রাস্তার ধারে প্ল্যাকার্ড টাঙিয়ে ৫ এসএসসি পরীক্ষার্থীর দোয়া কামনা!
পাবনার বেড়া উপজেলার কাশিনাথপুর বিজ্ঞান স্কুলের পাঁচ শিক্ষার্থী নিজেদের ছবি সংবলিত প্ল্যাকার্ড টাঙিয়ে এসএসসি পরীক্ষার জন্য দোয়া চেয়েছে। সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছে তাদের নামও। তাদের টাঙানো প্ল্যাকার্ডের ছবি গত দু’দিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। তাদের এমন অভিনব কাজ নিয়ে নানামুখী আলোচনা চলছে। তবে বেশিরভাগ মানুষ তাদের এ কাজকে সৃজনশীলতার দৃষ্টান্ত হিসেবে মত দিয়েছেন।
কাশিনাথপুর মোড়ে গিয়ে দেখা গেছে, খুঁটিতে পাঁচজনের ছবি সংবলিত প্ল্যাকার্ড টাঙানো। এতে তাদের নামও রয়েছে।
প্ল্যাকার্ডে লেখা আছে- দোয়া প্রার্থী এসএসসি পরীক্ষার্থী। এ পাঁচ পরীক্ষার্থীরা হলেন- মাশরাফি, সাহেদ, নাহিদ, রাফিদ ও সামি। এ নিয়ে সমালোচনা হলেও অধিকাংশ মানুষ ইতিবাচক মন্তব্য করেছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা জহুরুল ইসলাম বলেন, ‘রাস্তায় আজকাল এত বিলবোর্ড যে, সড়কে গাড়ি চালাতেও অনেক চালকের সমস্যা হয়। অমুক নেতা তমুক নেতা আবার অমুকের পক্ষে তমুকের শুভেচ্ছার ব্যানারে ভরা সড়কের দু’পাশ। থাকে নানা কথার ফুলজুরি। সেসব পোস্টার নিয়ে কেউ কোনো কথা বলেন না। এসব শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত করা দরকার। এরপর যেন তারা সমাজের নানা অসঙ্গতি তুলে ধরে প্ল্যাকার্ড-পোস্টার টাঙাতে পারে।’
প্ল্যাকার্ড টাঙানো পাঁচ শিক্ষার্থীর একজন খন্দকার মাশরাফি জানায়, তারা কারও কাছে শুনে এটি করেনি। পাঁচ বন্ধু হঠাৎ করেই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। তারা কাশিনাথপুর মোড়ে তিনটি প্ল্যাকার্ড টাঙিয়েছে। তবে তাদের ছবিটি স্কুলের পাশে দাঁড়িয়ে তুললে ভালো হতো বলেও জানায় সে।
কাশিনাথপুর বিজ্ঞান স্কুলের প্রধান শিক্ষক জাহিদুল ইসলাম বলেন, বিজ্ঞান স্কুলের পড়াশোনার মান অনেক ভালো। অষ্টম শ্রেণি ও এসএসসি পরীক্ষায় তাদের ফলাফল ঈর্ষণীয়। এছাড়া প্রাইভেট স্কুলটি রাজশাহী শিক্ষাবোর্ডের রেজিস্ট্রেশন প্রাপ্ত। যা বেশিরভাগ প্রাইভেট স্কুলে নেই।
প্ল্যাকার্ড টাঙানোর প্রসঙ্গে প্রধান শিক্ষক বলেন, এটা কিশোর মনের আবেগ বা আনন্দের বহিঃপ্রকাশ। তারা তো অন্যায় কিছু করেনি। তারা মানুষের কাছে দোয়া চেয়েছে।
কাশীনাথপুর বিজ্ঞান স্কুলের সাবেক প্রধান শিক্ষক প্রভাষক আলাউল হাসেন বলেন, কলেজে চাকরি হওয়ায় আমি এক বছরের বেশি সময় আগে ওই প্রতিষ্ঠান থেকে অব্যাহতি নিয়েছি। ওই পাঁচ শিক্ষার্থীকে গত ১০ বছর ধরে জানি। তারা অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী। তারা পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পাবে বলে আশা করি।
তিনি আরও বলেন, প্ল্যাকার্ড টাঙানো নিয়ে যারা সমালোচনা করছেন তারা বিষয়টির গভীরে যাননি। কত শত খারাপ কাজে কিশোরদের ছবি ব্যবহার করা হচ্ছে সেদিকে কারও নজর নেই। আর এ শিক্ষার্থীরা তো দোয়া চেয়েছে। সমাজে বিশৃঙ্খলা ছড়ায়নি। তাদের সাধুবাদ জানাই।
চিত্রশিল্পী বিপ্লব দত্ত বলেন, তারা আধুনিক প্রযুক্তি কাজে লাগিয়েছে বলা যায়। অস্থির সমাজে কিশোররা যখন বিপথগামী তখন তারা দোয়া চেয়েছে। বড়দের দোয়া চাওয়া ভালো দিক। তাদের এ কাজটি বুদ্ধিবৃত্তিক বলা যায়।
পাবনার কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ আলহাজ মাহাতাব উদ্দিন বিশ্বাস বলেন, এটা কিশোরদের একটি আবেগ। তারা জীবনে প্রথম পাবলিক পরীক্ষায় অংশ নিতে যাচ্ছে। তাদের এ আবেগকে সম্মান জানিয়ে দোয়া করা উচিত। কারণ এখন সামাজিক অবক্ষয় চলছে। তার বিপরীতে এটি শিক্ষার্থীদের একটি সৃজনশীল কাজ। বিষয়টিকে নেতিবাচক ভাবে না নিয়ে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখা দরকার। তাহলে তাদের মাধ্যমেই আগামীতে নেতৃত্ব দেওয়ার গুণাবলী প্রস্ফুটিত হবে।
সৌজন্যে: আওয়ার নিউজ বিডি
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)