মণিরামপুরে নামজারির টাকা ফেরত পাননি আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দারা
যশোরের মণিরামপুরে আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দাদের জমির নামজারি ও সার্টিফিকেট ফি বাবদ অর্থ বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। গেলো বছর উপজেলা প্রশাসনের কাছে এ বাবদ পাঁচ লাখের অধিক টাকা আসে। কিন্তু আজও সে টাকা হাতে পাননি আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘর পাওয়া ভূমিহীনরা।
সম্প্রতি সরেজমিন আশ্রয়ণ পল্লীর বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে টাকা ফেরত না পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।
মাছনা আশ্রয়ণ পল্লীর বাসিন্দা শেফালী বেগম ও আব্দুস সাত্তার বলেন- ঘর দেয়ার সময় খরচের কথা বলে নায়েব দুই হাজার ১৯০ টাকা করে নিলো। সেই টাকা ফেরত আইছে কিনা জানিনে। টাকা ফেরত দেয়ার ব্যাপারে আমাদের কেউ কিছু বলিনি।
আব্দুস সাত্তার বলেন- খুব কষ্টে আছি। টাকাগুলো ফেরত পালি ভালো হইতো।
ওই পল্লীর পলি বেগম বলেন- দুই হাজার ১৯০ টাকা দিছি ওই সময়। কোনো টাকা ফেরত পাইনি।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে- আশ্রয়ণ পল্লীর বাসিন্দাদের কাছ থেকে ঘর বরাদ্দ দেয়ার সময় খরচ বাবদ সংশ্লিষ্ট নায়েবরা দুই হাজার ১৯০ টাকা থেকে দুই হাজার ২৯০ টাকা করে আদায় করেছেন। এখন এক হাজার ৪২৮ টাকা করে ফেরত দেয়ার জন্য তাদের তালিকা করা হয়েছে। বাকি ৭৬২-৮৬২ টাকার কোনো হদিস পাওয়া যাচ্ছে না।
জানা যায়- মণিরামপুরে এ পর্যন্ত ভূমিহীনদের জন্য ৩৭৪টি ঘরের বরাদ্দ এসেছে। যারমধ্যে পৌর এলাকার হাকোবা, গাংড়া, তাহেরপুর, মাছনা, হাজরাইল, শিরালী, মশ্মিমনগরসহ বিভিন্ন এলাকায় এ পর্যন্ত ২৯২টি ঘর নির্মাণ করে ভূমিহীনদের মাঝে হস্তান্তর করা হয়েছে।
হেলাঞ্চী, মশ্মিমনগর ও শ্যামকুড় এলাকায় ১৫টি ঘর নির্মাণের কাজ চলমান আছে। ৬৭টি ঘর নির্মাণের প্রস্তুতি চলছে। দুই শতক খাস জমি ভূমিহীনদের নামে বরাদ্দ দিয়ে, গেলো বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ মাসে ২৬২টি ঘর হস্তান্তর করা হয়। জমির দলিল, নামপত্তণ ও স্টাম্প ফিসহ নানা খরচ দেখিয়ে তখন সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তারা ঘর মালিকদের কাছ থেকে দুই হাজার ১৯০ টাকা থেকে দুই হাজার ২৯০ টাকা করে আদায় করেছেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার ও উপজেলা ভূমি অফিসে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে- ভূমিহীনদের ঘরের কাগজপত্র বাবদ খরচ দেখিয়ে সরকারের কাছে চিঠি দেয়া হয়। পরে গত বছরের শেষের দিকে ২৬২টি ঘরের খরচ বাবদ পাঁচ লাখ ২৮ হাজার টাকা বরাদ্দ আসে। পরে নামজারি ও স্টাম্প ফি বাবদ গত ১ ডিসেম্বর চেকের মাধ্যমে তিন লাখ ৭৪ হাজার ১৩৬ টাকা হাতে পান এসিল্যাণ্ড। সে টাকা থেকে নামজারি বাবদ এক হাজার ১৭০ টাকা এবং স্টাম্প ফি বাবদ ২৫৮ টাকা মোট এক হাজার ৪২৮ টাকা করে ফেরত দেয়ার জন্য আশ্রয়ণ পল্লীর ২৬২ জনের তালিকা করা হয়েছে।
এসিল্যাণ্ড অফিসের সূত্র বলছে- ভূমিহীনদের থেকে নায়েবরা যে টাকা নিয়েছেন তা জমি রেজিস্ট্রেশন, নকল তোলা, সার্টিফিকেট প্রদান ও নামজারি বাবদ খরচ করা হয়েছে। এছাড়া নাম ফলক ও ফোল্ডার তৈরিতে কিছু টাকা খরচ হয়েছে। সরকারিভাবে পাঁচ লাখ ২৮ হাজার টাকা আসার পর হিসেব করে দেখা গেছে ২৬২টি ঘরের বিপরীতে দুই হাজার ১৫ টাকা করে ফেরত পাওয়া গেছে। সব খরচ সমন্বয় করে ঘর প্রতি এক হাজার ৪২০ টাকা করে ফেরত দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ সপ্তাহে তাঁদের মাঝে টাকা বিতরণ করার কথা জানিয়েছেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) হরেকৃষ্ণ অধিকারী।
এসিল্যাণ্ড হরেকৃষ্ণ অধিকারী বলেন- আশ্রয়ণ পল্লীর ২৬২ জনের জন্য সম্ভবত পাঁচ লাখ ২৮ হাজার টাকা এসেছে। তারমধ্যে নামজারি ও স্টাম্প ফি বাবদ ফেরত দেয়ার জন্য আমি তিন লাখ ৭৪ হাজার টাকা হাতে পেয়েছি।
এসিল্যাণ্ড বলেন- টাকা পাওয়ার পরপরই আমি ঢাকায় প্রশিক্ষণে গিয়েছি। দেড়মাস পর ফিরেছি। যাদের টাকা ফেরত দেয়া হবে তাদের তালিকা করা হয়েছে। চলতি সপ্তাহে টাকা বিতরণ শুরু করবো।
মণিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ জাকির হাসান বলেন- আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দাদের খরচ বাবদ কত টাকা এসেছে তা ফাইলপত্র না দেখে বলা যাবে না। বিষয়টি এসিল্যাণ্ড বলতে পারবেন।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)