পবিত্র রমজান মাসে বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সাত দফা সুপারিশ করেছেন গোয়েন্দারা। একটি বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থা সম্প্রতি সরকারের উচ্চপর্যায়ে একটি প্রতিবেদন দিয়েছে। প্রতিবেদনে খেজুর, চিনি ও ভোজ্যতেলের ঘাটতির কথা বলা হয়েছে।
প্রতিবেদনে সাত দফা সুপারিশে বলা হয়েছে- বাজার মনিটরিংয়ের জন্য যেসব সংস্থা কাজ করছে প্রতিদিন তাদের সাফল্যের বিবরণসহ কার্যক্রম নির্ধারিত ছক অনুযায়ী কেন্দ্রীয় মনিটরিং সেলকে অবহিত করতে হবে।
এলসিতে নির্ধারিত সমুদয় পণ্য খাদ্য আমদানি করা হয়েছে কিনা তা কঠোরভাবে মনিটরিং করতে হবে।
আমদানিকৃত এবং দেশে উৎপাদিত খাদ্যপণ্য যাতে পাইকারি বাজার থেকে খোলা বাজারে প্রয়োজন অনুযায়ী সরবরাহ করা হয় সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।
খাদ্যদ্রব্যের অবৈধ মজুত, দাম বৃদ্ধি এবং কৃত্রিম সংকট তৈরি করে কোনো মহল যেন পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করতে না পারে সেজন্য কঠোর আইন প্রয়োগসহ সব সংস্থার পক্ষ থেকে নিয়মিত অভিযান চালাতে হবে।
বাজারে মূল্য তালিকা প্রদর্শনে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশকে (টিসিবি) অধিকতর সক্রিয় হতে হবে।
প্রতিবেদনের উপসংহারে বলা হয়েছে, রমজানে নিত্যপণ্যের দাম স্থিতিশীল রাখতে সরকারের পক্ষ থেকে কমপক্ষে ১০টি সংস্থা মাঠে নামছে। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং সেল। র্যাব-পুলিশের পৃথক ভ্রাম্যমাণ আদালত, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, টিসিবি, কৃষি বিপণন অধিদপ্তর, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, সিটি করপোরেশন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মনিটরিং টিম প্রভৃতি। এসব সংস্থাকে অবশ্যই সমন্বিত ও কার্যকরভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে।
গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রমজান মাসকে ঘিরে বিপুল পরিমাণ ভোগ্যপণ্য আমদানি করা হয়েছে। তাই ভোগ্যপণ্য সংকটের আশঙ্কা নেই। তারপরও অসাধু মজুতদাররা অতি মুনাফার লোভে বাজারকে অস্থিতিশীল করতে পারে। তাদের কারণে জনসাধারণের নাভিশ্বাস উঠার শঙ্কা আছে।
এছাড়া এলসি নিষ্পত্তি বিবেচনায় রমজানে চাহিদার তুলনায় খেজুরের ঘাটতির আশঙ্কা আছে। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে খেজুরের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। বলা হয়, দেশে খেজুরের বাৎসরিক চাহিদা এক লাখ টন। শুধু রমজানেই এর চাহিদা ৫০ হাজার টন। গত বছরের জুলাই থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত খেজুর আমদানির জন্য এলসি খোলা হয়েছে ৪৬ হাজার ৩৭৬ টন। এলসি নিষ্পত্তি হয়েছে ২৩ হাজার ৮২৬ টন।
প্রতিবেদনে চাল, ডাল, ভোজ্যতেল, ছোলা এবং চিনিসহ অন্যান্য নিত্যপ্রয়াজনীয় দ্রব্যের বাজার পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়। পণ্যের চাহিদা, এলসি খোলা এবং এলসি নিষ্পত্তির পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়। বেশিরভাগ পণ্যের ক্ষেত্রেই ঘাটতি হবে না বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়।
ভোজ্যতেলের বিষয়ে বলা হয়, দেশে বাৎসরিক চাহিদার পরিমাণ ২০ লাখ টন। প্রতিমাসে প্রায় এক দশমিক চার লাখ টন ভোজ্যতেলের চাহিদা থাকলেও রমজানে বেড়ে দাঁড়ায় তিন লাখ টন। বিভিন্ন ব্যবসায়িক গ্রুপের কাছে বর্তমান মজুত আছে দুই লাখ ৭৫ হাজার ১৮৭ টন। পাইপলাইনে আরও আছে দুই লাখ ৪২ হাজার টন। রমজানে চাহিদা অনুযায়ী ভোজ্যতেলের মজুত কম আছে ২৪ হাজার টন। তবে পাইপলাইনে থাকা ভোজ্যতেল দেশে পৌঁছলে ভোজ্যতেলের ঘাটতি থাকবে না বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
চিনির বিষয়ে বলা হয়, দেশে বাৎসরিক চাহিদার পরিমাণ ২০ লাখ টন। প্রতিমাসে দেড় লাখ টন চিনির চাহিদা থাকলেও রমজানে চাহিদা দাঁড়ায় প্রায় তিন লাখ টন। দেশে বর্তমানে মজুত আছে দুই লাখ ৫০ হাজার ৭৪৯ দশমিক ৬৮ টন। এ ক্ষেত্রে কিছু ঘাটতি থাকলেও পাইপলাইনে থাকা চিনির আমদানির মাধ্যমে ঘাটতি মোকাবিলা সম্ভব।
প্রকাশক : আরিফ মাহমুদ, প্রধান সম্পাদক : কাজী আবু ইমরান, সম্পাদক : আবু রায়হান মিকাঈল
ফেসবুক পেইজঃ facebook.com/kalaroanewsofficial, ই-মেইল : [email protected]