শতভাগ বিদ্যুতায়নের দ্বারপ্রান্তে বাংলাদেশ
বাংলাদেশ এখন শতভাগ বিদ্যুতায়নের দ্বারপ্রান্তে। চর থেকে পাহাড়, দ্বীপ থেকে প্রত্যন্ত জনপদ সব জায়গায় পৌঁছে গেছে বিদ্যুতের আলো, পাল্টে গেছে জীবনযাত্রা। বাকি কেবল পার্বত্য চট্টগ্রামের ০ দশমিক ১৫ ভাগ এলাকা। চলতি মাসের মধ্যে অবশিষ্ট কাজও শেষ করতে চায় বিদ্যুৎ বিভাগ।
খাগড়াছড়ির ঠাকুরছড়া, বিচ্ছিন্ন এই জনপদে আঁধার নামতেই জনজীবন স্থবির হতো। তবে এখন রাতের অন্ধকার দূর করে জনজীবন সচল থাকে বহুক্ষণ। দুর্গম পার্বত্য এলাকায় সৌর বিদ্যুতের আলো জীবনযাত্রা পাল্টে দিয়েছে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈ সিং বলেন, রিমোট এলাকা, সেই এলাকায় আমরা প্রায় ১১ হাজারের মতো সৌরবিদ্যুতের লাইন দিয়েছি। সাড়ে ৪২ হাজার পরিবারের মধ্যে সোলার আলো দেওয়া হবে বিনাপয়সায়।
মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন দুর্গম চরাঞ্চলে নদীর তলদেশ দিয়ে সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে। আরও দুর্গম কিছু এলাকায় দেওয়া হয়েছে জেনারেটর। এভাবেই গেল এক যুগে বিদ্যুতের গ্রাহক বেড়েছে তিন কোটি ২১ লাখ।
বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান সেলিম উদ্দিন বলেন, আগে গ্রাহকরা অফিসে আসত বিদ্যুৎ লাইনের জন্য। এখন আমরা উল্টো গ্রাহকের কাছে যাচ্ছি বিদ্যুৎ দেওয়ার জন্য। ‘আলোর ফেরিওয়ালা’ আমাদের একটি কর্মসূচি। তার মাধ্যমে আমরা বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে গিয়ে বিদ্যুৎ দিচ্ছি। আর আমাদের অফিসে আসলেও আমরা দ্রুত বিদ্যুতায়নের আওয়ায় নিয়ে আসছি। পাওয়ার সেলের তথ্যমতে, ২০০৯ সালে দেশে বিদ্যুতের গ্রাহক ছিল এক কোটি আট লাখ, বর্তমানে যা ৪ কোটি ১৮ লাখ। ২০০৯ সালে বিদ্যুতের উৎপাদন ক্ষমতা ছিল চার হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট, বর্তমানে ২৫ হাজার ২৮৪ মেগাওয়াট। বিদ্যুৎকেন্দ্র ২৭টি থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪৭টিতে। দ্রুত সময়ের মধ্যে শতভাগ বিদ্যুতায়নের মাইলফলক অতিক্রম করবে বাংলাদেশ।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, আমরা গ্রিড লাইনে শতভাগ বিদ্যুতায়ন করে ফেলেছি প্রায় ২০২০ সালের শেষ নাগাদ। আমাদের চ্যালেঞ্জটা ছিল চর এলাকায় কত দ্রুত বিদ্যুৎ নিয়ে আসতে পারি। আমরা নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দেওয়ার জন্য দুর্গম চরগুলোতে সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে কানেকশন দিচ্ছি। যে চ্যালেঞ্জটা আমাদের পার্বত্য চট্টগ্রামের কিছু এলাকায় এখনও বাকি আছে, সেগুলো সোলার ছাড়া উপায় নাই।
পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, দশমিক ১৫ হলো ওই অংশটুকু। সে অংশটুকু সোলারের মাধ্যমে, পার্বত্য উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সেটা বিদ্যুতায়ন হবে। আমরা যেকোনো সময় প্রধানমন্ত্রীর সুবিধামতো সময়ে শতভাগ যে বিদ্যুতায়ন হয়েছে তা আমরা ঘোষণা আসবে।
দক্ষিণ এশিয়ায় ভুটানের পর বাংলাদেশই হতে যাচ্ছে দ্বিতীয় শতভাগ বিদ্যুতায়নের দেশ। তবে মাত্র সাড়ে সাত লাখ মানুষের দেশ ভুটানের চেয়ে বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জটা অনেক বড় ছিল, যা জনসংখ্যার বিচার করলেই বোঝা যায়।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ম. তামিম বলেন, আমাদের বিদ্যুতের ব্যবহার অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। বিদ্যুতের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে, ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে এবং অর্থনীতিকে সমর্থন করার ক্ষমতাও বৃদ্ধি পেয়েছে।
আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে দেশে বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা হবে ২২ হাজার ৮০০ মেগাওয়াট। সে সময় উৎপাদন ক্ষমতা থাকবে প্রায় দ্বিগুণ।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)