২০০৮ সালের সেপ্টেম্বর থেকে যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনে নির্বাসিত জীবন যাপন করছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বিবিসি বাংলাকে একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। দীর্ঘ ১৭ বছর পর এই প্রথম কোনো গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিলেন তারেক রহমান। এই দীর্ঘ সময়ে বিবিসি বাংলার নানা প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান।
তারেক রহমানের এই সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বিবিসি বাংলার সম্পাদক মীর সাব্বির ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক কাদির কল্লোল। ৪৪ মিনিটের বেশি এই সাক্ষাৎকারটির দ্বিতীয় পর্ব আজ মঙ্গলবার সকালে প্রকাশ করেছে বিবিসি বাংলা।
সংস্কারের কিছু বিষয়ে দেখা যাচ্ছে যে, বিএনপির সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীসহ বিভিন্ন দলের কিছুটা মতপার্থক্য বা মতবিরোধ হচ্ছে। যেমন, এক ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী, সংসদ নেতা বা দলের প্রধান থাকতে পারবেন না, এরকম একটা প্রস্তাব এসেছে। যেখানে বিএনপি নোট অফ ডিসেন্ট দিয়েছে। যদি এক ব্যক্তি তিন পদে একই সঙ্গে থাকেন, সেটা স্বৈরতান্ত্রিক একটা ব্যবস্থা তৈরির সুযোগ দেয় কিনা?
বিবিসি বাংলার এমন প্রশ্নের জবাবে তারেক রহমান বলেছেন, সকলের প্রতি সম্মান রেখেই বলছি, এই যে বাংলাদেশে রাষ্ট্র মেরামতের ক্ষেত্রে বিভিন্ন বিষয়ে সংস্কার প্রয়োজন। একজন ব্যক্তি দুবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবেন না, থাকবেন না। এরকম আরো যে বিষয়গুলো আছে, এ গুলো বাংলাদেশে যখন স্বৈরাচার ছিল তাদের মুখের উপরে, তাদের চোখের দিকে চোখ রেখে আমরাই বলেছিলাম।
এখন হয়তো অনেকে সংস্কারের কথা বলছেন। সেদিন কিন্তু সংস্কারের ‘স’-ও তারা বলেননি। তারপরেও সবার প্রতি পরিপূর্ণ শ্রদ্ধা রেখে আমি বলতে চাই যে, বিএনপি ‘নোট অফ ডিসেন্ট’ দিলে সেটি সমস্যা, অর্থাৎ বিএনপিকে এগ্রি (সম্মত) করতে হবে সবার সঙ্গে, তাহলে ঠিক আছে। কিন্তু বিএনপি যদি কোনোটার সঙ্গে একমত না হয়, তাহলে বেঠিক। এটি তো গণতন্ত্র হলো না।
মানে, আমাকে অন্যের সঙ্গে একমত হতে হবে, তাহলে গণতন্ত্র। আমি যদি অন্যের সঙ্গে দ্বিমত করি, তাহলে গণতন্ত্র না। এটি কেমন গণতন্ত্র? কারণ গণতন্ত্রের মানেই তো হচ্ছে, বিভিন্ন মতামত থাকবে। আমরা অনেক ব্যাপারেই একমত হব হয়তো। সব ব্যাপারে একমত হবো না, কিছু ব্যাপারে হয়তো দ্বিমত থাকতেই পারে, এটাই তো গণতন্ত্র, এটাই তো এসেন্স অব গণতন্ত্র।
আমরা তো কোনো হাইড অ্যান্ড সিক করছি না। আমি যেটা মনে করছি যে ভাই আমি মনে করছি যেটা আমার দৃষ্টিতে ঠিক না, আমি বলছি ঠিক না।
কিন্তু দু বছর আগে ২০২৩ সালে আপনারা ৩১ দফা দিয়েছেন। সেই ৩১ দফাতেই আপনারা সংস্কারের যেসব বিষয় এনেছেন, সেখানে রাষ্ট্রপতি- প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য আনার কথা বলেছেন। তাহলে এই বিষয়গুলোতে আপত্তি কেন?
জবাবে তারেক রহমান বলেন—না, আমরা যেটাতে বলেছিলাম, আমরা সেখানে এখনো আছি। যতটুকু ভারসাম্য হওয়া উচিত, যে যে বিষয়ে যতটুকু বিবেচনা করা উচিত, আমরা সে বিষয়ের মধ্যে এখনো কমবেশি আছি। আমাদের অবস্থান থেকে তো আমরা অবস্থান পরিবর্তন করিনি।
কিন্তু মূল যে বিষয়গুলো, যেমন যেটা বড় বিরোধ হিসেবে আসছে, বড় মতপার্থক্য হিসেবে আসছে যে, এক ব্যক্তির তিন পদে একসঙ্গে থাকা সেখানেই তো আপত্তিটা থাকছে বিএনপির?
উত্তরে তিনি বলেন, না, আমরা তো তখনো বলিনি যে, এক ব্যক্তি তিন পদে থাকতে পারবেন না। এটা অন্যরা কেউ বলেছেন যে, এক ব্যক্তি তিন পদে থাকতে পারবেন না। আমরা মনে করি না যে, এটাতে স্বৈরাচারী হওয়ার কোনো কারণ আছে।
আমরা তো দেখেছি স্বৈরাচারের সময়ও এবং তার আগে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ব্যবস্থা ছিল। কিন্তু তাদের টু থার্ড মেজরিটি ছিল। টু থার্ড মেজরিটি ২০০৮ সালে তারা নিয়েছিলেন। তারা তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা রাখেনি।
এককভাবে সরকার গঠনের অবস্থানে আমরা আছি
এককভাবে সরকার গঠনের অবস্থানে আমরা আছি
২০০১ সালে তো বিএনপিরও টু থার্ড মেজরিটি ছিল, বিএনপি তো চেঞ্জ করেনি। যেহেতু জনগণ মনে করেন যে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার থাকলে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে; বিএনপি টু থার্ড মেজরিটি থাকার পরেও তো বিএনপি চেঞ্জ করেনি।
কাজেই এক ব্যক্তির হাতে থাকলেই যে, স্বৈরাচর হবে তা নয়। এটি নির্ভর করে ব্যক্তি টু ব্যক্তি, শুধু আইন চেঞ্জ করলেই সবকিছু সঠিক হয়ে যাবে না।
প্রকাশক : আরিফ মাহমুদ, প্রধান সম্পাদক : কাজী আবু ইমরান, সম্পাদক : আবু রায়হান মিকাঈল
ফেসবুক পেইজঃ facebook.com/kalaroanewsofficial, ই-মেইল : [email protected]