সাকিবের নিরাপত্তা-শর্ত ইস্যুতে যা বললেন ক্রীড়া উপদেষ্টা
দেশের মাটিতে নিজের ক্যারিয়ারের শেষ টেস্ট খেলতে চান বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে বড় তারকা সাকিব আল হাসান। টাইগার ক্রিকেটের দীর্ঘ পথচলায় মাঠ থেকে বিদায়ের নজির খুব একটা নেই। সাকিব আল হাসান অবশ্য আগেই জানিয়ে দিয়েছেন, সুযোগ পেলে দেশের মাটিতেই নিজের শেষ টেস্ট খেলতে তিনি চান।
কিন্তু সাকিবের জন্য বিষয়টি খুব একটা সহজ না তা তিনি নিজেও জানেন। বিশেষ করে চলতি বছরের জানুয়ারিতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পরেই সাধারণের চোখে অবস্থান বদলেছে সাকিবের। ৫ই আগস্টের ক্ষমতার দৃশ্যপট পরিবর্তনের পর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের অনেকেই আক্রান্ত হয়েছেন প্রতিপক্ষের হাতে।
এরইমাঝে আদাবরে গার্মেন্টসকর্মী রুবেলের হত্যাকান্ডের ঘটনায় মামলা হয়েছে সাকিবের নামে। সেই সূত্রে সাকিব জানিয়েছিলেন, দেশে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার নিশ্চয়তা পেলেই অক্টোবরে মিরপুরে নিজের শেষ টেস্ট খেলতে নামবেন তিনি। শুধু তাইই নয়, খেলা শেষ করে নিরাপদে দেশ ছাড়ার নিশ্চয়তাটাও চেয়েছেন তিনি।
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড অবশ্য সাকিবের এমন আবেদন ফিরিয়ে দিয়েছে। বোর্ড সভাপতি পুরো ব্যাপারটিই ঠেলে দিয়েছেন সরকারের কোর্টে। এবার সাকিবের নিরাপত্তা ইস্যুতে কথা বলেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ।
রোববার শ্রমিক কল্যাণ তহবিলে গ্রামীণফোনের লভ্যাংশের চেক প্রদান অনুষ্ঠানে ক্রীড়া উপদেষ্টা বলেন, ‘সাকিব আল হাসানের পরিচয় দুটি, এটি মনে রাখতে হবে। তিনি একজন খেলোয়াড়। সে হিসেবে তার যতটা নিরাপত্তা দেয়া দরকার সেটা দেয়া হবে। অপরদিকে তিনি একজন রাজনীতিবিদও। আওয়ামী লীগের হয়ে রাজনীতি করেছেন। মানুষের মধ্যে তো এই দুই পরিচয় নিয়েই মিশ্র প্রতিক্রিয়া আছে। এখন খেলোয়াড় হিসেবে আমাদের একজন খেলোয়াড়কে যতটুকু নিরাপত্তা দেয়ার দরকার ততটুকু আমরা দেবো।’
এসময় সাকিবের প্রতি অনেকটা শর্ত আরোপের সুরেই উপদেষ্টা বলেন, রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে জনগণের মধ্যে যদি ক্ষোভ থাকে, তাহলে নিজেকেই তার সংশোধন করতে হবে। নিজের রাজনৈতিক অবস্থান সাকিবকেই স্পষ্ট করতে হবে। এসময় আসিফ মাহমুদ যোগ করেন, ‘রাষ্ট্রের জায়গা থেকে রাষ্ট্র প্রত্যেক নাগরিককেই নিরাপত্তা দিতে বাধ্য এবং সেটা আমরা অবশ্যই করব।’
সাকিবকে খেলোয়াড় হিসেবে নিরাপত্তার ব্যাপারে আশ্বস্ত করার পরেই চলমান মামলা নিয়ে কথা বলেছেন আসিফ মাহমুদ, ‘তার বিরুদ্ধে যে হত্যা মামলা হয়েছে, সে বিষয়ে আমরা ইতোমধ্যেই বলেছি এবং আইন মন্ত্রণালয়ও বলেছে, তদন্তে সংশ্লিষ্টতা না থাকলে প্রাথমিকভাবেই নাম বাদ দেয়া হবে।’
উপদেষ্টা আসিফ বলেন, তার (সাকিব আল হাসান) রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে জনগণের মধ্যে যদি ক্ষোভ থাকে, তাহলে…। মনে করুন, আমার নিরাপত্তার জন্য পাঁচজন পুলিশ কনস্টেবল এবং একজন গানম্যান থাকেন। আমার উপরে যদি দেশের ১৬ কোটি জনগণের ক্ষোভ থাকে, তাহলে তারা আমাকে কী নিরাপত্তা দেবেন?
তিনি বলেন, ‘জনগণের যদি কোথাও ক্ষোভ থাকে, তাহলে সেটা আমাকে রিডিউস করতে (কমাতে) হবে আমার কথা দিয়ে। আমার মনে হয়, তার নিজের জায়গা পরিষ্কার করা প্রয়োজন, রাজনৈতিক জায়গা থেকে, তার যে রাজনৈতিক অবস্থান, তা নিয়ে কথা বলা প্রয়োজন। অলরেডি মাশরাফি বিন মুর্তজা কথা বলেছেন।’
এসময় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কথাও টেনে আনেন ক্রীড়া উপদেষ্টা, ‘শেখ হাসিনাকেও নিরাপত্তা দেওয়া যায়নি, তাকে দেশ ছেড়ে পালাতে হয়েছে। সে জায়গায় রাজনৈতিক বিষয়টি পরিষ্কার করা প্রয়োজন বলে মনে করি। প্রত্যেক খেলোয়াড়কে নিরাপত্তা দেওয়াই আমাদের দায়িত্ব এবং সে দায়িত্ব আমরা পালন করি।’
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)