মুস্তাফিজুরের জীবন কাহিনী
যেভাবে হলেন আজকের ক্রিকেটার মুস্তাফিজ
বরেহা মিলনি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি করার পরপরই যাতে বাইরে খেলাধুলা করতে যেতে না পারেন, এ জন্য বাড়িতে দেওয়া হলো চারজন প্রাইভেট শিক্ষক। কিন্তু তাতেও কাজ হয়নি। সবাইকে ফাঁকি দিয়ে মনের টানে স্কুল পালিয়ে চলে যেতেন ক্রিকেট মাঠে। সেই ছেলেটিই বাংলাদেশের ক্রিকেটের বিস্ময় বালক মুস্তাফিজুর রহমান।
২০১৫ সালের ১৮ জুন ভারতের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে নিজের অভিষেকেই ৫ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের বিজয় নিশ্চিত করেন, হন ম্যান অব দ্য ম্যাচ। দ্বিতীয় দিনে আরও বিস্ময় ছড়ালেন। পেলেন ছয় উইকেট। ইতহাসের পাতায় লেখালেন নিজের নাম। গড়লেন নতুন রেকর্ড।
মুস্তাফিজের লেখাপড়ার ব্যাপারে বেশ সাবধান ছিলেন বাবা ব্যবসায়ী আবুল কাশেম। তিনি চাইতেন ছেলে ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হবে। কিন্তু সেই বাবা আজ আবেগ জড়িত কণ্ঠে জানালেন, ‘আমার ছেলে এখন আর আমার নাই, ও এখন ১৬ কোটি মানুষের সন্তান। ওর ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার হওয়া লাগবে না, ও ক্রিকেটই খেলুক।’
সাতক্ষীরা থেকে ৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণে কালিগঞ্জ উপজেলার তারালি ইউনিয়নের তেঁতুলিয়া গ্রামে মুস্তাফিজের বাড়ি।
মুস্তাফিজের জন্ম ১৯৯৫ সালে সেপ্টেম্বরে। চার ভাই ও দুই বোনের মধ্যে সবার ছোট তিনি। পরিবারের সব প্রতিকূলতার মধ্যে মুস্তাফিজের পাশে এসে দাঁড়ান তাঁর সেজো ভাই মোখলেছুর রহমান। তিনিই নিজ হাতে গড়ে তুলেছেন আজকের মুস্তাফিজকে।
স্কুল পালানো মুস্তাফিজ এখন বাংলাদেশের গর্ব এই প্রতিবেদককে মোখলেছুর রহমান জানান মুস্তাফিজের ক্রিকেটার হয়ে ওঠার গল্প। তিনি ও মেজো ভাই জাকির হোসেন গ্রামে টেনিস বলে ক্রিকেট খেলতেন। ১০-১২ বছর বয়স থেকে মুস্তাফিজও তাঁদের সঙ্গী হন। গ্রামের তেঁতুলিয়া মাঠের এক খেলায় তাঁরা তিন ভাই-ই খেলছিলেন। তখন মুস্তাফিজ ব্যাটিং করতে ভালো বাসতেন।
প্রতিপক্ষের একজন ব্যাটসম্যানকে কিছুতেই আউট করা যাচ্ছে না। মুস্তাফিজের হাতে তিনি তুলে দিলেন বল। প্রথম বলেই মুস্তাফিজ প্রতিপক্ষের সেই অপ্রতিরোধ্য ব্যাটসম্যানকে আউট করেন। তারপর বোলার হওয়ার দিকে ঝুঁকে পড়েন। মোখলেছুর রহমান: মুস্তাফিজের সেজভাইমোখলেছুর রহমান প্রতিদিন ভোর রাতে তেঁতুলিয়া থেকে ৪৫ কিলোমিটার দুরে মোটরসাইকেলে করে সাতক্ষীরা নিয়ে আসতেন প্রশিক্ষণের জন্য।
অনূর্ধ্ব-১৪ হয়ে অনূর্ধ্ব-১৭ দলে খেলে ধারাবাহিকভাবে সফল হয়েছেন মুস্তাফিজ। এরপর এলেন ঢাকার শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে ফাস্ট বোলিং ক্যাম্পে ট্রায়াল দিতে। সেখানে এসে কোচদের নজর কাড়েন। এরপর অনূর্ধ্ব-১৯ খেলেছেন নিয়মিত।
মোখলেছুর বলেন, ‘আমার বন্ধু মিলনের পরামর্শে সাতক্ষীরা গণমুখী ক্লাবের ক্রিকেট কোচ আলতাফ ভাইয়ের কাছে নিয়ে যাওয়া হলো। আলতাফ ভাইয়ের পরামর্শে মুস্তাফিজ সাতক্ষীরা স্টেডিয়ামে অনূর্ধ্ব-১৪ প্রাথমিক বাছাই উত্তীর্ণ হয়। তারপর সাতক্ষীরায় ক্রিকেট একাডেমির মুফসসিনুল ইসলামের কাছে প্রশিক্ষণ নেওয়া শুরু হয়।’
মাশরাফি বিন মুর্তজাকে সবাই চেনে ‘নড়াইল এক্সপ্রেস’ নামে। অভিষেকেই আলো ছড়ানো ক্রিকেটের নতুন বিস্ময় মুস্তাফিজকে কি তবে ডাকা যায় ‘সাতক্ষীরা এক্সপ্রেস’!
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)