এই নারীর নাম আমরা দিয়েছি রাবিয়া - থাকেন পশ্চিম আফগানিস্তানে। অনেক জ্বর নিয়ে তিনি গেছেন ডাক্তারের কাছে। ডাক্তার তার কোভিড-১৯ শনাক্ত করেছেন। রাবিয়ার অনেক জ্বর, সারা শরীরে ব্যথা।
রাবিয়া বাসায় ফিরে তার স্বামীর হাতে পেসক্রিপশনটা দিলেন, যাতে স্বামী তার জন্য ওষুধগুলো কিনে আনতে পারেন।
স্বামীর চোখে পড়ল প্রেসক্রিপশনে রাবিয়ার নাম লেখা। ক্রোধে উন্মাদ হয়ে গেলেন স্বামী। বাইরের ''একজন অপরিচিত পুরুষের কাছে'' তার নাম প্রকাশ করার জন্য তাকে পেটাতে লাগলেন।
আফগানিস্তানের সমাজে এটাই দস্তুর। 'বাইরের অপরিচিত' মানুষের কাছে মেয়েরা তাদের নাম গোপন রাখতে বাধ্য হন পরিবারের চাপে। এমনকি ডাক্তারের কাছেও নাম বলা যাবে না। কিন্তু কিছু কিছু নারী এখন এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন।
সমস্যার শুরু হয় একজন কন্যা সন্তানের জন্মের সময় থেকেই।
বহু বছর পর্যন্ত তার কোন নামই থাকে না। তাকে নাম দিতেই গড়িয়ে যায় বছরের পর বছর। একটি মেয়ের যখন বিয়ে হয়, বিয়ের আমন্ত্রণপত্রে কোথাও তার নাম উল্লেখ করা হয় না। সে অসুস্থ হলে চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশনেও প্রায়শই তার নাম উল্লেখ করা হয় না।
সে যখন মারা যায়, তখন তার মৃত্যু সনদেও তার নাম লেখা হয় না। এমনকি কবরের স্মৃতিফলকেও সে নামহীনই থেকে যায়। সে কারণেই আন্দোলনে নেমেছেন কিছু নারী। তারা চাইছেন তাদের নাম প্রকাশের স্বাধীনতা। তাদের আন্দোলনের নাম তারা দিয়েছেন ''হোয়্যারইজমাইনেম?'' - আমার নাম কোথায়? সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং পোস্টারে এই হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করছেন আন্দোলনকারী নারীরা।
আরেকজন নারী - তিনিও হেরাত প্রদেশের বাসিন্দা। বিবিসিকে বলেন তিনিও তার নাম পরিচয় গোপন রাখতে চান।
তিনি অবশ্য পুরুষদের এই আচরণের পক্ষে। তিনি বলেন, 'কেউ যখন আমাকে আমার নাম জিজ্ঞেস করে, তখন আমাকে ভাবতে হয় আমার ভাই, আমার বাবা বা আমার হবু স্বামীর সম্মান রক্ষার কথা। তখন আমি নাম বলতে চাই না। '
''আমি আমার পরিবারকে কষ্ট দেব কেন? আমার নাম বলে লাভটা কী হবে? ''আমি চাই আমাকে আমার বাবার কন্যা বলে পরিচয় দেয়া হোক, আমার ভাইয়ের বোন বলা হোক। এবং ভবিষ্যতে আমি চাই আমার পরিচয় দেয়া হোক আমার স্বামীর স্ত্রী নামে, তারপর আমার ছেলের মা - এই নামে। ''
এই কাহিনিগুলো অবাক করার মত, কিন্তু এটাই আফগানিস্তানে নারীদের স্বাভাবিক চিত্র। মেয়েরা তাদের নিজেদের নাম ব্যবহার করলে সমাজ তাকে ভ্রূকুটি করে। এমনকি আফগানিস্তানের অনেক জায়গায় মেয়েদের নাম ব্যবহার করাকে পরিবারের জন্য অপমানজনক মনে করা হয়।
বহু আফগান পুরুষ তাদের বোন, স্ত্রী বা মায়ের নাম প্রকাশ্যে উচ্চারণ করেন না, কারণ বাইরে তাদের নাম বলা লজ্জার এবং অসম্মানজনক। নারীদের সাধারণত পরিচয় দেয়া হয় পরিবারের সবচেয়ে বয়স্ক পুরুষের সাথে তার সম্পর্কের সূত্র ধরে - যেমন অমুকের মা, অমুকের বোন বা অমুকের মেয়ে।
সূত্র : বিবিসি বাংলা।
প্রকাশক : আরিফ মাহমুদ, প্রধান সম্পাদক : কাজী আবু ইমরান, সম্পাদক : আবু রায়হান মিকাঈল
ফেসবুক পেইজঃ facebook.com/kalaroanewsofficial, ই-মেইল : [email protected]