মণিরামপুর উপজেলার রাজগঞ্জের হাবিবুর রহমান (৩০) ও ইছানুর রহমান (২৭)। আপন ভাই। দুজনেই মালয়েশিয়া প্রবাসী। তারা দুইজনই চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে দেশে ছুটিতে আসেন। যখন দেশে আসেন তখন করোনার প্রভাব মারাত্মক ছিলো না। তারপর থেকে আস্তে আস্তে করোনা প্রভাব মারাত্মক হওয়ায় আর মালয়েশিয়ায় ফিরতে পারেনি। তাদের সঞ্চায়িত টাকা বসে বসে খরচ করে অবশেষে বাধ্য হয়ে দেশেই নির্মাণ শ্রমিকের কাজ শুরু করেছেন।
মণিরামপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় করোনাকালে যেসব প্রবাসীরা দেশে এসেছেন তাদের মধ্যে ৭০ শতাংশ জীবিকা সংকটে রয়েছেন। কারণ এসকল প্রবাসীদের সিংহভাগই বিদেশে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। জমিজায়গা বিক্রি করে কিংবা সম্পদ খুইয়ে বিদেশে গিয়েছিলেন পরিবারের অর্থনৈতিক উন্নতি ও স্বাচ্ছন্দের আশায়। তাদের বেশিরভাগই পরিবার পরিজন ছেড়ে বিদেশে শ্রমিকের কাজ করে পাওয়া আয়ের টাকা দিয়ে দায়দেনা মেটাচ্ছেন বা মিটিয়েছেন। কেউ নিজের পায়ে দাঁড়াতে শুরু করেছিলেন।
কিন্তু ছুটিতে দেশের বাড়িতে এসে বৈশ্বিক মহামারি করোনার কারণে তারা বর্তমানে নানা ধরণের সমস্যার সম্মুখীনও হচ্ছেন।
পারিপার্শ্বিক নানান সংকট, সংশয় আর সংকোচে পিষ্ট হচ্ছেন দেশে আসা এরূপ অনেক প্রবাসী।
জানা গেছে, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে যেসব প্রবাসীরা ছুটিতে দেশে আসেন তারা আর বিদেশে ফিরতে পারেনি। অনেকেরই ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। অনেকটা বাধ্য হয়েই তারা দেশেই বিভিন্ন পেশায় ঢুকে পড়েছেন।
আর যাদের ভিসার মেয়াদ এখনো আছে তাদের মধ্যে ৭০ শতাংশ প্রবাসী কার্যত বেকার হয়ে পড়েছেন। তারাও বাধ্য হয়ে বিকল্প জীবিকার পথে হাঁটছেন। এদের মধ্যে কেউ ভাড়াই মোটর সাইকেল চালাচ্ছেন। কেউ নির্মাণ শ্রমিক, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকের কাজ শুরু করেছেন। আবার অনেকেই সুবিধাজনক বিভিন্ন পেশায় কর্মরত হয়ে পড়েছেন।
বিপরীতে যারা এখনো কর্মহীন অবস্থায় রয়েছেন তারাও তাদের সঞ্চায়িত টাকা বসে বসে খরচ করেছেন।
সবমিলিয়ে বর্তমানে চরম অর্থ সংকটে আছেন নিয়মিত ও স্থায়ী কর্ম সংকটে পড়া প্রবাসীরা। সংকটের পাশাপাশি সংশয়, সংকোচে দিনপাত করছেন তারা।
হাবিবুর, ইছানুরের মতো একই এলাকার তফিজুর রহমান (৩৫) এখনো কর্মহীন।
হানুয়ার গ্রামের ইকবাল হোসেন (৩৩), হাজরাকাটি গ্রামের আজিজুর রহমানসহ আশপাশের বিভিন্ন গ্রামের দেশে আসা প্রবাসী সবাই এখন কর্মহীন অথবা অস্থায়ী জীবিকার যতসামান্য কোন কর্মে।
এদের মত মণিরামপুরের প্রতিটা গ্রামে গ্রামে শত শত দেশে আসা প্রবাসী কর্মহীন অবস্থায় রয়েছেন। এসব সৃষ্টি হয়েছে শুধুমাত্র করোনা পরিস্থিতিতির কারণে।
তবে আশার কথা হচ্ছে, ইতোমধ্যে মালয়েশিয়াসহ কিছু দেশে বাংলাদেশিদের গমনের নিষেধাজ্ঞা শিথিল করেছে। শর্তসাপেক্ষে, নির্দিষ্ট নিয়ম ও নির্দেশনা অনুসরণ করে সেসকল দেশে ফিরতে পারবেন বাংলাদেশিরা। যদিও বাংলাদেশিরা প্রবাসে কর্মক্ষেত্রে ফিরতে শর্ত, নিয়ম, নির্দেশনা কতটুকু সম্পন্ন করতে পারবেন তা নিয়ে শঙ্কায় আছেন দেশে আসা অনেক প্রবাসীরা।
দেশের বাড়িতে আসা প্রবাসীরা তাদের সমস্যা সমাধানে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন। পাশাপাশি করোনাকালের দু:সময়ে আর্থিক প্রনোদণা, সহায়তা কিংবা সুদমুক্ত ৠণ প্রাপ্তির দাবি জানিয়েছেন।
প্রকাশক : আরিফ মাহমুদ, প্রধান সম্পাদক : কাজী আবু ইমরান, সম্পাদক : আবু রায়হান মিকাঈল
ফেসবুক পেইজঃ facebook.com/kalaroanewsofficial, ই-মেইল : [email protected]