বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ। আমাদের উন্নতির পথে যেসব বাধা বিপত্তি রয়েছে এর মধ্যে অস্থিতিশীল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অন্যতম। এরকম একটি পরিস্থিতিতে যখন সমাজের প্রত্যেকটা মানুষ অনিশ্চয়তার মধ্যে ভুগছিল তখন পুলিশ বাহিনীর কার্যক্রমকে আরও গতিশীল ও কার্যকর করার লক্ষ্যে সরকার একটি এলিট ফোর্স গঠনের পরিকল্পনা করে। ক্রমান্বয়ে সভা, আলোচনা ও গবেষণার পর সরকার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশ পুলিশের অধীনে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন সংক্ষেপে র্যাব ফোর্সেস নামে একটি এলিট ফোর্স গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়। গত ২৬ মার্চ ২০০৪ তারিখে জাতীয় স্বাধীনতা দিবস প্যারেডে অংশ গ্রহণের মাধ্যমে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) জনসাধারণের সামনে আত্মপ্রকাশ করে।
র্যাব প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে পেশাদারিত্ব, দক্ষতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন, জনমানুষের নিরাপত্তা বিধান ও সুরক্ষা নিশ্চিতকরণে প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করে আসছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় জনগণের আস্থা ও নির্ভরতার প্রতীক হিসেবে এ বাহিনী এরই মধ্যে জনমনে আস্থা অর্জন করেছে।
বর্তমান সময়ে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসী, প্রতারক চক্র, চাঁদাবাজ, ধর্ষণকারী, নৈরাজ্যকারী, বিভিন্ন মামলার আসামি, অপহরণকারী, মানবপাচারকারী, জালনোট কারবারি, ছিনতাইকারী ও ডাকাতসহ বিভিন্ন অপরাধীদের দ্রুত সময়ের মধ্যে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় এনে র্যাব জনগণের সুনাম অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।
এরই ধারাবাহিকতায় সমাজকে অপরাধমুক্ত রাখতে ‘নবদিগন্তের পথে’ প্রকল্পের পর এবার ‘নবজাগরণ’ নামে নতুন একটি প্রকল্পের কাজ শুরু করতে যাচ্ছে র্যাব।
দেশের বিভিন্ন প্রান্তে অপরাধ ঝুঁকিতে থাকা লোকদের চিহ্নিত করে এ প্রকল্পের আওতায় এনে সুন্দর, স্বাভাবিক জীবনযাপনের জন্য উৎসাহিত করা হবে। চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে শুরুর হয়ে সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত চলবে ‘নবজাগরণ’ কর্মসূচির পাইলট প্রকল্পের কাজ।
র্যাবের অপরাধ প্রতিরোধবিষয়ক সাম্প্রতিক স্ট্র্যাটেজির আওতায় নতুন প্রকল্পের স্লোগান ‘অপরাধকে না বলুন।
দেশের অপরাধ নির্মূলের লক্ষ্যে চৌকস এ বাহিনী বিভিন্ন সময়ে অপরাধ পর্যালোচনা ও গবেষণার মাধ্যমে যে কর্মপরিকল্পনা করে থাকে, তারই ধারাবাহিকতায় চালু হচ্ছে নতুন প্রকল্প ‘নবজাগরণ’। অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ার ঝুঁকিতে থাকা মানুষকে এই প্রকল্পের আওতায় এনে বিভিন্নভাবে অপরাধ থেকে দূরে থাকার জন্য নিরুৎসাহিত করতে পারলে সমাজে অপরাধপ্রবণতা অনেকাংশে কমবে বলে মনে করছে র্যাব।
র্যাব জানায়, এছাড়া এ প্রকল্পের মাধ্যমে সমাজের পিছিয়ে পড়া, শিক্ষা কার্যক্রম থেকে ঝরে পড়া এবং বেকার ও স্বল্প উপার্জনকারীদের স্বাবলম্বী করার প্রয়াসও হাতে নেওয়া হয়েছে।
‘নবজাগরণ’ হলো র্যাবের আর্লি ইন্টারভেনশন। এ প্রকল্পে যাদের নির্বাচিত করা হয়েছে, তারা এখনো অপরাধে জড়ায়নি। তবে জড়ানোর ঝুঁকিতে আছে।
