রংপুরের পীরগঞ্জে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ইসলাম ধর্ম অবমাননা করে উসকানিমূলক পোস্ট দেওয়ার দায় স্বীকার করেছেন গ্রেপ্তার যুবক পরিতোষ সরকার। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পীরগঞ্জ আমলী আদালতের বিচারক ফজলে এলাহীর কাছে দেয়া জবানবন্দীতে তিনি এ দায় স্বীকার করেন।
একইদিন কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে পরিতোষ সরকারকে আদালতে তোলা হয়। এর আগে সোমবার রাতে ফেসবুকে উসকানিমূলক পোস্ট দেয়ার অভিযোগে পরিতোষ সরকারকে জয়পুরহাট থেকে গ্রেপ্তার করে রংপুর জেলা পুলিশ। পরে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
জবানবন্দীতে যা বলেন পরিতোষ:
আদালতে দেওয়া পরিতোষের জবানবন্দী : আদালতে তিনি বলেছেন, ‘আমি পীরগঞ্জের হাতিবান্ধা উচ্চ বিদ্যালয় হতে ২০২০ সালে এসএসসি পাস করেছি। এসএসসি পরীক্ষার পর আর পড়াশোনা করি নাই। আমার বাবা বটের হাটসহ বিভিন্ন বাজারে মাছের ব্যবসা করে। আমি আমার বাবাকে মাছের ব্যবসায় সহায়তা করি।’
‘গত ৪ বছর আগে আমি B S Poritosh Sarker নামে ফেসবুকে একটি একাউন্ট খুলি। এ বছরের দূর্গা পূজার অষ্টমির দিন আমি দূর্গা মূর্তির সাথে একটি সেলফি তুলে আমার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে পোস্ট করি। ঐ পোস্টের নিচে আমার ফ্রেন্ড লিস্টে থাকা অনেক মুসলিম বন্ধুদের মধ্য থেকে অনেকে বাজে ভাবে কমেন্ট করতে থাকে। তখন আমি যারা যারা বাজে কমেন্ট করেছিল তাদের প্রফাইলে ঢুকে ম্যাসেঞ্জারে বলি যে, আমার অ্যাকাউন্টে বাজে কমেন্ট না করে ম্যাসেঞ্জারে এসে আমাকে জানাও যে, আমার কি ভুল হয়েছে।’
পরিতোষ আরও বলেন, ‘তারপরেও বাজে বাজে কমেন্ট করতে থাকলে আমি আমার পোষ্টটি ডিলিট করি। ভালবাসার ক্ষুদ্র প্রেমিক নামক ফেসবুক আইডির সাথে আমার ফ্রেন্ডশিপ আছে। উক্ত আইডি থেকে ১৭ তারিখে ভগবান শ্রী কৃষ্ণের সাথে কুকুর লাগিয়ে একটি ছবি পোষ্ট করে। আমি ঐ পোষ্টটি ১৭ তারিখ বিকেল ৩.০০ টার দিকে দেখতে পাই।
তখন আমি ভালবাসার ক্ষুদ্র প্রেমিক ফেসবুক আইডির প্রফাইলে ঢুকে তার প্রফাইল পিকচারে নীচে কমেন্ট বক্সে পবিত্র কাবা শরীফের উপর কুকুর প্রসাব করছে এমন ছবি পোস্ট করে কমেন্ট করি। Md. Unal Hasan পরে ফেসবুক আইডি থেকে আমাকে হুমকি দিয়ে উক্ত কমেন্ট ডিলিট করতে বলে। উজ্জ্বল হাসানকে আমি চিনি, তার বাসা খেজমতপুর বউ বাজার। সে আমার পূর্ব পরিচিত। পরবর্তীতে আমি ছবিসহ আমার কমেন্টটি ডিলিট করি। কিন্তু ডিলিট করার আগেই হাসান বিন কমেন্টটির স্ক্রিনশর্ট নিয়ে রাখে। পরবর্তীতে উজ্বল হাসান তার নিজের প্রফাইলে আমার ছবিসহ কর্মেন্টটি ভাইরাল করে দেয়। তখন আমি বাসাতে হয়েছিলাম।
তার আধা ঘণ্টা পরে মাগরিবের আগে আমার কাকিমা আমাদের বাসায় এসে বলে যে, আমার পোষ্টকৃত ছবিটি এলাকার লোকজন দেখে ক্ষেপে গেছে এবং দুইটি মসজিদে ঘোষণা দিয়ে আমাদের বাসায় ও পাড়ায় আক্রমণ করার জন্য আসতেছে। এই কথা শুনে আমি আর আমার বাবা নদীর ঐ দিকে গিয়ে লুকিয়ে থাকি।’
‘কিছুক্ষণ পর লোকজন আসার পর পুলিশের গাড়ির আওয়াজ শুনতে পাই। দূর থেকে দেখি যে, আমাদের বাড়ির পোওয়ালের পুজে আগুন। পরে দেখি যে অনেক লোক কসবা মাঝিপাড়া গ্রামে গিয়ে আগুন লাগায়। পরে আমি আর আমার বাবা নদীর ধারে অপেক্ষা করার পর রাত ১২:০০ টার দিকে ধাপের হাটে যাই। সেখানে গিয়ে আমার দুলাভাইকে ফোন দেই।
পরে সিএনজিতে করে জয়পুরহাট জেলার পাঁচবিবি থানার উচাই গ্রামে আমার দুলাভাইয়ের বাসা যাই। সেখানে সকাল ৮.০০ টার দিকে পৌঁচ্ছাই। সেখানে দিয়ে আমার বাবা আমার ব্যবহৃত ডিভো মোবাইল এবং দুইটি সিম ভেঙ্গে ফেলে। পরবর্তীতে পুলিশ সন্ধ্যার দিকে আমাকে আটক করে। এই আমার স্বীকারোক্তি।’
আদালত সূত্রে জানা গেছে, আসামি তার কর্মকাণ্ডের দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দেন। প্রথমে তাকে কিশোর দাবি করা হলেও পুলিশ প্রমাণ করেছে পরিতোষের বয়স ১৯ বছর। শুনানি শেষে আদালত আসামিকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
প্রকাশক : আরিফ মাহমুদ, প্রধান সম্পাদক : কাজী আবু ইমরান, সম্পাদক : আবু রায়হান মিকাঈল
ফেসবুক পেইজঃ facebook.com/kalaroanewsofficial, ই-মেইল : [email protected]