৩০তম বিসিএসের কর্মকর্তা গোলাম সাকলায়েন গোয়েন্দা পুলিশের গুলশান বিভাগে কর্মরত। পহেলা আগস্ট রাত আটটার দিকে চিত্রনায়িকা পরীমনিকে নিয়ে নিজ বাসায় অবস্থান করেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার গোলাম মোহাম্মদ সাকলায়েন। ওই দিনের সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, রাত আটটার দিকে পরীমনি নিজের হ্যারিয়ার গাড়িতে করে রাজারবাগের মধুমতির ফ্ল্যাটে যান।
ওই ভবনের ১০ তলায় সাকলায়েনের সরকারি বাসভবন। সাকলায়েন নিজে নেমে এসে রিসিভ করেন পরীমনিকে। এর কিছুক্ষণ পর সাকলায়েনের বাসায় প্রবেশ করেন পরীমনির খালাতো বোন ও তার স্বামী। পরে রাত দুইটার দিকে পরীমনিসহ তিনজনই বের হয়ে যান বাসা থেকে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ১৩ জুন উত্তরা বোট ক্লাবে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে ব্যবসায়ী নাসির ইউ মাহমুদের বিরুদ্ধে মামলা করেন পরীমনি। পরদিন উত্তরা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশের গুলশান বিভাগ। ওই সময় পরীমনিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হয় গোয়েন্দা কার্যালয়ে। তখনই পরীর সঙ্গে প্রথম পরিচয় সাকলায়েনের। এরপর সম্পর্কের গভীরতা।
গোয়েন্দা পুলিশের একটি সূত্র বলছে, সেই থেকে ধীরে ধীরে প্রেমের সর্ম্পক গড়ে ওঠে পুলিশ কর্মকর্তা ও চিত্রনায়িকার। প্রায়ই রাতে গাড়ি নিয়ে ঘুরতে বের হতেন তারা। কখনো হাতিরঝিল। কখনো অন্য কোনো জায়গায়। মাঝে মাঝে সাকলায়েন যেতেন পরীমনির বাসায়।
সম্প্রতি র্যাবের হাতে পরীমনি গ্রেপ্তার হলে বনানী থানায় করা মাদক মামলার তদন্তভার পায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। তখন পরীকে জিজ্ঞাসাবাদে বের হয়ে আসে সাকলায়েনকাণ্ড। পরীমনির দাবির প্রেক্ষিতে সংগ্রহ করা হয় সাকলায়েনের সরকারি কোয়ার্টারের সিসিটিভি ফুটেজ। নিশ্চিত হওয়া যায় পরিমনির দাবির সত্যতা।
এরপরই নড়েচড়ে বসে পুলিশ সদর দপ্তর। সদর দপ্তরের নির্দেশে গঠন করা হয় তদন্ত কমিটি। সিআইডির একজন বিশেষ পুলিশ সুপারকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে পুরো বিষয় খুজেঁ বের করার।
এ প্রসঙ্গে সিআইডির ডিআইজি শেখ ওমর ফারুক শনিবার (৭ আগস্ট) সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘পরীমনির সঙ্গে এডিসি গোলাম সাকলায়েনের সম্পর্কের বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়।’
এদিকে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার বলেন, ‘পরীমনিকে নিয়ে বাসায় অবস্থান করা অনৈতিক কাজ। এ বিষয়ে তদন্ত সাপেক্ষে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
গোলাম মোহাম্মদ সাকলায়েন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের চৌকষ কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত। ৩০ বিসিএস ক্যাডারের এই কর্মকর্তা নিজ ব্যাচের প্রথম স্থান অধিকারকারী। পেশা জীবনেও অনেক দুর্ধর্ষ অভিযানে নেতৃত্ব দিয়েছেন। মাদকবিরোধী অভিযানে রয়েছে তার ব্যাপক সাফল্য। পেশাগত কাজের স্বীকৃতি হিসেবে পেয়েছেন পিপিএম পদক।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষাজীবনেও রেখেছেন কৃতিত্বের সাক্ষর। এ রকম একজন দক্ষ ও মেধাবী কর্মকর্তার নৈতিকস্খলেনের বিষয়টি অবাক করেছে তার সহকর্মীদেরও।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছিুক তার ব্যাচের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘প্রশিক্ষণ থেকে শুরু করে পেশাজীবন সব জায়গাতেই তাকে অনুকরণীয় মনে করতাম আমরা। পেশা-দক্ষতার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও সুনজরে দেখতেন তাকে। হয়ত এই সুযোগটাই নিয়েছেন সাকলায়েন।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সাবেক পুলিশ প্রধান এ কে এম শহীদুল হক বলেন, ‘যেহেতু তদন্ত চলছে তাই বিস্তারিত মন্তব্য করা যাবে না। তবে একজন পুলিশ কর্মকর্তার এমন কাণ্ড পেশাদারিত্ব এবং নৈতিকতা দুই দিক থেকেই গর্হিত।’
তথ্যসূত্র: সময় নিউজ টিভি।
প্রকাশক : আরিফ মাহমুদ, প্রধান সম্পাদক : কাজী আবু ইমরান, সম্পাদক : আবু রায়হান মিকাঈল
ফেসবুক পেইজঃ facebook.com/kalaroanewsofficial, ই-মেইল : [email protected]