র্যাব সূত্রে জানা যায়, এর আগে ‘নবদিগন্তের পথে’ নামের প্রকল্পে র্যাব যেসব কার্যক্রম করেছে, সেগুলো ছিল পোস্ট ইন্টারভেনশন। সে কার্যক্রমের আওতায় এরই মধ্যে ৪২১ জন অপরাধীকে আত্মসমর্পণের মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। যার মধ্যে ১৬ জন জঙ্গি এবং সুন্দরবন ও চট্টগ্রাম অঞ্চলের ৪০৫ জন জলদস্যু।
র্যাবের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, নবজাগরণের আওতায় সমাজের পিছিয়ে পড়া, শিক্ষা কার্যক্রম থেকে ঝরে পড়া এবং বেকার ও স্বল্প উপার্জনকারীদের স্বাবলম্বী করার প্রয়াস হাতে নেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কর্মসূচির মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তি তৈরি করাই এই কর্মসূচির মূল উদ্দেশ্য।
তিনি আরও জানান, যাদের পাইলট প্রকল্পের আওতায় নেওয়া হয়েছে, তাদের সাফল্য অনুপ্রেরণা জোগাবে অপরাধে জড়িয়ে পড়ার ঝুঁকিতে থাকা মানুষকে। তালিকাভুক্তদের স্বাবলম্বী করতে প্রাথমিক পর্যায়ে পর্যটন নির্ভর পেশা হোটেল-রেস্টুরেন্টে সার্ভিস বয়, ফটোগ্রাফার, ট্যুরিস্ট গাইড, ড্রাইভিংকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া পরিবারের নারী সদস্যদের জন্য সেলাই প্রশিক্ষণ কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে পুরো পরিবার স্বাবলম্বী হবে।
এ প্রসঙ্গে র্যাব সদর দপ্তরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, নবজাগরণের ব্যাপ্তি পর্যায়ক্রমে বাড়বে। জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে মাঠ পর্যায়ে গ্রাম্য বৈঠক, কমিউনিটি বেজড নানা কর্মসূচি, সভা-সেমিনার এবং মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হবে। র্যাবের নতুন এই কার্যক্রমে এরই মধ্যে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন এবং যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরসহ সরকারি-বেসরকারি সংস্থা ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা যুক্ত হয়েছেন।
তিনি বলেন, পাইলট প্রকল্পে আমরা ২০-২৫ জনকে নির্বাচিত করেছি। প্রশিক্ষণের জন্য ৪-৫ জন করে ছোট ছোট গ্রুপে ভাগ করা হয়েছে। যাদের নির্বাচিত করেছি, তারা অপরাধের ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীর জন্য আইকন হবে। ঝুঁকিপূর্ণ লোকগুলো বৈধ পেশায় যুক্ত হতে উৎসাহ পাবেন।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন আরও বলেন, যাদের পাইলট প্রকল্পের আওতায় আনা হয়েছে, তাদের বয়স ২০ থেকে ৩০ বছর। তারা কোনো উৎপাদনশীল কাজে জড়িত না। কেউ স্কুল থেকে ঝরে পড়েছে, কেউ বেকার। কেউ অল্প শিক্ষিত। আবার কেউ ভবঘুরে টাইপের। উপার্জন বহুমুখী করতেই পরিবারের এসব সদস্যদের নবজাগরণের আওতায় আনা হচ্ছে।
র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের উপ-পরিচালক মেজর রইসুল আজম মনি বলেন, র্যাবের কর্মপন্থায় যুক্ত হওয়া ‘নবজাগরণ’ সমাজের অপরাধপ্রবণতা কমাতে অনুষঙ্গ হিসেবে কাজ করবে।
তিনি বলেন, নবজাগরণের মাধ্যমে যাদের সমাজের মূল ধারায় আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তাদের কিছু প্রশিক্ষণ র্যাব কর্মকর্তারা সরাসরি দেবেন। এ ক্ষেত্রে র্যাবের সরঞ্জামাদি ব্যবহার করা হবে। বাকি প্রশিক্ষণ আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে দেওয়া হবে।
প্রকাশক : আরিফ মাহমুদ, প্রধান সম্পাদক : কাজী আবু ইমরান, সম্পাদক : আবু রায়হান মিকাঈল
ফেসবুক পেইজঃ facebook.com/kalaroanewsofficial, ই-মেইল : [email protected]