যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মসিযূর রহমান হলে এক শিক্ষার্থীকে ছাত্রলীগের রাতভর নির্যাতনের ঘটনার তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মো: আনোয়ার হোসেন।
বৃহস্পতিবার (৬ জুন) বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মো: হাফিজ উদ্দিনকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে প্রশাসন। তদন্ত কমিটির বাকি দুই সদস্য হলেন- শহীদ মসিযূর রহমান হলের প্রভোস্ট ড. তানভির ইসলাম ও ছাত্র, পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তরের পরিচালক ড. অভিনু কিবরিয়া ইসলাম।
ভুক্তভোগী জানান, সোমবার কথা-কাটাকাটির জেরে আমাকে মাথা ফাটিয়ে দেওয়ায় ঘটনায় বিচার চাওয়ায় ঘুম থেকে তুলে রাত দুইটায় ৩০৬ নং রুমে ডেকে নিয়ে যায় আমার বন্ধু আমিনুল ইসলাম ও সিয়াম। কক্ষে আগে প্রবেশ করে আমিনুল এবং আমি প্রবেশের সাথে সাথেই আমার উপর অতর্কিত হামলা করে। এসময় এলোপাতাড়ি কিল ঘুষি মারলে রুমের মেঝেতে লুটিয়ে পড়ি। তখন তারা আমাকে পা দিয়ে পাড়াতে থাকে প্রায় ১০-১২ জন। এসময় তারা আমাকে বলতে থাকে কেন প্রক্টরের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছিস? এসময় তারা আমার মোবাইল কেড়ে নিয়ে আমার ব্যক্তিগত তথ্য হাতিয়ে নেই। এক পর্যায়ে তারা আমাকে মোটা রড দিয়ে আমার সারা শরীরে পেটাতে শুরু করে। ভোর পাঁচটা পর্যন্ত চলে দফায় দফায় এমন নির্যাতন। ঐসময় আমার মনে হচ্ছিল আমিও মনে হয় আবরার ফাহাদের মতো মরে যাবো। প্রাণে বাঁচতে আমি পা জড়িয়ে ধরে বাঁচার আকুতি জানায়। এসময় তারা বলে, 'কালকের মধ্যে অভিযোগ তুলে নিবি, না হলে তোকে গুলি করে মারবো।' এসময় ছাত্রলীগের সভাপতি সোহেল রানা ভাই আমার বুকে লাথি মেরে আমাকে মেঝেতে ফেলে দেয়। বলে, ভোর হওয়ার সাথে সাথে ব্যাগ গুছিয়ে বাড়ি চলে যাবি। ক্যাম্পাসে যেন তোকে আর না দেখি।' মারধরে অংশগ্রহণ করে আশিকুজ্জামান লিমন (পিইএসএস), ইসাদ (পিইএসএস), বেলাল হোসেন (এফবি), শেখ বিপুল (পিইএসএস), রাইসুল হক রানা (ফার্মেসি) সহ আরও কয়েকজন। তাঁরা সবাই শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মো: সোহেল রানার অনুসারী।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরিক শিক্ষা ও ক্রিড়া বিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। লিখিত অভিযোগে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ঘটনার বর্ণনা দিয়ে উল্লেখ করেন, রাতভর নির্যাতনের পর সকালে আমি আমিনুলের কাছে আমার ফোন চাইলে সে ফোন দিতে অস্বীকার জানায়। পরে আমি জামাকাপড় নিয়ে চলে যাওয়ার সময় ভার্সিটির মেইন গেট থেকে আমাকে ফেরত নিয়ে আসে। তারপর আমিনুল আমার ফোন আমাকে দিয়ে, আমিনুল মোটরসাইকোলে করে আমাকে আমার বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে আসে এবং আমার মাকে বলে আপনার সন্তান যদি অভিযোগ দেয় তাহলে ওরে চূড়ামনকাঠি থেকে তুলে নিয়ে যাবে, আপনাদের পরিবার বিপদে-আপদে পড়ে যাবে। সার্টিফিকেট নিয়ে বের হাত পারবি না।
এবিষয়ে যবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো: আনোয়ার হোসেন বলেন, আমরা ইতিমধ্যে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয়ে নিরাপত্তা জোরদার করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাথে কথা বলেছি। কোনো অবস্থাতেই এমন ঘটনা বরদাস্ত করা হবেনা। এছাড়া ঘটনাটি জেনে আমি ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে যশোর সদর হাসপাতালে দেখতে গিয়েছিলাম, সেইসাথে তাঁর চিকিৎসার সকল খরচ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে বহন করার নির্দেশ দিয়েছি।
প্রকাশক : আরিফ মাহমুদ, প্রধান সম্পাদক : কাজী আবু ইমরান, সম্পাদক : আবু রায়হান মিকাঈল
ফেসবুক পেইজঃ facebook.com/kalaroanewsofficial, ই-মেইল : [email protected]