
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এসে রায় কার্যকরের দাবি উঠেছে। এ মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অপর পলাতক আসামি সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকেও ফিরিয়ে আনার দাবি তোলা হয়েছে।
এখন আইনগত প্রশ্ন হলো- তাদেরকে কীভাবে ফিরিয়ে আনা হবে? ফিরিয়ে আনা হবে কোন প্রক্রিয়ায়?
অন্তর্বর্তী সরকারের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল জানিয়েছেন, ভারতকে চিঠি দেয়া হবে। এছাড়া পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে ভারতকে তাদের ফেরত দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
পলাতক আসামিদের ফিরিয়ে আনার বিষয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলছেন, পলাতকদের ফেরত আনার দুটি পথ রয়েছে। পাশাপাশি এ বিষয়ে আইনি প্রক্রিয়া নিয়ে কথা বলেছেন রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান।
সোমবার (১৭ নভেম্বর) মানবতাবিরোধী অপরাধে শেখ হাসিনা ও কামালকে মৃত্যুদণ্ড দেন ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যানের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারিক প্য্যানেল। রায়ের পর প্রতিক্রিয়া জানান চিফ প্রসিকিউটর ও আইন উপদেষ্টা। বিজ্ঞপ্তি দেয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের আজকের রায়ে পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামাল জুলাই হত্যাকাণ্ডের জন্য অপরাধী সাব্যস্ত হয়েছেন এবং দণ্ডপ্রাপ্ত হয়েছেন। মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডপ্রাপ্ত এই ব্যক্তিদের দ্বিতীয় কোনো দেশ আশ্রয় দিলে তা হবে অত্যন্ত অবন্ধুসুলভ আচরণ এবং ন্যায়বিচারের প্রতি অবজ্ঞার শামিল। আমরা ভারত সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই- তারা যেন অনতিবিলম্বে দণ্ডপ্রাপ্ত এই দুই ব্যক্তিকে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করে। দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান প্রত্যর্পণ চুক্তি অনুসারে এটি ভারতের জন্য অবশ্য পালনীয় দায়িত্বও বটে।
আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেন, আমরা শেখ হাসিনাকে এ দেশে প্রত্যর্পণের জন্য ভারতের কাছে আবার চিঠি লিখবো। ভারত যদি এই গণহত্যাকারীকে আশ্রয় দেওয়া অব্যাহত রাখে, তাহলে ভারতকে বুঝতে হবে, বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশের মানুষের বিরুদ্ধে একটি শত্রুতা-একটি অত্যন্ত নিন্দনীয় আচরণ।
এছাড়া যেদিন শেখ হাসিনা গ্রেফতার হবেন সেদিন থেকেই সাজা কার্যকরের প্রক্রিয়া শুরু হবে বলে জানিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জমান। পলাতক আসামিদের ফিরিয়ে আনার বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রাষ্ট্র আইনিভাবে যা যা করণীয়, সব করবে।
এ বিষয়ে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, সরকার ও রাষ্ট্র যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ায় এবং অন্যান্য কূটনৈতিক প্রক্রিয়া অবলম্বন করে পলাতক আসামিদের বাংলাদেশের মাটিতে এনে এ রায় কার্যকর করবে।
তিনি বলেন, রাষ্ট্র দুইভাবে পদক্ষেপ নিতে পারে। এক, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে প্রস্তাবিত বহিঃসমর্পণ চুক্তি (বন্দিবিনিময় চুক্তি)। যেহেতু রায় হয়েছে, বাংলাদেশ সরকার তাদের ফেরত চাইতে পারে। ভারত সরকার যদি আইনের শাসন ও ন্যায়বিচারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়, তাহলে তারা আসামিদের ফেরত দেবে। দুই, ইন্টারপোলের মাধ্যমে স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারে।
প্রকাশক : আরিফ মাহমুদ, প্রধান সম্পাদক : কাজী আবু ইমরান, সম্পাদক : আবু রায়হান মিকাঈল
ফেসবুক পেইজঃ facebook.com/kalaroanewsofficial, ই-মেইল : [email protected]