়। তবে এখানে একটি কথা রয়ে গেছে। সরকারের কার্যক্রম সম্পর্কে জনগনের কাছে যাতে স্বচ্ছ ধারণা থাকে এই কারণে বিএনপি প্রথম থেকে এই সরকারের কাছে তাদের একটি কর্মপরিকল্পনা-পথনকশা ঘোষণার আহ্বান বারবার জানিয়ে আসছে।
তিনি বলেন, সরকারের কার্যক্রম সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা যদি জনমনে থাকে তাহলে কোনো রকমের সংশয়-সন্দেহ কিংবা বিভ্রান্তি সৃষ্টির সুযোগ থাকে না।
‘ফ্যাসিস্টদের বর্বরতার ঘটনা তুলে ধরুন’
ফ্যাসিবাদী শাসনের পতনের পর তাদের দুঃশাসন ও দুষ্কর্মসমূহের চিত্র এবং জুলাই-আগস্টের ঘটনাবলী বেশি করে প্রকাশের জন্য বাংলাদেশের গণমাধ্যমগুলোর প্রতি আহ্বান জানান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
কক্সবাজারের রামু, ব্রাহ্মনবাড়িয়ার নাসিরনগর, রংপুর, গাইবান্ধা, সুনামগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ফ্যাসিবাদী শাসনের দেড় দশকে ধর্মীয় সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর বাড়িঘর-উপাসনালয়ে ঘটা ঘটনাবলী নিয়েও গণমাধ্যমের কাছে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশের অনুরোধ করেন তিনি। তারেক রহমান বলেন, কারা এসব ঘটনার নেপথ্যে ছিল, এসব নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ হলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি আগামী দিনে আর কেউ দেশের ধর্মীয় জনগোষ্ঠীকে দলীয় রাজনীতিতে ব্যবহারের সাহস করবে না।
আগামী দিনে বিএনপি জনগণের রায়ে ইনশাল্লাহ রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পেলে ফ্যাসিবাদী শাসনের দেড় দশকে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের সঙ্গে যে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে তার নেপথ্যের কারণ খুঁজে বের করতে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি সর্বদলীয়, সর্বধর্মীয় ‘নাগরিক তদন্ত কমিশন’ গঠন করার পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে।
‘আমরা সবাই বাংলাদেশী’
দল-মত-ধর্ম নির্বিশেষে দেশে প্রতিটি নাগরিকের প্রথম এবং প্রধান গর্বিত পরিচয় হচ্ছে আমরা বাংলাদেশি। এমন মন্তব্য করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, নিজ নিজ ধর্মীয় বিশ্বাস বা সাংস্কৃতিক স্বকীয়তা বজায় রেখেই বাংলাদেশি হিসেবে প্রতিটি নাগরিক রাষ্ট্র ও সমাজে সমান এবং ন্যায্য অধিকার ভোগ করবে- এটি বিএনপির নীতি।
বিএনপির ধর্ম বিষয়ক সহ-সম্পাদক দীপেন দেওয়ানের সভাপতিত্বে ও সুভাষ চন্দ্রা চাকমার সঞ্চালনায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, আবদুল মঈন খান, সালাহউদ্দিন আহমদ, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া, বিজন কান্তি সরকার, লন্ডন বিএনপির সভাপতি এম এ মালেক, কিশোরগঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য্ অধ্যাপক দিলীপ কুমার বড়ুয়া এবং বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মধ্যে মৈত্রী দেওয়ান, সমীর দেওয়ান, সাথী উদয় কুসম বড়ুয়া, প্রবীণ চাকমা, অনিমেষ চাকমা, নিকোলা চাকমা, প্রার্থ প্রীতম বড়ুয়া, চন্দ্রা চাকমা, মানস থু চাকমা, লু থু মু মারমা প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
পরে গুলশানে বিএনপির কার্যালয়ে অতিথি বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের সদস্যদের মিষ্টান্ন দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়।
প্রকাশক : আরিফ মাহমুদ, প্রধান সম্পাদক : কাজী আবু ইমরান, সম্পাদক : আবু রায়হান মিকাঈল
ফেসবুক পেইজঃ facebook.com/kalaroanewsofficial, ই-মেইল : [email protected]