যশোরের মণিরামপুরে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের আশ্রয়ণের ঘরে অবস্থান করে এক ব্যক্তি নদী দখল নিয়ে বালু তুলছেন।
গত এক মাসের অধিক সময় ধরে সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলার ইদ্রিস আলী নামে এক ব্যক্তি উপজেলার হাজরাইল এলাকায় পরিবার নিয়ে আশ্রয়ণের ঘরে উঠেছেন। সেখানে অবস্থান করে আশ্রয়ণের ঘরের ঠিক সামনের মুক্তেশ্বরী নদীতে ড্রেজার মেশিন লাগিয়ে বালু তুলছেন তিনি। এ বালু পাইপ লাগিয়ে দুই কিলোমিটার দূরে ভোমরদহ এলাকায় গর্ত ভরাটের কাজ করছেন ইদ্রিস। তার দখল করা ঘরটি উপজেলার হরিদাসকাটি ইউনিয়নের নেবুগাতী গ্রামের বিপুল বিশ্বাসের নামে বরাদ্দ। উপহারের ঘর ছেড়ে বিপুল পরিবার নিয়ে নেবুগাতী গ্রামে পূর্বের আশ্রয়ে আছেন।
ইদ্রিসের দাবী- উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) আব্দুল্লাহ বায়েজিদের নির্দেশে তিনি মুক্তেশ্বরী নদী থেকে বালু তুলছেন। নিয়মিত ছয় জন শ্রমিক দুটো মেশিনে বালু তোলার কাজে নিয়োজিত রয়েছেন। এর আগেও মণিরামপুরের পিআইওর নির্দেশে বালু তোলার কাজ করেছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার (৫ জানুয়ারি) বিকেলে সরেজমিন হাজরাইলে আশ্রয়ণ পল্লীতে ঢুকতে দেখা গেছে কাঁচা রাস্তার পাশ দিয়ে লম্বা প্লাস্টিকের পাইপ। কানে আসছে বটবট শব্দ। একটু এগুতে দেখা গেছে শব্দ আসছে মুক্তেশ্বরী নদীর মাঝখান থেকে। সেখানে নদীতে ড্রাম দিয়ে ভাসমান মাচা করা হয়েছে। তার ওপরে তিন জন লোক ড্রেজার মেশিন লাগিয়ে বালু তুলছেন।
খোঁজ নিতে জানা গেল- ইদ্রিস নামে এক ব্যক্তি সাতক্ষীরার তালা উপজেলা থেকে এসে ৬ জন শ্রমিক খাটিয়ে এ বালু তোলাচ্ছেন।
আশ্রয়ণ পল্লীতে ঢুকে ৪-৫ ঘরের পরের ঘরটির মালিক উপজেলার নেবুগাতী গ্রামের বিপুল বিশ্বাস। বিপুল বিশ্বাসের সেই ঘরে স্ত্রী ও তিন সন্তান নিয়ে এক মাস ধরে থাকছেন ইদ্রিস। মুক্তেশ্বরী থেকে বালু তুলে দুই কিলোমিটার দূরে ভোমরদহ গ্রামে গর্ত ভরাটের কাজ চলছে।
ইদ্রিস আলী বলেন- উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) আব্দুল্লাহ বায়েজিদ আমাকে এখানে কাজে এনেছেন। এর আগেও মণিরামপুরে পিআইওর কাজ করেছি। এখন এক মাস ধরে মুক্তেশ্বরী থেকে বালু তুলছি। বাইরের জেলা থেকে এসে অন্যের নামে বরাদ্দের আশ্রয়ণের ঘরে থাকার অধিকার আছে কিনা জানতে
চাইলে ইদ্রিস আলী বলেন- সে অধিকার নেই। পিআইও বালু তোলাচ্ছে বলে আমাকে এখানে থাকতি দেছে। কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত এখানে থাকতে বলেছে।
তবে কতটাকা চুক্তিতে বালু তোলা হচ্ছে এ ব্যাপারে কিছু জানাতে চাননি ইদ্রিস।
এদিকে মুক্তেশ্বরী থেকে তোলা বালু নিয়ে যে গর্ত ভরাটের কাজ চলছে সরেজমিন সেখানে গিয়ে মিল্টন নামে এক জনকে খাতা-কলম হাতে পাওয়া গেছে। মিল্টন জানান- তার বাড়ি ফরিদপুরে। তিনি পিআইও আব্দুল্লাহ বায়েজিদের ভাইপো।
