যশোরে সরকারি জমি উদ্ধারে মামলা করলেন জেলা প্রশাসক। শার্শা উপজেলায় থানার পিছনে সরকারি কাছারি বাড়ির ৩৫ শতক জমি ৪১ বছর অবৈধভাবে দখলে রেখেছে স্থানীয় ভূমিদস্যু ফজলুর রহমানের ছেলেরা, মো: কবির হোসেন, মো: জসিম উদ্দিন, মো: মনির হোসেন, মো: ইমাম হোসেন। এই সরকারি কাছারি-বাড়ির জমি জালিয়াতি করে নিজেদের নামে রেকর্ড করে রাস্তা ও ড্রেন দখলে নিয়ে বাড়ি নির্মাণ করেছে।
ফজলুর রহমান চাষাবাদ করার জন্য ধানী শ্রেণি দেখিয়ে প্রথম দিকে একসনা বন্দোবস্ত নেন পরে আবার পনের(১৫) বছরের বন্দোবস্ত নেন কিন্তু এসএ খতিয়ান ও সিএস খতিয়ানে কাছারি বাড়ি উল্লেখ রয়েছে। এখানে কোন চাষাবাদ হয় নি বলে এলাকাবাসির অভিযোগ রয়েছে। ইতি মধ্যে অনেকের শারীরিক ভাবে নির্যাতন করেছে ও বয়স্ক ব্যাক্তিদের লাঞ্ছিত করেছে, রাস্তা ও ড্রেন ব্যবহার নিয়ে।
জমি দখলের বিষয়ে প্রথম দিকে অতি গোপন থাকলোও পরে জানাজানি হলে নড়েচড়ে বসে উপজেলা প্রশাসন এবং তখনকার উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো:খোরশেদ আলম ২০১৯ সালের ১১ই নভেম্বর স্বাক্ষরিত একপএে উল্লেখ করেন কালেক্টর যশোরের নামে কাছারি বাড়ির বাস্তু শ্রেণির জমি।
এই জমিতে সরকারের সরাসরি স্বার্থ জড়িত রয়েছে। তার জন্য আর এস গেজেট প্রকাশ হওয়ার সাথে সাথে এলএসটি মামলার নির্দেশ দেন বুরুজবাগান ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা কে। এবং এ বিষয়ে জেলা প্রশাসককে চিঠি পাঠিয়েছিলেন।জেলা- উপজেলা প্রশাসনের দীর্ঘ তদন্তের পর জালিয়াতি প্রমাণিত হওয়ায় এ খাস খতিয়ান ভুক্ত জমি উদ্ধারে জন্য জেলা প্রশাসক,যশোর মহোদয়ের কার্যালয়ের সিভিল স্যুটশাখা থেকে জিপি দপ্তর কে এল,এস,টি/দেওয়ানী মামলা করার জন্য ৩০/০৯/২০২০ ইং তারিখে চিঠি দেয়। জিপি বাহাউদ্দীন ইকবাল এই প্রতিবেদককে জানান,চিঠি পেয়ে সরজমিনে যান ও ইউনিয়ন ভূমি সহকারি কর্মকর্তার সাথে দেখা করে সমস্ত কাগজপত্র যাচাই করে দেখেন সরকারের কাছারি বাড়ির জমির জাল দলিল করা হয়েছে।
শার্শা উপজেলার ৭২নং শার্শা মৌজার এস,এ ১২৫৫ নং দাগের যে ৩৫ শতক জমি রহিয়াছে উহা বাংলাদেশ সরকারের ১নং খাস খতিয়ান ভুক্ত জমি এবং ঐতিহ্য কাছারি বাড়ির জমি। উক্ত জমি আর, এস খতিয়ানে ২৩৩৬ নং দাগে স্থানীয় পর্যায়ের কথিত ব্যক্তি(জসিমসহ তার ভাইয়েরা) তঞ্চকতা(ক্রটিপূর্ণ/জালিয়াতি)সহকারে খাস খতিয়ানভুক্ত কাছারি বাড়ির জমি ব্যক্তি মালিকানায় আর এস খতিয়ানে ৩২.৬৩ শতক প্রতারণামূলক রেকর্ড লিপিবদ্ধ করাইয়াছে।
যার প্রমাণ হয় এখানে জালিয়াতি করা হয়েছে। তাছাড়া ঐ জমিতে একশ বছর আগের স্থানীয় মানুষের চলাচলের রাস্তা ও পানি নিষ্কাশনের ড্রেন রহিয়াছে। ঐ সমস্ত ব্যক্তিরা জমি দখলের পর হাজারো মানুষের সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। আইনের দৃষ্টিতে রাষ্টীয় আইন ও প্রজাস্বত্ব আইনের ২০(এ) ধারা মতে কাছারি বাড়ি,জলমহাল,হাট-বাজার,নদী শ্রেণির জমি কোন অবস্থাতেই ব্যক্তি মালিকানায় থাকিতে পারে না বলে মত দেন।
