এবিএম কাইয়ুম রাজ, শ্যামনগর (সাতক্ষীরা): বৈশাখের তপ্ত দুপুরে উপকূলের লবণাক্ত বাতাস যখন প্রকৃতিকে রুক্ষ করে তোলে, তখন শ্যামনগরের মাঠ-ঘাটে কৃষ্ণচূড়ার লাল ফুল যেন রঙিন এক প্রতিরোধের বার্তা নিয়ে আসে। এই আগুনঝরা ফুল শুধু গাছের সৌন্দর্য নয়, উপকূলবাসীর চোখে এটি প্রাকৃতিক প্রতিরোধ আর আশাবাদের প্রতীক।
নদী, খাল-বিল ও জলাভূমিতে ভরা শ্যামনগরের বিস্তীর্ণ এলাকায় কৃষিকাজ দিন দিন কঠিন হয়ে উঠছে লবণাক্ততার কারণে। তবুও প্রাকৃতিক প্রতিকূলতার মাঝেও কৃষ্ণচূড়া ফুলে ফুলে ভরে ওঠে বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠে, আনে ভালো সময়ের বার্তা। স্থানীয়দের ভাষায়, এটি 'ভালো সময়ের বার্তাবাহক'।
রমজাননগর, মুন্সিগঞ্জ, কৈখালী, গাবুরা ও ইশ্বরীপুরের পথে পথে ছড়িয়ে থাকা কৃষ্ণচূড়ার গাছ গ্রামের নারীদের চোখে স্বপ্নের মতো। স্থানীয় শিক্ষক ও পরিবেশকর্মী মশিউর রহমান জানান, “এই অঞ্চলে অনেক গাছ টিকে না, কিন্তু কৃষ্ণচূড়া লোনা জল ও ঝড়ের মাঝেও বারবার ফিরে আসে। এটি প্রকৃতির সঙ্গে লড়াইয়ের নিঃশব্দ প্রতীক।”
সুন্দরবনের সান্নিধ্যে থাকা শ্যামনগরের প্রকৃতি বৈচিত্র্যময় হলেও শিল্পায়নের অভাব, নদীভাঙন ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পরিবেশ আজ হুমকির মুখে। এই বাস্তবতায় কৃষ্ণচূড়া যেন এক নিরব প্রতিরোধের বার্তা দেয়।
এ ফুল শুধু দৃষ্টিনন্দন নয়, মৌমাছি ও প্রজাপতির মতো পরাগবাহীদের আকৃষ্ট করে পরিবেশের জৈব বৈচিত্র্য রক্ষায়ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। পরিবেশবিদদের মতে, কৃষ্ণচূড়ার মতো সহনশীল গাছ উপকূলীয় পরিবেশ রক্ষায় কার্যকর হতে পারে।
লাল-কমলা এই ফুলের নিচে দাঁড়ালে রোদ, বাতাস আর জীবনসংগ্রামের বাস্তবতা যেন একসঙ্গে অনুভূত হয়। শ্যামনগরের কৃষ্ণচূড়া তাই শুধু একটি ফুল নয়, বরং উপকূলের জীবনসংগ্রামের এক অনন্য রঙিন প্রতিচ্ছবি।
প্রকাশক : আরিফ মাহমুদ, প্রধান সম্পাদক : কাজী আবু ইমরান, সম্পাদক : আবু রায়হান মিকাঈল
ফেসবুক পেইজঃ facebook.com/kalaroanewsofficial, ই-মেইল : [email protected]