হেলাল উদ্দিন: যশোরের মনিরামপুরে পুকুর থেকে কিশোরীর অর্ধনগ্ন মৃতদেহ উদ্ধারের তিনদিন পর ধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগে মামলা হয়েছে। মৃতদেহ উদ্ধারের পর ‘আত্মহত্যার’ প্রচার চালানো হলেও সন্দেহজনক হওয়ায় পুলিশ ময়নাতদন্তের উদ্যোগ নেয়।
শুক্রবার মামলা দায়েরের সন্দেহভাজন হিসেবে এক কলেজছাত্রকে হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ।
এ ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
ধর্ষণ ও হত্যকাণ্ডের শিকার কিশোরী মাদ্রাসাছাত্রী মাহমুদা সিদ্দিকা মনিরামপুর উপজেলার রোহিতা গ্রামের আরিফুল হকের মেয়ে।
সন্দেহভাজন হিসেবে আটক কলেজছাত্র সোহাগ হোসেন (১৮) উপজেলার জয়পুর গ্রামের এখলাস উদ্দীনের ছেলে। পড়ালেখার ফাঁকে সোহাগ রাজমিস্ত্রির সহযোগী (শ্রমিক) হিসেবে কাজ করে।
মনিরামপুর থানা ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়- গত ৯ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার রোহিতা গ্রামের একটি পুকুর হতে এক কিশোরীর অর্ধনগ্ন মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। মৃতদেহ উদ্ধার পর এলাকায় প্রচার করা হয়, ‘রুটি চুরির অপবাদ সইতে না পেরে সাঁতার না জানা কিশোরী পুকুরে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছে’। এর আগের দিন মাদ্রাসা থেকে ফেরার পথে গ্রামে একটি দোকান হতে রুটি চুরির অভিযোগে কিশোরী মাহমুদাকে জনসম্মুখে জুতাপেটা করেন তার মা। এতে অভিমানে আত্মহত্যা করতে পারে বলেও অনেকেই ওই সময় মনে করেন। কিন্তু সন্দেহজনক হওয়ায় পরিবারের বাঁধা উপেক্ষা করে মরদেহ ময়নাতদন্তে পাঠায় মনিরামপুর থানা পুলিশ। এরপর বিষয়টি ভিন্নখাতে মোড় নেয়।
স্থানীয় সূত্র জানায়- মৃতদেহ উদ্ধারের পর জড়িত অপরাধী ধর্ষণসহ হত্যাকাণ্ড আড়াল করতে কুটকৌশলের আশ্রয় নেয়। এতে দোকানের রুটি চুরির অপবাদ মাথায় রেখে ঘটনা ভিন্নখাতে নিতে সেটিকে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। তবে, এখন পুলিশ কয়েটি ইস্যুকে সামনে রেখে এ ঘটনায় জড়িতকে সনাক্তের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। নিহতের মা শাহিনুর বেগম জানান- মৃত্যুর আগের দিন রুটি চুরির কথা দোকান মালিক আলী হাসান জানালে তিনি সেখানে গিয়ে মেয়েকে জুতা দিয়ে মারপিট করে বাড়িতে আনেন। ওই দিন বেলা আনুমানিক সাড়ে তিনটা পর্যন্ত তার সাথে মেয়ে গোয়ালঘর পরিষ্কারের কাজ করেছে। পরে কখন বাড়ি থেকে বের হয় তিনি জানতে পারেননি। প্রাপ্তবয়ষ্ক মেয়ের সম্মানের কথা ভেবে কাউকে না জানিয়ে নিজেরাই খুঁজতে থাকেন। পরদিন পুকুর থেকে মেয়ের মরদেহ উদ্ধার হয়। নিহতের পিতা আরিফুল হক বলেন- তার মেয়ে একটি কওমী মাদ্রাসায় মিজান (সপ্তম শ্রেণি) ক্লাসে পড়তো। তিনি পার্শ্ববর্তী একটি মসজিদে ইমামতি করেন। স্থানীয় কলেজ পড়ুয়া মিম জানান- ওইদিন বেলা সাড়ে তিনটার দিকে প্রাইভেট পড়াতে যাওয়ার সময় কিশোরীকে পুকুরে গোছল করতে দেখেন। কিন্তু ফেরার সময় আর দেখেননি।
নিহত কিশোরীর বাড়ি হতে পুকুরে যেতে ঘন বাগান পার হতে হয়। তাদের বাড়িও অনেকটা নির্জন এলাকায়। অনেকের ধারণা গোছল শেষে বাড়ি ফেরার পথে কিশোরী ধর্ষণের শিকার হয়। সেটিকে ধামাচাপা দিতে কিশোরীকে হত্যা করা হয়। পরে ধর্ষণের আলামত নষ্টসহ পুরো ঘটনা আড়াল করতে আত্মহত্যা হিসেবে চালিয়ে দিতে কিশোরীর মরদেহ সুযোগ বুঝে পুকুরে ফেলে দেওয়া হয়।
এ ঘটনায় শুক্রবার নিহতের মা শাহিনুর বেগম বাদী হয়ে অজ্ঞাত আসামি করে থানায় মামলা করেছেন। যার মামলা নম্বর ১১ এবং তারিখ ১২-০৯-২০২৫ ইং। পুলিশ এ ঘটনায় সন্দেহভাজন হিসেবে সোহাগ হোসেন (১৮) নামের এক কলেজ ছাত্রকে হেফাজতে নিয়েছে। সোহাগকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নেওয়া হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
থানা সূত্র আরও জানায়- ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডে সন্দেহভাজন হিসেবে সোহাগকে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। ঘটনার আগে রোহিতা গ্রামে রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের কাজ করছিল সোহাগ। কিশোরীর মরদেহ উদ্ধারের পর দুই দিন কাজে না যাওয়ায় পুলিশ তাকে সন্দেহভাজন হিসেবে আটক করেছে।
মনিরামপুর থানার ওসি বাবলুর রহমান খান এ ঘটনায় থানায় হত্যা মামলার কথা নিশ্চিত করে জানান- সোহাগকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সন্দেভাজন হিসেবে হেফাজতে নেয়া হয়েছে।
প্রকাশক : আরিফ মাহমুদ, প্রধান সম্পাদক : কাজী আবু ইমরান, সম্পাদক : আবু রায়হান মিকাঈল
ফেসবুক পেইজঃ facebook.com/kalaroanewsofficial, ই-মেইল : [email protected]