সরকারি নির্দেশনার বিন্দুমাত্র তোয়াক্কা না করেই উচ্চ মূল্যে বিক্রি হচ্ছে কাঁচাবাজারের সব পণ্য মাছ-মাংস-ডিম-সবজিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সব ধরনের পণ্যের দাম লাগামহীন হয়ে পড়েছে। সরকারি নির্দেশনার বিন্দুমাত্র তোয়াক্কা না করেই উচ্চ মূল্যে বিক্রি হচ্ছে কাঁচাবাজারের সব পণ্য। বাজারের এই লাগামহীন পরিস্থিতিতে হাঁপিয়ে উঠছেন ক্রেতারা। প্রায় এক মাস হয়ে গেছে সরকার নিত্যপ্রয়োজনীয় কৃষি পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে। তবু নিয়ন্ত্রণে আসেনি কাঁচাবাজারের পণ্যের দাম। এরমধ্যে সরকার ডিম আমদানির সিদ্ধান্ত নেয়, আমদানিও করে। কিন্তু এর প্রভাব পড়েনি বাজারে। দাম কমার পরিবর্তে উলটো বেড়েছে।
প্রতি ডজন লাল ডিম ১৫০ টাকা ও সাদা ডিম ডজন প্রতি ১৪৫ টাকায় বিক্রি করতে দেখা যায়। বাজার করতে আসা এক ক্রেতা সেলিম বলেন, ডিমের দাম তো বলে ১৫০ টাকা ডজন। কিন্তু যদি একটু বড় ডিম নিতে চাই তখন ১৬০ টাকা করে নিতে হয়। যেভাবে সব কিছুর দাম বাড়ছে সেভাবে তো আমাদের বেতন বাড়ছে না। শুধু খরচের পরিমাণ বেড়ে চলছে।
রাজধানীর মিরপুরের ১ নম্বরের কাঁচাবাজার সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায় বাজার পরিস্থিতি। বাজারে মানভেদে দেশি পেঁয়াজ ১০০-১১০ টাকা, ক্রস জাতের পেঁয়াজ ১০০ টাকা, ভারতীয় পেঁয়াজ ৭৫ টাকা, আলু ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। অথচ সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতি কেজি পেঁয়াজের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ৬৪ থেকে ৬৫ টাকা। আলু কেজিতে ভোক্তা পর্যায়ে ৩৫/৩৬ টাকা ও কোল্ড স্টোরেজ থেকে ২৬/২৭ টাকা দাম হওয়ার কথা। কিন্তু বাজারে গেলে সরকারের নির্দেশনার কিছুই বোঝার উপায় নেই। ক্রেতাদের সাথে কথা বললে তারা জানায়, তাদের কিনতে হয় বেশি দামে, ফলে কম দামে বিক্রি অসম্ভব। আলু-পেঁয়াজ বিক্রেতা মাইনুদ্দিন বলেন, আমি গতকাল রাতে দেশি পেঁয়াজ আর ক্রস পেঁয়াজ কিনেছি। আমার কেনা পড়েছে দেশিটা ৯৩ টাকা আর ক্রস ৯২ টাকা। আর আমি বিক্রি করছি দেশিটা ১০০ থেকে ১০৫ টাকা আর ক্রস ১০০ টাকায়। ব্যবসায়ী আবিদ হোসেন এসেছিলেন বাজার করতে। পেঁয়াজ কেনার সময় কথা হয় তার সাথে। তিনি বলেন, কয়েকদিন আগেও তো দেশি পেঁয়াজ ৯০ টাকা করে কিনলাম, এখন ১১০ টাকা করে বলছে। এভাবে হলে আমরা কোথায় যাবো? বাজার করতে আসা আরেক ক্রেতা হাবিবুর রহমান, পেশায় শিক্ষক। তিনি বলেন, সবকিছুর দাম যেভাবে বাড়ছে তার সাথে তাল মিলিয়ে আর চলতে পারছি না। দিন দিন খরচ বাড়ছে।
কেবল আলু-পেঁয়াজই না আদা-রসুনের দামও রয়েছে ঊর্ধ্বমুখী। আজকে ভারতীয় আদা ২৪০ টাকা, চায়না রসুন ১৯০-২০০, দেশি রসুন ২৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
সবজির বাজারে এসেও হাঁসফাঁস করতে হচ্ছে ক্রেতাদের। চড়া দামে কিনতে হচ্ছে সব ধরনের সবজি। আজকের বাজারে লম্বা বেগুন ১০০ টাকা, সাদা গোল বেগুন ১২০ টাকা, কালো গোল বেগুন ১৪০ টাকা, শসা ৮০ টাকা, করল্লা ১০০ টাকা, উচ্ছে ১২০ টাকা, পেঁপে ৪০ টাকা, পটল ৮০-১২০ টাকা, কাঁকরোল ১০০ টাকা, গাজর ১২০ টাকা, মুলা ৮০ টাকা, টমেটো ১০০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৬০ টাকা, ঢেঁড়স ১০০ টাকা, চিচিঙ্গা ৮০ টাকা, ধুন্দল ৮০ টাকা, বরবটি ১২০ টাকা, কচুরমুখী ১০০ টাকা, শিম ২০০ টাকা, কাঁচামরিচ ২৪০ টাকা, ধনেপাতা ২০০ কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতিটি লাউ ১০০ টাকা, ফুলকপি ৭০ টাকা, বাঁধাকপি ৭০ টাকা ও চাল কুমড়া ৬০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। বাজারে আসা ক্রেতারা বলছেন, এভাবে দাম বাড়তে থাকলে খেয়েপরে বেঁচে থাকা কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে উঠবে। এছাড়া আজকে রুই মাছ ৪৫০-৬০০ টাকা, কাতল মাছ ৪০০-৪৫০ টাকা, কালিবাউশ ৪০০-৬০০ টাকা, চিংড়ি মাছ ৮০০-১০০০ টাকা, কাঁচকি মাছ ৫০০ টাকা, কই মাছ ৩৫০ টাকা, পাবদা মাছ ৫০০ টাকা, শিং মাছ ৫০০-৫৫০ টাকা, বেলে মাছ ১১০০-১৩০০ টাকা, বোয়াল মাছ ১১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
ব্রয়লার মুরগি ১৮০-২০০ টাকা, কক মুরগি ২৯০-৩১৫ টাকা, দেশি মুরগি ৫৫০ টাকা, গরুর মাংস ৭৫০-৭৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
মুদি দোকানের পণ্যের দাম আজকেও রয়েছে অপরিবর্তিত। তবে মোটা মসুরের ডাল দাম বেড়েছে ৫ টাকা। আগে দাম ছিল ১০৫ টাকা কেজি, এখন তা হয়েছে ১১০ টাকা। এছাড়া ছোট মুসরের ডাল ১৩০ টাকা, মুগ ডাল ১৩০ টাকা, খেসারি ডাল ৮০ টাকা, বুটের ডাল ৯০ টাকা, ছোলা ৭৫ টাকা, প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৭৫ টাকা, চিনি ১৩৫ টাকা, দুই কেজি প্যাকেট ময়দা ১৪০ টাকা, আটা দুই কেজির প্যাকেট ১২০ টাকা, খোলা সরিষার তেল প্রতিলিটার ২২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
প্রকাশক : আরিফ মাহমুদ, প্রধান সম্পাদক : কাজী আবু ইমরান, সম্পাদক : আবু রায়হান মিকাঈল
ফেসবুক পেইজঃ facebook.com/kalaroanewsofficial, ই-মেইল : [email protected]