যশোরের শার্শা উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে আউটডোরে ও জরুরী বিভাগে সাধারণ রুগীদের কাছ থেকে মাথাপিছু টিকিটের মুল্য দ্বিগুণ আদায় করা হচ্ছে। কিন্তু রুগীরা কাঙ্খিত সেবার পরিবর্তে নগন্য সেবা নিয়ে বাড়ি ফিরছে। সাধারণ জনগনের স্বাস্থ্য সেবার কোন উন্নয়ন হচ্ছেনা।
৫০ শয্যা বিশিষ্ট এ হাসপাতালটিতে অভিজ্ঞ কোন চিকিৎসক না থাকায় এলাকার মানুষ ভাল মানের চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেনা বলে জানালেন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা।
চলতি বছরের জানুয়ারি মাস থেকে আউটডোরে ও জরুরী বিভাগে সাধারণ রুগীদের কাছ থেকে মাথাপিছু টিকিটের মুল্য ৫ টাকার স্থলে ১০ টাকা আদায় শুরু হওয়ার পরপরই অভিজ্ঞ চিকিৎসক অন্যত্র বদলির নোটিশ পেয়ে চলে গেছে। বর্তমানে স্বাস্থ্য কেন্দ্রে যে সব চিকিৎসক আছে তা সবই নতুন যোগদানকৃত। চিকিৎসা জগতে তারা একেবারেই নতুন।
স্বাস্থ্য কেন্দ্রের অভ্যন্তরে রুগীদের চিকিৎসা সেবার জন্য কম খরচে এক্স-রে, আল্ট্রাসনো, ইসিজি, রক্ত, প্রস্রব-পায়খানা ইত্যাদি পরীক্ষা-নিরীক্ষার সু-ব্যবস্থা থাকা সত্বেও স্বাস্থ্য কেন্দ্র চলাকালীন সময়ে চিকিৎসকরা কমিশন বানিজ্যের জন্য সিংহভাগ রুগীদের স্বাস্থ্য কেন্দ্রের বাইরে পছন্দের বিভিন্ন ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পাঠাতে দেখা যায়। রুগীদের স্বাস্থ্য কেন্দ্রের বাইরে পাঠালে একদিকে যেমন রুগীর অর্থদন্ড হচ্ছে অন্যদিকে সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব।
স্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্যাথলজিক্যাল বিভাগে খোজ নিয়ে জানা যায়, প্রতিদিন ১৫-২০ জন রুগী ছাড়া বাকি রুগীদের স্বাস্থ্য কেন্দ্রের বাইরে পছন্দের বিভিন্ন ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পাঠাচ্ছেন চিকিৎসরা। অথচ মার্চ মাসের হিসাব অনুযায়ী ২১ কর্ম দিবসে স্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্যাথলজিক্যাল বিভাগে রুগীদের কাছ থেকে বিবিধ পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য আয় হয়েছে ৪৬ হাজার ৫শত ৬০ টাকা। মার্চ মাসের ২১ কর্ম দিবসে স্বাস্থ্য কেন্দ্রের আউটডোরে রুগীর উপস্থিতি ছিল ৭ হাজার ৩ জন এবং টিকিটি বিক্রি হয়েছে ৭০ হাজার ৩০ টাকা। আর জরুরী বিভাগে সাধারণ রুগীদের কোন তালিকা তৈরী হয়না। জরুরী বিভাগে রুগী ভর্তি দেখানো হয়েছে ৭ শত ৩৫ জন এবং ভর্তি ফি আদায় হয়েছে ১৪ হাজার ৭শত টাকা। ১শত ২২ জন রুগীর এক্স-রে পরীক্ষার জন্য আদায় হয়েছে ৮ হাজার ৯ শত ১০ টাকা। ৩৮ জন রুগীর ইসিজি পরীক্ষায় ৩ হাজর ৪০ এবং ১শত ৩ জন রুগীর আল্ট্রাসনোগ্রাম পরীক্ষায় ১৩ হাজার ৯ শত ৭০ টাকা আদায় করা হয়েছে। জরুরী রুগী পরিবহনে এ্যাম্বুলেন্স থেকে আয় হয়েছে ৩১ হাজার ২শত টাকা।
স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ১ জন হোমিও মেডিকেল অফিসার থাকলেও সপ্তাহে ২দিন বাইরে ডিউটি থাকার কারণে রুগীরা চিকিৎসা সেবা নিতে এসে ফিরে যেতে দেখা যায়।
দন্ত বিভাগে মেডিকেল অফিসার থাকলেও সহকারির বিরুদ্ধে রয়েছে বিভিন্ন অভিযোগ। সময়-সুচি অনুসরণ করেন না এবং অফিস টাইমে অধিকাংশ সময় বাইরে ঘুরা-ফেরা করতে দেখা যায়।
২০২০ সালের ৯ সেপ্টেম্বর সাধারণ রুগীদের জন্য অপারেশন থিয়েটার (ওটি) চালু হলেও অভিজ্ঞ চিকিৎসকের অভাবে সেটি মুখ থুবড়ে পড়ে আছে। কোটি টাকা মুল্যের যন্ত্রপাতি নষ্ট হতে চলেছে। ফলে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা সাধারণ অসহায় ও গরীব রুগীদের কষ্টার্জিত অর্থদন্ড দিয়ে বাইরের কোন বেসরকারি হাসপাতাল বা ক্লিনিকে দৌড়াতে হয়।
এই ভাবে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সেবা নিতে আসা সাধারণ অসহায় ও অসচ্ছল রুগীরা প্রতিনিয়ত আর্থিক ক্ষতি ও হয়রানির স্বীকার হচ্ছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাক্তার ইউসুফ আলী রুগী সেবার বিষয় নিয়ে বলেন, ৫০ শয্যা বিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডাক্তারের চাহিদা ২১ জন, আছে ১৪ জন। নার্সের চাহিদা ৩৫ জন, আছে ২৬ জন। অন্যান্য সেকশনে আনুপাতিক হারে জনবল খুবই কম থাকার কারণে দাপ্তরিক বা অন্যান্য কাজ ব্যাহত হচ্ছে। তবে ডাক্তারদের কমিশন বানিজ্যের জন্য বিবিধ পরীক্ষা-নিরীক্ষার ক্ষেত্রে রুগীদের বাইরে পাঠানোর বিষয়টি আমার জানা ছিল না। প্রমাণ পেলে অপরাধীর বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।
প্রকাশক : আরিফ মাহমুদ, প্রধান সম্পাদক : কাজী আবু ইমরান, সম্পাদক : আবু রায়হান মিকাঈল
ফেসবুক পেইজঃ facebook.com/kalaroanewsofficial, ই-মেইল : [email protected]