দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সর্ববৃহৎ মৌসুমি ফল আম ও কুলের পাইকরি হাট সাতক্ষীরার প্রবেশদ্বার যশোরের শার্শা উপজেলার বাগুড়ি-বেলতলা বাজার। এখানে গড়ে উঠেছে মৌসুমী ফলের পাইকরি বৃহৎ হাট ও আড়ত। আম ও কুল (বরুই) সহ নানান মৌসুমি ফলের পাইকরি এই হাটে দেশের বিভিন্ন এলাকার পাইকর ব্যবসায়ীরা কেনাবেচা করে থাকেন।
চলতি কুলের মৌসুমেও বাণিজ্যিক ভাবে জমে উঠেছে এই হাটের আড়তগুলো। স্থানীয় ক্ষুদ্র চাষী ও ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন জেলার ব্যবসায়ীরা এখানে মৌসুমি ফলের কেনা-বেচা করার ফলে প্রতিদিন সেখানে হাজারো মানুষের পদচারণা মিলন মেলায় রূপ নেয়।
জানা গেছে, মৌসুম ভেদে আম ও কুলের সময় মুখরিত হয়ে ওঠে এখানকার সব আড়তগুলো। এই হাটে ৫০-৬০টির মতো আমের আড়ত আর ২০-২৫টি কুলের আড়ত রয়েছে। প্রতিদিন এখান থেকে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহরে ট্রাকযোগে নিয়ে যাওয়া হয় এই সব মৌসুমী ফল। ইতোমধ্যে এই অঞ্চলের অর্থকারী ফসল হিসেবে পরিচিতি লাভ পেয়েছে আম ও কুল।
যশোর ও সাতক্ষীরা জেলার মিলনস্থল ওই স্থানটির পাইকরি আড়তের বাজারকে ঘিরে ইতোমধ্যে যশোরের শার্শা উপজেলা ও সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার বিভিন্ন মাঠজুড়ে চাষ হচ্ছে লাভজনক আম ও কুল। দিনে দিনে অন্য পেশার মানুষের পাশাপাশি স্থানীয় কৃষকরাও ঝুঁকছেন মৌসুমি ফল আম ও কুল চাষে।
কুল চাষী চন্দনপুর গ্রামের মিন্টু হোসেন জানান, ‘বর্তমানে চলছে কুলের মৌসুম। কুল অনেক এলাকায় বরুই নামে পরিচিত। কয়েক বছরের জন্য জমি লিজ নিয়ে কুল গাছের চারা রোপন ও পরিচর্যা করে কুলের উৎপাদন করা হয়।’
তিনি আরো জানান, ‘আপেল কুল, বল কুল, থাই কুল, চায়না কুল, নারকেল কুল, টক কুল, বাউ কুল সহ নানান নামের কুল চাষ হচ্ছে উপজেলাজুড়ে। বর্তমানে বাগুড়ি-বেলতলার পাইকরি আম-কুলের হাটে বিভিন্ন আড়তে ভোর থেকে কুল নিয়ে আসেন চাষী ও ব্যবসায়ীরা। কাগজের কার্টুন ৪০-৪২ থেকে ৬০-৬৫ কেজি কুল প্যাকেটজাত করা হয়। কুল ও প্রকারভেদে প্রতি কেজি ৩০-৩৫ টাকা থেকে ৮০-৮৫ টাকা পর্যন্ত কেনা-বেচা হচ্ছে। পরে সেগুলো ট্রাক, পিকআপযোগে দেশের বিভিন্ন এলাকায় নিয়ে যাওয়া হয়।’
স্থানীয় কুল চাষী ও ব্যবসায়ী সিংগা গ্রামের আব্দুল জব্বার লিটিল জানান, ‘গত দুই বছর দেশে করোনা ভাইরাস থাকার কারণে দাম কম থাকলেও এবছরে বেশি দামে বিক্রি করতে পেরে খুশি চাষীরা।’
চাপাইনবাবগঞ্জ থেকে আসা কুল ব্যবসায়ী জিয়ারুল ইসলাম জানান, ‘এবছর দেশে কুলের চাহিদা বেশি থাকায় আমরাও কুল কিনে তুলনামূলক ভালো দামে বেচতে পেরে লাভবান হচ্ছি।’
গিয়াস উদ্দিন, আবুল কালামসহ স্থানীয় কয়েকজন আড়তদার জানান, ‘কুলের চাহিদা ও দাম ভালো থাকায় ব্যবসা এবছর ভালো হচ্ছে।’
নিরাপদ ও নির্বিঘ্নে ব্যবসার জন্য সকলের সহযোগিতা কামনা করেছেন স্থানীয় ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি লোকমান হোসেন।
যশোরের শার্শা উপজেলা কৃষি অফিসার প্রতাপ মন্ডল জানান, ‘এ বছর শার্শা উপজেলায় মোট ৭৫ হেক্টর জমিতে ২২০ জনের মতো চাষী কুল চাষ করেছেন।’
সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ আবুল হোসেন মিয়া জানান, ‘কলারোয়া উপজেলায় ৪৭০ হেক্টর জমিতে ২৫০০ জনের মতো চাষী কুল চাষ করছেন।’
প্রকাশক : আরিফ মাহমুদ, প্রধান সম্পাদক : কাজী আবু ইমরান, সম্পাদক : আবু রায়হান মিকাঈল
ফেসবুক পেইজঃ facebook.com/kalaroanewsofficial, ই-মেইল : [email protected]