যানজটে নাকাল সাতক্ষীরা পৌরবাসি। ইট-পাথরের এই ছোট্ট শহরে জীবিকার তাগিদে কর্মের আশায় প্রতিনিয়ত গ্রাম থেকে আসছেন হাজারো মানুষ। শহরে এসে কেউ ভ্যান, ব্যাটারি ভ্যান, ইজিবাইক, গ্রামবাংলা, মাহিন্দ্রা থ্রি-হুইলার, মোটরবাইকসহ প্রায় ১৭-১৮ প্রকার যানবাহন চালাচ্ছেন। পিচ এই পথটারে বড় ভালোবেসে ফেলেছেন তারা।
আর এজন্য বাড়ছে সাতক্ষীরা শহরের প্রধান সড়কগুলোতে যানজট। এতে করে ভোগান্তি পেতে হচ্ছে বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষকে। যানজটের কারণে পথচারী যাত্রীদের দুর্ভোগ সীমাহীন। পথে হয় দেরি। তাই যানজটে ক্লান্ত মন যেনো বলে ওঠে, ‘পথের ক্লান্তি ভুলে স্নেহভরা কোলে তব মা গো, বলো কবে শীতল হব।’ সময়মত গন্তব্যে পৌছুতে পারছে না বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষ। সময়ের স্রোতে পিছিয়ে যাচ্ছে জনজীবন। যানজটের দৃশ্য দেখা যায় শহরের প্রধান সড়কের মধ্যে পাকাপোল থেকে রাজ্জাক পার্কের মেইনগেট, নিউমার্কেট থেকে চায়নাবাংলা কমপ্লেক্স, খুলনা রোড মোড়, বড়বাজার সংলগ্ন এলাকা, ডে-নাইট কলেজ মোড়, ইটাগাছা হাটের মোড়, বাসস্ট্যান্ড এরিয়া, জজ কোর্ট এরিয়া, নবারুণ স্কুল মোড়সহ শহরের বিভিন্ন জায়গায়। অতিরিক্ত মাত্রায় অটোরিকশা ইজিবাইক বেড়ে যাওযায় এই দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে শহরবাসীর। এবিষয়ে ট্রাফিক পুলিশ মাঠে থেকে যানজট নিযন্ত্রণে করছেন।
সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটির যুগ্ম-আহবায়ক এড. আজাদ হোসেন বেলাল বলেন, প্রশিক্ষণ বিহীন ইজিবাইক ও মোটরভ্যানের সংখ্যা শহরে বেশি হওয়ায় যেখানে সেখানে পার্কিং করায় যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। এদের পৌরসভা থেকে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। পৌরসভার রাস্তা সংকীর্ণ। রাস্তাগুলোর প্রশস্থতা বাড়াতে হবে। তাছাড়া অধিকাংশ রাস্তা আস্ত নেই। শহরের আভ্যন্তরীণ রাস্তাগুলো খাারপ হওয়ায় সেদিকে আবার ভ্যান চালকরাও যেতে চায়না। সব যানবাহন চলে রাস্তাগুলোতে। এসব রাস্তা উন্নয়ন করতে হবে। ঈদ উপলক্ষে ট্রাফিকের সংখ্যা বাড়াতে হবে। এসব পদক্ষেপ নিলে যানজট নিরসন হওয়া সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।
সাতক্ষীরা জেলা কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি আবুল হেসেন বলেন, সাতক্ষীরা অতিরিক্ত রেজিষ্ট্রেশন বিহীন যানবাহন বেড়ে যাওয়ায় ছোট রোডে বড় গাড়ি চলাচলে এই যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। সবচেয়ে বড় সমস্যা সৃষ্টি করে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলার পরিবহনগুলো। তারা মেইন সড়কের উপর নিয়মবহিভূর্ত পার্কিং করে এবং যেখানে সেখানে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে।
তিনি বলেন, পৌরসভা সড়ক জনপথ বিভাগকে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে। দুর্নীতিমুক্ত সড়ক তৈরি করতে হবে। তাহলে এ সমস্যা উত্তরণ হওয়া সম্ভব।
