মণিরামপুরে করোনা ও উপসর্গে প্রাণ গেলো ৫৮ জনের
করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ে যশোরের মণিরামপুরে এ পর্যন্ত অর্ধ-শতাধিক নারী-পুরুষের মৃত্যু হয়েছে।
করোনা আক্রান্ত রোগীদের সিংহভাগই বাড়িতে মারা গেছেন। আক্রান্তের সংখ্যাও দুইশ’র কোটা পার হয়েছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সিংহভাগ করোনা রোগীদের ভর্তি নেওয়া হয় না বলে অভিযোগও উঠেছে। যদি কোন রোগী ভর্তি করা হয় সেক্ষেত্রে নার্স কিংবা চিকিৎসকরা করোনা রোগীদের ধারের কাছেই যান না। দূরে দাঁড়িয়ে থেকেই চলে চিকিৎসা সেবা। যে কারণে হাসপাতালে দুই-একদিন থেকেই বাড়িতে এসে চিকিৎসা নিয়েছে অধিকাংশ রোগী।
অপর দিকে কোয়াক (গ্রাম্য) চিকিৎসরাই জ্বর-সর্দিসহ করোনা রোগীদের শেষ ভরসার স্থল হয়ে উঠেছেন। কিন্তু প্রশিক্ষন ও চিকিৎসা সরঞ্জামের সরবরাহ হলে কোয়াক চিকিৎসকরা করোনা রোগীদের চিকিৎসা দিয়ে প্রাথমিক পরিচর্যা নিশ্চিত করতে পারতেন বলে তাদের দাবি।
আক্রান্ত ও মৃত্যু’র সংখ্যা কমিয়ে আনতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের তরুণ চিকিৎসক ডা. মোসাব্বিরুল ইসলাম রিফাত মাস্টার প্লান শুরু করেছেন। তার ভাষ্যমতে, উপজেলায় শতাধিক স্বেচ্ছাসেবিদের সমন্বয়ে গঠিত টীমের প্রতিজনের কাছে পালস্ অক্সিমিটার ও পৌরসভাসহ ১৭টি ইউনিয়নে অর্ধ-শতাধিক অক্সিজেন সিলিন্ডার নিশ্চিত করা হলে করোনা রোগীদের নিয়মতি নজরদারি করা হলে মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা কমে আসবে। এতে করে ঘরে বসেই উন্নত চিকিৎসা সেবা পাবে করোনা রোগী। ইতোমধ্যে তিনি কাজও শুরু করেছেন।
বাংলাদেশ গ্রাম ডাক্তার সমিতির সেক্রেটারী বাবর আলী বলেন, তার সমিতিতে ৪৮০ জন গ্রাম ডাক্তার রয়েছেন। প্রতি গ্রাম ডাক্তার গড়ে প্রতিদিনি ২০ থেকে ২৫ জন জ্বর-সর্দি, গলা ব্যাথাসহ করোনা উপসর্গ রোগীর চিকিৎসা সেবা দিয়ে চলেছেন। কিন্তু পালস্ অক্সিমিটার না থাকায় রোগীর অক্সিজেন স্তরের মাত্রা মাপা সম্ভব হয়না।
এগুলো সরবরাহসহ গ্রাম ডাক্তারের প্রশিক্ষণ দেওয়া হলে করোনা রোগীদের প্রাথমিক চিকিৎসা তারা নিজেরাই নিশ্চিত করতে পারতেন।
তিনি আরও বলেন, তাদের কাছে আসা রোগীরা হাসপাতালে যেতে চাননা। সেখানে গেলে চিকিৎকসহ নার্সরা রোগীদের কাছে আসেন না। যে কারণে রোগী ভয়ে আরও দূর্বল হয়ে পড়েন। তার কথার অনেকটাই সত্যতা মিলেছে।
গত ২ জুলাই শ্বাসকস্ট নিয়ে চা দোকানি নজরুল ইসলামকে হাসপাতালে নিয়ে যান স্বজনরা। স্বজনদের অভিযোগ তাকে ভর্তি না নিয়ে ফিরিয়ে দেওয়ার পরদিন তার মৃত্যু হয়। গত ১০ এপ্রিল শ্বাসকস্ট নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন আসাদুজ্জামান নামের এক স্কুল শিক্ষক। তিনি অভিযোগের সুরে বলেন, ভর্তি করার পর হাসপাতালে ৩ দিন অবস্থান করলেও কোন নার্স কিংবা ডাক্তার তার কাছে আসেননি। দূর থেকে তার চিকিৎসা করা হয়। এ অবস্থায় তার স্বজনরা তাকে বাড়িতে এনে করোনার চিকিৎসা করান। এখন তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ্য হয়ে উঠেছেন।
এদিকে উপজেলায় করোনা আক্রান্ত ও উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু বরণকারিদের দাফনসহ অক্সিজেন সেবা দিয়ে চলেছে তাকওয়া ফাউন্ডেশন নামের একটি স্বেচ্ছাসেবি সংগঠন। এ ছাড়া উপজেলা বিএনপি, উপজেলা ছাত্রলীগ, বন্ধন নামের সামাজিক সংস্থা এ ধরনের কার্যক্রম শুরু করেছেন। উপজেলার বিভিন্ন প্রান্তে করোনায় মৃত্যু বরনকারি ও আক্রান্তদের বাড়িতে নিজে গিয়ে নিয়মতি খোঁজখবর নেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নাজমা খানম।
তাকওয়া ফাউন্ডেশনের যশোর জেলা সমন্বয়ক নাছিম খাঁন বলেন, এখন পর্যন্ত তারা রোববার পর্যন্ত ১৩ জন করোনা ও ৩১ জন করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুবরণ ব্যক্তির কাফন-দাফন সম্পন্ন করেছেন। এ ছাড়া ২৭ জনের বাড়ি বাড়ি গিয়ে অক্সিজেন সেবা দিয়েছেন।
উপজেলা চেয়ারম্যান নাজমা খানম বলেন, তিনি উপজেলার বিভিন্ন প্রান্তে করোনা ও উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুবণনকারি ৫৮ জন নারী-পুরুষের বাড়িতে নিজে গেছেন এবং ৪৩ জন আক্রান্তের বাড়িতে খাদ্য পৌঁছিয়ে দিয়েছেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ শুভ্রারানী দেবনাথ বলেন, করোনা রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়না এ কথাটা সঠিক না। তবে, অক্সিজেনের স্তর ৭০-এর নীচে আসা কোন রোগী হাসপাতালে আসলে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য অন্যত্রে পাঠানো হয়।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)