মিল্টন বলেন- এখানে (ভোমরদহে) রাস্তার পাশে তিন জায়গায় খাস জমি পাওয়া গেছে। এ জমিতে গর্ত ছিল। নদী থেকে বালু তুলে গর্ত ভরাটের কাজ করা হচ্ছে। একটা গর্ত ভরাট করে আরেকটি ভরাটের কাজ চলছে। এরপর আরো এক জায়গা ভরাট করতে হবে। বালু তোলার খরচের বিষয়ে পিআইও বলতে পারবেন।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ও উপজেলা ভূমি অফিসে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে- ভোমরদহ এলাকায় ভূমিহীনদের জন্য ১৮-২০টি ঘর নির্মাণ হবে। যেখানে নদী থেকে বালু তুলে ফেলা হচ্ছে সেখানে ঘর নির্মাণ হবে। প্রতিঘরে ব্যয় ধরা হয়েছে ২ লাখ ৭৯ হাজার টাকা। ঘর প্রতি মাটি ভরাটের জন্য তিন হাজার টাকা বরাদ্দ আছে। তবে খানাখন্দ ভরাট করে ঘর করতে হলে উপজেলা প্রশাসন টিআর বা কাবিখা প্রকল্প বরাদ্দ দিয়ে গর্ত ভরাটের কাজ করে থাকেন। মুক্তেশ্বরী নদী থেকে বালু তুলে ভোমরদহে গর্ত ভরাটের জন্য কোন প্রকল্পের কতটাকা খরচ করা হচ্ছে, সে ব্যাপারে কোন তথ্য পাওয়া যায়নি।
এ ব্যাপারে জানতে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ বায়েজিদের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
মণিরামপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) কবির হোসেন বলেন- আশ্রয়ণের এক জনের ঘরে অন্য জন থাকার সুযোগ নেই। বিষয়টি দেখার জন্য এসিল্যাণ্ডকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
মুক্তেশ্বরী থেকে বালু তোলার বিষয়ে ইউএনও বলেন- সরকারি উন্নয়ন কাজে বালু উত্তোলনের সুযোগ আছে। বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন ২০১০ এর ৭ ধারায় এ কথা বলা আছে। তবে বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন ২০১০ এর ৭ ধারায় উল্লেখ আছে, “অবাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে কোন সরকারি কার্যক্রম বা উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রয়োজনে বালু বা মাটি উত্তোলনের ক্ষেত্রে এই আইনের বিধানাবলী প্রযোজ্য হইবে না। তবে শর্ত থাকে যে, উক্ত কার্যক্রম বা উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য বালু বা মাটি উত্তোলন ও ব্যবহার করিবার ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমোদন প্রয়োজন হইবে।
কর্তৃপক্ষের অনুমোদনের বিষয়ে জানতে চাইলে ইউএনও কবির হোসেন বলেন- এ ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষ জেলা প্রশাসক। তিনি বিষয়টি জানেন। তার পক্ষে উপজেলা প্রশাসন হিসেবে আমরা কাজ করি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে যশোরের জেলা প্রশাসক মো. তমিজুল ইসলাম খান বলেন- বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখছি।
প্রকাশক : আরিফ মাহমুদ, প্রধান সম্পাদক : কাজী আবু ইমরান, সম্পাদক : আবু রায়হান মিকাঈল
ফেসবুক পেইজঃ facebook.com/kalaroanewsofficial, ই-মেইল : [email protected]