মানুষের বিরল ভালোবাসা আর চোখের পানিতে প্রিয় ওসি আলহাজ শেখ মুনীর-উল-গীয়াসকে বিদায় জানালো কলারোয়া বাসী।
একজন পুলিশ অফিসার হিসেবে তিঁনি যে কত ভালো ব্যক্তি ছিলেন সেটার নজির স্থাপন হলো মঙ্গলবার (২২ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় কলারোয়া থানা চত্বরে তাঁর বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে।
থানায় কর্তব্যরত পুলিশ, জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার সাধারণ মানুষের অশ্রুসজল চোখ আর বিদায়বেলায় হারানোর আক্ষেপ প্রমাণ করলো সরকারি কর্মকর্তাও মানবিক মানবতার প্রকৃত উদাহরণ হতে পারে।
ওসি শেখ মুনীরের বদলিজনিত বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বক্তারা বক্তব্য দিতে গিয়ে বারবার কেঁদে ফেললেন, উপস্থিত সাধারণ মানুষদের দেখা যায় বারবার চোখ মুছতে। স্মরণকালে কলারোয়ায় কোন ওসির এমন আনুষ্ঠানিক বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠান দেখা মিললো।
কোন প্রচারণা ছাড়াই থানায় কর্তব্যরতদের পক্ষ থেকে হঠাৎ আয়োজন করা ওই অনুষ্ঠানে সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি জানান দিলো সৎ, নির্লোভ, নিষ্ঠাবান, ন্যায়পরায়ণ পুলিশ অফিসার কতটা সকলের প্রিয়জন হতে পারে। উদাহরণ সৃষ্টি করে বার্তা পৌছে দিলো আদর্শবানদের সকলেই পছন্দ করেন, ভালোবাসা দিয়ে শান্তিশৃঙ্খলা নিশ্চিত করা যায়।
বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে থানার পুলিশ পরিদর্শক (ওসি-তদন্ত) হারান চন্দ্রের সভাপতিত্বে সম্মানিত অতিথি হিসেবে স্মৃতিচারণামূলক বক্তব্য রাখেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম লাল্টু, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ফিরোজ আহম্মেদ স্বপন ও কলারোয়া সরকারি কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ প্রফেসর আবু নসর।
এসআই রেজাউল ইসলামের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন শিক্ষকদের পক্ষে হুমায়ূন কবীর, সাংবাদিকদের পক্ষে শেখ জুলফিকারুজ্জামান জিল্লু, ইউপি চেয়ারম্যানদের পক্ষে শামছুদ্দীন আল মাসুদ বাবু, ইমামদের পক্ষে প্রভাষক মাওলানা আসাদুজ্জামান ফারুকী, থানার সেকেন্ড অফিসার রাজ কিশোর পাল, এসআই ইসরাফিল হোসেন, এএসআই আসাবুর রহমান ও কনস্টেবল রইস উদ্দিন।
মানপত্র পাঠ করতে গিয়ে থানার সেকেন্ড অফিসার রাজ কিশোর পাল বারবার কান্নায় ভেঙে পড়েন।
অনুষ্ঠানে অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।
সাতক্ষীরার কলারোয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শেখ মুনীর-উল-গীয়াস সম্প্রতি বদলি হয়েছেন চট্টগ্রাম রেঞ্জের কক্সবাজারে। স্বাভাবিকভাবেই মঙ্গলবার দীর্ঘ কর্মদিবস শেষ করে আইজিপি'র বিশেষ নির্দেশনায় বাদ মাগরিব কলারোয়া থানা থেকে বিদায় নেন। সেসময় থানা চত্বর পেরিয়ে থানার বাইরের রাস্তায় ভারাক্রান্ত চেহারায় সাধারণ মানুষের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা যায়।
২০১৯ সালের ২৮মে কলারোয়া থানায় যোগদান করেন ওসি শেখ মুনীর।
আবেগাপ্লুত কন্ঠে অনুষ্ঠানে তিঁনি বলেন, 'এখানে যোগদানের পরদিন এই থানা চত্বরে অনুষ্ঠিত ওপেন হাউজ ডে অনুষ্ঠানে বলেছিলাম যে, থানায় সেবা নিতে আসলে কারো পকেটে হাত দিতে হবে না। আজ বিদায়ী অনুষ্ঠানে আপনাদের কাছে জানতে চাই এখন পর্যন্ত কোন টাকা লেগেছে কিনা? সেসময় উপস্থিত সকলে উচ্চস্বরে "না" বলে চিৎকার দেন।'
ওসি বলেন, 'থানার জরাজীর্ণ মসজিদ সম্পূর্ণভাবে নতুন বিল্ডিং করা হয়েছে সকলের সহযোগিতায়। আপনারা মসজিদের সহযোগিতা অব্যাহত রাখবেন।'
চলার পথে ভুলত্রুটি হলে ক্ষমাসুন্দর ভাবে দেখার অনুরোধ জানান তিঁনি।
'ওসির মানবিক কর্মকাণ্ড এলাকায় ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে। এলাকাবাসীর প্রত্যাশা, ভবিষ্যতেও পুলিশ এমন মানবিক আচরণ করবে মানুষের সাথে'- এমনটাই বলেন বক্তারা।
আগামি ২৪ সেপ্টেম্বর ঢাকায় আইজিপি'র কাছ থেকে বিশেষ ব্রিফিং ও নির্দেশনা গ্রহন করার কথা রয়েছে শেখ মুনীর-উল-গীয়াসের।
জানা গেছে, সারা দেশে পুলিশের ৮টি রেঞ্জের ৮জন পুলিশ পরিদর্শককে বাঁছাই করে কক্সবাজারে পদায়ন করা হয়েছে। সেই তালিকায় ১নং এ আছেন কলারোয়ার বিদায়ী ওসি মুনীর-উল-গীয়াস।
পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কক্সবাজার পুলিশকে ঢেলে সাজানোর অংশ হিসেবে তাঁকে টেকনাফ থানার অফিসার ইনচার্জ হিসেবে সংযুক্ত করা হতে পারে বলে সূত্রটি জানায়।
কলারোয়াবাসীর উদ্দেশ্যে বিদায়ী ওসি মুনীর আরো বলেন, 'বদলিজনিত কারণে কলারোয়া থানা থেকে চট্টগ্রাম রেঞ্জের উদ্দেশ্যে রওনা হচ্ছি।
এই কর্মকালীন সময়ে সরকারি দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে কারো মনে যদি কোন কষ্ট দিয়ে থাকি তবে নিজ গুনে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে নিবেন বলে আশা রাখি। কর্মকালীন সময়ে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের শুকরিয়া আপনাদের সহযোগিতায় যে ভাল কাজ গুলো করতে পেরেছি তার সকল কৃতিত্ব আপনাদের। আর যে সকল কাজগুলো করতে পারি নাই তার সকল ব্যর্থতা আমার।
আমার প্রতি আপনারা যে ভালবাসা দেখিয়েছেন তার জন্য আমি চির ঋণী হয়ে থাকলাম। আমি ও আমার পরিবারের সদস্যদের জন্য দোয়া করবেন। সবাই ভাল থাকবেন।'
প্রকাশক : আরিফ মাহমুদ, প্রধান সম্পাদক : কাজী আবু ইমরান, সম্পাদক : আবু রায়হান মিকাঈল
ফেসবুক পেইজঃ facebook.com/kalaroanewsofficial, ই-মেইল : [email protected]