যশোরের শার্শা উপজেলার কায়বা ইউনিয়নের বাগুড়ী গ্রাম সংলগ্ন বেলতলা বাজারে হাত বাড়ালেই মিলছে ভয়ানক মাদক। যার অন্যতম নেপথ্য ভূমিকায় এলাকার উঠতি বয়সী কিশোর গ্যাং। এমনটাই জানালেন এলাকার অনেকে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকে জানান- বাগআঁচড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের দক্ষিনে ২ কিলোমিটার দূরত্বে কায়বা ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ড বাগুড়ী বেলতলা বাজার এলাকায় প্রায় ২ যুগেরও বেশি সময় ধরে মাদক ব্যবসা চলছে কিশোরদের দিয়েই।
তারা জানান, সন্ধ্যা ঘনিয়ে রাত আসলেই রমরমা তাদের পদচারণা। রাতের আধারটাকে পুঁজি করে বাগুড়ী দক্ষিণপাড়া বেলতলা মোড় সংলগ্ন মাদক ব্যবসায়ীর বাড়ির চারপাশ ঘিরে কয়েকজন কিশোররা চালিয়ে যাচ্ছে রমরমা মাদকের ব্যবসা। বেশির ভাগই ১৪ থেকে ১৫ বা ১৫ থেকে ১৭ বছরের। গাঁজার ছোট পুরিয়া অর্থ্যাৎ ১ মুড়া ২০ টাকা আর প্যাকেট ১০০ টাকা, বড় প্যাকেট ২০০ টাকায় বিক্রি হয়। তাছাড়া এখানে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকায় এক পিচ ইয়াবা বিক্রি হয়। শুধু রাতেই নয়, দিনের আলোতেও নানান কায়দায় চলে মাদকের কারবার।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাত যত গভীর হয়, এই এলাকায় মাদক ব্যবসা ততই জমজমাট আসরে পরিণত হয়। তবে ক্রেতাদের বেশির ভাগই মটরসাইকেলে কিংবা সাইকেলে বা হেঁটে গাঁজা, ইয়াবা, ফেন্সিডিল কিনতে আসেন। অনেকে আবার ইঞ্জিন ভ্যানে করে আসেন। যাত্রীবিহীন রিকশা ও ভ্যান মাদক পাচারের অন্যতম বাহন। সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নজরদারি রাখায় পুলিশ আসার আগেই খবর পেয়ে যায় মাদক ব্যবসায়ী ও সেবনকারীরা।
এছাড়া মাঝেমধ্যে পুলিশের গাড়ি বা মোটরসাইকেল যোগে পুলিশ ওই এলাকা দিয়ে গেলে মাদক ক্রেতা-বিক্রেতা সবাই সতর্ক হয়ে যায়। যার যার মত তারা গা ঢাকা দেয়। এ সময় মাদক ব্যবসায়ীদের সতর্ক করার কাজটি করে থাকে কিশোর দল।
ওই এলাকার বিভিন্ন সূত্রে আরো জানা গেছে, লাভজনক এই ব্যবসায় কিশোররাই প্রধান হাতিয়ারের অন্যতম টার্গেট। বাগুড়ী প্রাইমারি স্কুল মাঠ পাড়া ভেতরের অবস্থা আরও ভয়াবহ। এই এলাকাটি কিশোররা মাদক খাওয়া ও বিক্রির নিরাপদ স্থান হিসাবে বেছে নিয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, বর্তমানে এই এলাকাতে একাধিক মাদক মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামি জামিনে এসে মাদকের ব্যাবসার সিন্ডিকেট গড়ে তুললেও অজানা কারণে তাদেরকে পুলিশ গ্রেফতার করছে না। তাদের খুঁটির জোর কোথায় সেটা এখন এলাকার মানুষের মধ্যে ঘুরেফিরে আলোচনায় আসছে।
স্থানীয়সূত্রে জানা গেছে বাগুড়ী বেলতলা বাজারের পাশে ইউনুস আলীর দোকানের পেছনে মাসুদের আমবাগানে, মুড়ির মিল (আমিরির মোড়) পালপাড়া, বাগুড়ী মাঠ পাড়া, মাঝের পাড়া, বাগুড়ী সীমানা ঘেসা বেত্রাবতী নদীর ঘাটসহ বিভিন্ন এলাকায় মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ করে থাকে মাদক ব্যবসায়িরা। টাকা-পয়সার ভাগ বটোয়ারা নিয়ে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেলতলা বাজারের একজন দোকান ব্যবসায়ী জানান, ‘আমার ছেলের বয়স ১৫/১৬ বছর। দীর্ঘ ৪ বছর মাদকাসক্ত হয়ে পড়েছে। প্রায় মাদকের টাকার জন্য বাড়িতে হট্টগোল ও সংসারের জিনিসপত্র ভাঙচুর করে। কোন কিছুতেই আমার ছেলেটিকে ভালো করতে পারছি না।’
তিনি আরো বলেন, ‘আজ যদি এলাকায় মাদক বেচাকেনা না হতো তাহলে আমার ছেলেটির এমন পরিনতি হতো না।’
সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মতে মাদক, অপরাধ ও যৌনতা একটি বৃত্তের মধ্যে থাকে। মাদক বহন করতে গিয়ে একজন কিশোর প্রথমে ওই প্যাকেট খোলে। সেখান থেকে সে মাদকাসক্ত হয়। মাদকাসক্ত হলে ওই কিশোরের টাকার প্রয়োজন হয়। তখন ডিলাররা তাকে ২০টি গাঁজার পুড়িয়া বিক্রি করলে দুটি বিনা মূল্যে দেওয়ার কথা বলে। এভাবে মাদকের সঙ্গে জড়িত কিশোররা ভবিষ্যতে পেশাদার সন্ত্রাসী হওয়ার পথ তৈরি হচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের প্রতি এলাকাবাসীসহ সর্ব সাধারণ দাবি জানিয়েছেন যে, শার্শার বাগুড়ি বেলতলা এলাকার কিশোর গ্যাংয়ের ভয়ংকর মাদকের আখড়াকে অবিলম্বে ধ্বংস করা হোক। তা না হলে অল্প সময়ে এলাকার কিশোর, যুবকসহ বিভিন্ন বয়সীরা মাদকের ভয়াল করালগ্রাসে নিমজ্জিত হয়ে পড়তে পারে।
প্রকাশক : আরিফ মাহমুদ, প্রধান সম্পাদক : কাজী আবু ইমরান, সম্পাদক : আবু রায়হান মিকাঈল
ফেসবুক পেইজঃ facebook.com/kalaroanewsofficial, ই-মেইল : [email protected]