এদিকে, দূর্নীতি দমন কমিশন,প্রধান কার্যালয়,ঢাকা হতে ১৭.০২.২০২০ইং তারিখে ০৪.০১.০০০০.১০৯.২৮.০০১.১৯-৫০৪ নং স্মরক এ কার্যকর ব্যবস্হা গ্রহনের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করে জেলা প্রশাসককে চিঠি দিয়েছে।
আবার, বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়, খুলনা হতে ০৫.০৯.২০২১তারিখে ০৫.৪৪.০০০০.০০২.০৭.০০৪.২০-৩৪৮ নং স্মরকে বিধিগত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করে জেলা প্রশাসক কে চিঠি দেয়।
উল্লেখ্য যে,সরকারি এই জমি দখলকারিরা স্বত্বের দাবিতে শার্শা সহকারী জজ আদালতে একটি দেওয়ানি মামলা দাখিল করে যার নং-৮৯/৯৯।এখানে বাদিপক্ষ জসিমসহ মোট-৮জন ও বিবাদিপক্ষ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে জেলা প্রশাসক,যশোর সহ অন্যান্যরা।
মামলার শেষ দিকে ২০/০৭/২০০১ তারিখে একটি রায় হয় যে রায় বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে আসে।ঐ রায়ে বাদিপক্ষ অসন্তুষ্ট হইয়া ০২/০৭/২০০১ তারিখের রায়ের আদেশের বিরুদ্ধে মহামান্য সুপ্রিম কোর্টে হাইকোর্ট বিভাগে একটি সিভিল রিভিশন মামলা দাখিল করেন যাহা সি,আর-৮১/২০০২ নং। মামলাটি গত ১৪/১১/২০১৮ তারিখে রায় হয়।উক্ত রায়ে পক্ষ ভুক্ত বিবাদীদের অন্তভূক্তির বিষয় বিবেচনা করিয়া বিজ্ঞ শার্শা সহকারী জজ আদালতের ২০/০৭/২০০১ তারিখের রায়ের আদেশ বহাল রাখে এবং হাইকোর্টের মামলাটি নিষ্পত্তি করেন। প্রকাশ থাকে যে, বিজ্ঞ শার্শা সহকারী জজ আদালতের ৮৯/৯৯ নং মামলাটি এখনো বিচারাধীন রয়েছে।
সরকারি আইন কৌশলী জানান, শার্শা মৌজার প্রিন্ট পর্চার রেকর্ড প্রকাশিত হলেও গেজেট বের হতে দেরি হয়। যে কারণে মামলা করতে দেরি হয়েছে। বৃহস্পতিবার রেকর্ড সংশোধনের জন্যে ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনাল,যশোর আদালতে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে জেলা প্রশাসক,যশোর বাদি হয়ে মামলা দাখিল করা হয়।
বিবাদী করা হয় মৃত-ফজলুর রহমানের ৫ সন্তান জসীম,কবির হোসেন,মনির হোসেন,ইমাম হোসেন,শাহিনা খাতুন।নুরুল ইসলামের স্ত্রী জাহানারা খাতুন ও ফজলুর রহমানের দুই স্ত্রী রেহানা খাতুন এবং মমতাজ বেগম,মোট আটজন। মামলায় বিচারক আসামীদের প্রতি সমন জারি করে আগামী ২০২২ সালের ১১ই জানুয়ারি মামলার শুনানির দিন ধার্য করে আদেশ দিয়েছেন।
প্রকাশক : আরিফ মাহমুদ, প্রধান সম্পাদক : কাজী আবু ইমরান, সম্পাদক : আবু রায়হান মিকাঈল
ফেসবুক পেইজঃ facebook.com/kalaroanewsofficial, ই-মেইল : [email protected]