সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলায় দীর্ঘদিন ধরে একটি জমির মালিকানা নিয়ে আইনি লড়াই চললেও আদালতের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে সেখানে অবৈধভাবে স্থাপনা নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে।
স্থানীয়দের দাবি, উপজেলার নূরনগর ইউনিয়নের রামজীবনপুর মৌজায় প্রায় ২.৭১ একর জমি নিয়ে গত ৫১ বছর ধরে মামলা চলছে। এটি বর্তমানে জেলা জজ আদালতে আপিল পর্যায়ে রয়েছে। তবে আদালতের আদেশ উপেক্ষা করে শ্যামনগর উপজেলা বিএনপির আহবায়ক সদস্য ফরিদ উদ্দীন মাসুদ ও নুরনগর ইউনিয়নের জিয়া মঞ্চ এর সাধারণ সম্পাদক সোহেল রেজা (ফারেজ) এর ইন্দনে অভিযুক্ত শহিদুল ইসলাম ওই জমিতে দখল করে স্থাপনা তুলছেন।
এছাড়াও ইন্দনদাতা মাসুদ ও ফারেজের বিরুদ্ধে ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে জবর দখলসহ বিভিন্ন অপকর্মের সাথে জড়িত বলে জানান স্থানীয়রা।
জমির ইতিহাস ও বিরোধের সূত্রে জানা গেছে, জমির পূর্ববর্তী মালিক ছিলেন বছিরুদ্দীন গাজী, জসিম উদ্দীন গাজী, মেহের উদ্দীন গাজী ও আছিরুদ্দীন গাজী। এটি একসময় জমিদার উদয় কুমার দাসের অধীনে ছিল। ১৯৩৩ সালে নিলামের মাধ্যমে তিনি জমির মালিকানা ফিরে পান এবং ১৯৩৪ সালে দখল বুঝে নেন। পরে পঞ্চানন মিস্ত্রী ওরফে পাচু মিস্ত্রী ৮.৩০ একর জমি বন্দোবস্ত নিয়ে ভোগদখল শুরু করেন।
১৯৫০ সালে নগদ অর্থের প্রয়োজনে পঞ্চানন মিস্ত্রীর উত্তরসূরি ৫.৭৬ একর জমি নূর মোহাম্মদ সরদার, মো. আব্দুল গফুর সরদার ও মো. আব্দুল বারী সরদারের কাছে রেজিস্ট্রি কোবলা মূলে বিক্রি করেন। তারা শান্তিপূর্ণভাবে জমি ভোগদখল করলেও ১৯৭৩ সালে আব্দুল হামিদ গাজী ও নেছার উদ্দীন গাজী আদালতে জমির পক্ষ নয় এমন পক্ষকে বিবাদী করে আদালতে বেনাম স্বনাম মামলা করে সোলে ডিক্রি লাভ করেন। যেটি ছিল সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।
অভিযোগ রয়েছে, উক্ত সোলে ডিক্রি প্রদানের সময় নূর মোহাম্মদ সরদার গংকে বিবাদী শ্রেণিভূক্ত করা হয়নি এবং গোপনীয়ভাবে আদালতকে বিভ্রান্ত করে প্রতিপক্ষরা রায় আদায় করেন। এরপর ১৯৭৪ সালে তারা উক্ত সোলে ডিক্রি রদ রহিতের জন্য দেঃ (মামলা নম্বর: ৪০৭/১৯৭৪) করেন এবং দাবি করেন ১৯৫০ সাল থেকে শান্তিপূর্ণভাবে জমি ভোগদখল করে আসছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা আফরোজা খাতুন বলেন, "আমি জন্মের পর থেকেই এই জমি আমাদের দখলে দেখেছি। কিন্তু দুই মাস আগে হঠাৎ শহিদুল ইসলাম দাবি করেন, এই জমি তাদের। আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে আমাদের জমি তারা অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে দখল করেছে এবং দুইটি খড়ের ঘর তুলেছে। প্রতিনিয়ত আমাদের হুমকি দিচ্ছে। আমি প্রশাসনের কাছে নিরাপত্তা ও জমি ফেরতের দাবি জানাই।"
অন্যদিকে, অভিযুক্ত শহিদুল ইসলাম বলেন, "সরকারি নিলামের মাধ্যমে আমার বাবা ৮ বিঘা, দাদা ১৬ বিঘা এবং চাচাতো ভাইয়েরা ১৩ বিঘা জমি কিনেছিলেন। এছাড়া গফুর সরদারের বাবা ৩৩ বিঘা জমি কেনেন, যার দলিল দেখিয়ে এতদিন উনারা এই জমি দখলে রেখেছিল। সুপ্রিম কোর্টে মামলার রায় আমাদের পক্ষে এসেছে, তাই আমরা ২.৭১ একর জমির দখল নিয়েছি।"
স্থানীয়দের দাবি, আদালতের আদেশ উপেক্ষা করে জমি দখল ও স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে, কিন্তু প্রশাসন কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এ বিষয়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে, তা জানতে অপেক্ষা করছে এলাকাবাসী।
শ্যামনগর থানার উপ-পুলিশ পরিদর্শক (নিঃ) সজীব আহমেদ জানান, এ সংক্রান্ত বিষয়ে শাহজাহান কবির থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন এবং এই জমির উপরে মহামান্য আদালতের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে বলে জানতে পারি। এরই প্রেক্ষিতে আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে অভিযুক্ত শহিদুল ইসলামকে জমিতে না আসার জন্য নিষেধ করে আসি। কিন্তু তিনি অমান্য করে সেখানে দুইটি খড়ের ঘর তোলেন।
প্রকাশক : আরিফ মাহমুদ, প্রধান সম্পাদক : কাজী আবু ইমরান, সম্পাদক : আবু রায়হান মিকাঈল
ফেসবুক পেইজঃ facebook.com/kalaroanewsofficial, ই-মেইল : [email protected]