বিআরটিএ সহকারি পরিচালক কেএম মাহাবুব কবির বলেন, কিছু অনিবন্ধিত যানবাহন বেড়ে যাওয়ার কারণে সড়কের পাশে ফুটপাতে বন্ধ করে দোকান পাট সৃষ্টি হওয়ায় মানুষের চাপ বেড়ে যেয়ে যানজট তৈরি হচ্ছে বলে আমি মনে করি। তিনি বলেন, ট্রাফিক পুলিশের মনিটারিং পৌরসভা থেকে বিভিন্ন পয়েন্টে স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ দিয়ে এ সমস্যা নিরসন হওয়া সম্ভব।
ভোগান্তির শিকার ব্যাংক কর্মকর্তা কাজী হাসিবুর রহমান চপল বলেন, সকালে অফিসে যাওয়ার পথে ডে-নাইট কলেজ থেকে মোড় দিঘীরকান্দা মোড় পর্যন্ত ব্যাপক যানজট সৃষ্টি হয়। এতে আমি ব্যাপকভাবে ভোগান্তিতে পড়ি। সময়মত অফিসে পৌছাতে পারি না। মূলত ট্রান্সপোটের মালমাল লোড আনলোডের জন্য এ যানজট সৃষ্টি হয়। এটা নিরসনে জন্য পদক্ষেপ নিতে দাবি করছি।
ব্যববসায়ী শেখ আবির হোসেন অভি বলেন, শহরে কোন কাজের উদ্দেশ্যে বের হলে বিশেষ করে বৃহস্পতিবার ও রবিবার বেশ কিছু জায়গায় যানজটের শিকার হতে হয়। ভোগান্তিতে পড়তে হয়। সময় মতো কাজ শেষ করতে পারি না। যানজট নিরসন জরুরী।
ডিজিটাল ক্রিয়েটর রনি হোসেন মোল্লা বলেন, আমাকে ও প্রায়ই যানজটের শিকার হতে হয়। বড় অস্থির লাগে। এই ভোগান্তির শেষ কোথায়।
সাতক্ষীরা সরকারি কলেজর শিক্ষার্থী আসিফ শাহবাজ বলেন, আমি সকালে কলেজ যাওয়ার সময় শহীদ নাজমুল সরণি হয়ে যাই। কলেজে পৌছানোর আগ পর্যন্ত ছোট ছোট কয়েক জায়গায় আমাকে জ্যামে আটকা পড়তে হয়। সকল শ্রেণির পেশাজীবীর কাছে শহরে যানজটটি একটি অস্বস্তিকর হয়ে উঠেছে। সময়মত অনেক কাজ শেষ করতে পারছে না শহরবাসী। শহরবাসী এ শহরিক যানজট নামক অস্থিরতা ভোগান্তি থেকে মুক্তি পেতে চায়। সেজন্য কর্তৃপক্ষের দ্রুত নজরদারিতে এনে এটা নিরসন করা অতিব জরুরী দাবি করেছে।
এ বিষয়ে ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্বপ্রাপ্ত ইন্সপেক্টর শ্যামল কুমার চৌধুরী বলেন, এটা কোন অস্বাভাবিক যানযট না। পবিত্র রমজান উপলক্ষে মানুষের কর্মব্যস্ততা বেড়ে যাওয়ায় মানুষের কেনাকাটার চাপ থাকায় শহরের প্রধান সড়কগুলোতে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। ট্রাফিকে কর্মরত সদস্যরা সর্বোচ্চ সেবা দিয়ে চেষ্টা করছে এই অস্বাভাবিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার। তবে ট্রাফিক ইন্সপেক্টর ধারণা করেন ঈদের পর সবকিছু আবার স্বাভাবিক হয়ে যাবে।
সাতক্ষীরা পৌরসভা ভারপ্রাপ্ত মেয়র কাজী ফিরোজ হোসেন বলেন, বেশকিছু দিন যাবত যানজট দেখতে পাচ্ছি। তবে সবসময় নয়। রমজান মাস উপলক্ষে শহরে মানুষের চাপ বেড়েছে হঠাৎ। এজন্য এই যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। শহরের সড়কগুলোতে পৌরসভা ও ট্রাফিক অফিস যৌথভাবে কাজ করে। স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। সূত্র : ভয়েস অব সাতক্ষীরা
প্রকাশক : আরিফ মাহমুদ, প্রধান সম্পাদক : কাজী আবু ইমরান, সম্পাদক : আবু রায়হান মিকাঈল
ফেসবুক পেইজঃ facebook.com/kalaroanewsofficial, ই-মেইল : [email protected]