যশোরের মণিরামপুরে বেলা ডুবার পর বিদ্যুৎ বিভ্রাট (লোডশেডিং) তীব্র আকার ধারণ করেছে। সন্ধ্যা থেকে শুরু করে রাত ১১টা পর্যন্ত ৫ ঘন্টার মধ্যে দুই ঘন্টা সময় বিদ্যুৎ থাকছে না। ফলে বিপাকে পড়ছে এসএসসি পরীক্ষার্থীসহ স্কুল কলেজগামী শিক্ষার্থীরা। গুরুত্বপূর্ণ সময়ে বিদ্যুৎ না থাকায় বই নিয়ে বসতে পারছে না তারা।
পল্লি বিদ্যুৎ সমিতির দাবি- গ্যাস ও জ্বালানি সংকটের কারণে বিদ্যুতের উৎপাদন কমে যাওয়ায় লোডশেডিং শুরু হয়েছে। মণিরামপুরে চাহিদার তুলনায় বিদ্যুৎ সরবরাহ হচ্ছে অর্ধেক। সমস্যা কবে সহনীয় হবে তা জানা নেই দপ্তরটির।
এদিকে বিদ্যুতের উৎপাদন কমে যাওয়ায় এলাকা ভিত্তিক সময় নির্ধারণ করে একঘন্টা লোডশেডিং দেওয়ার জন্য সরকারের নির্দেশনা থাকলেও তা মানছে না মণিরামপুর পল্লীবিদ্যুৎ দপ্তর। তাঁরা দিনে রাতে ইচ্ছেমত ঘন্টারপর ঘন্টা লোডশেডিং দিচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে- গত ৫-৬ মাস ধরে উপজেলার রাজগঞ্জ, খেদাপাড়া, রোহিতা, কাশিমনগর, ঢাকুরিয়া, হরিহরনগর, মনোহরপুর, নেহালপুর, বাকোশপোল, মণিরামপুর সদর, পৌর এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় সন্ধ্যার পর বিদ্যুৎ থাকছে না। বেলা ডোবার পরই বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে। এক দেড় ঘন্টা পর কিছু সময়ের জন্য দেখা দিয়ে আবারও হারিয়ে যাচ্ছে। আর বিদ্যুতের দেখা মিলছে রাত ১১টার পর। দিনের বেলায়ও একই অবস্থা। থেমে থেমে বিদ্যুৎ আশা যাওয়া করছে। প্রচন্ড গরমে বিদ্যুতের এ লুকোচুরিতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে স্বাভাবিক জনজীবন।
মণিরামপুরের সব এলাকায় লোডশেডিং একই সময়ে হচ্ছে না। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন সময় দেখা যাচ্ছে বিদ্যুৎ বিভ্রাট। তবে সন্ধ্যার পর থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত সব এলাকায় থাকছে বিদ্যুৎ বিভ্রাট। সকাল থেকে শুরু হয়ে দিনে রাতে ৫-৭ বার বিদ্যুৎ আসা যাওয়ায় থাকে।
টেংরামারী সম্মিলনী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থী রুনা খাতুন জানায়- এখন পরীক্ষা চলছে। দিনের বেলায়ও ঠিকমত বিদ্যুৎ থাকছে না। সন্ধ্যায় বই নিয়ে বসলে বিদ্যুৎ চলে যায়। দেড় দুই ঘন্টা পর একটু এসে আবার চলে যায়। আর আসে রাত ১১টার দিকে। বিদ্যুৎ না থাকায় রাতে বই পড়া যাচ্ছে না।
একই বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণির ছাত্র ইমন হোসেন জানায়- গত সোমবার (২৬ সেপ্টেম্বর-২০২২) বিকাল ৪টার পর বিদ্যুত চলে গেছে। আর এসেছে রাত সাড়ে ৯টায়। আবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে আবার চলে গেছে। যেই বই নিয়ে বসেছি ঠিক তখন চলে গেছে।
ইমন জানায়- প্রতি রাতে লোডশেডিং হচ্ছে। আমরা লেখাপড়া করতে পারছি না। রাজগঞ্জের কোমলপুর এলাকার অমারেশ বিশ্বাস বলেন- গত সোমবার দিন রাতে অন্তত ৮-১০ ঘন্টা লোডশেডিং হয়েছে। রাতে বিদ্যুৎ ছিলো না বললেই চলে।
মাহমুদকাটি গ্রামের নূর ইসলাম বলেন- এখন সেচের কোনো মৌসুম না। তারপরও দিনে ৫-৭ বার বিদ্যুৎ চলে যায়। সন্ধ্যা থেকে ১০টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ পাওয়া যায় না বললে চলে।
লোডশেডিংয়ের একই অবস্থা মণিরামপুর পৌর ও রাজগঞ্জ এলাকায়। মণিরামপুর পৌর শহরের মোহনপুর এলাকার বাসিন্দা কহিনুর বেগম বলেন- সোমবার রাত ৯টার দিকে বিদ্যুৎ চলে গেছে। এরপর সাড়ে ১১টার দিকে এসেছে।
বিদ্যুৎ বিভ্রাটের বিষয়ে জানতে চাইলে যশোর পল্লি বিদ্যুৎ সমিতি-২ (মনিরামপুর) সদর দপ্তরের জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মনোহর কুমার বিশ্বাস বলেন- গ্যাস ও জ্বালানি সংকটের কারণে বিদ্যুতের উৎপাদন কমে যাওয়ায় লোডশেডিং শুরু হয়েছে। এটা শুধু মণিরামপুরের সমস্যা না। এটা জাতীয় সমস্যা।
মনোহর বিশ্বাস বলেন- মণিরামপুর, কেশবপুর, অভয়নগর, নড়াইল, কালিয়া, লোহাগড়া ও ফুলতলা উপজেলা মিলে যশোর পল্লি বিদ্যুৎ সমিতি-২। এখানে নোয়াপাড়া, নড়াইল ও যশোর এ তিন গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ হয়।
তিনি বলেন- এ অঞ্চলে দিনে ও রাতে বিদ্যুতের চাহিদা ভিন্ন। সন্ধ্যায় বিদ্যুতের চাহিদা থাকে ১১৫-১২০ মেগাওয়াট। আমরা সরবরাহ পাচ্ছি ৭০-৭২ মেগাওয়াট। বাকিটা ঘাটতি থাকায় লোডশেডিং হচ্ছে।
মনোহর বিশ্বাস বলেন- বিদ্যুতের কম উৎপাদন জাতীয় সমস্যা। কবে এ সমস্যার সমাধান হবে আমরা বলতে পারবো না।
প্রকাশক : আরিফ মাহমুদ, প্রধান সম্পাদক : কাজী আবু ইমরান, সম্পাদক : আবু রায়হান মিকাঈল
ফেসবুক পেইজঃ facebook.com/kalaroanewsofficial, ই-মেইল : [email protected]