গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ভারতের আন্দামান-নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের কাছাকাছি এলাকার সাগরে নৌকায় ভাসতে থাকা নারী ও শিশুসহ প্রায় ২০০ রোহিঙ্গাকে বাঁচানোর আহ্বান জানিয়েছে দক্ষিণপূর্ব এশীয় দেশগুলোর জোট আসিয়ান। খাবার ও পানির অভাবে সাগরে প্রাণ হারানোর শঙ্কার মুখোমুখি হওয়া রোহিঙ্গাদের উদ্ধারে ভারত মহাসাগরের উপকূলবর্তী বিভিন্ন দেশের সরকারের প্রতি জানিয়েছে আঞ্চলিক এই জোট।
কক্সবাজারের টেকনাফ উপকূল থেকে মালয়েশিয়াগামী একটি নৌকার ওই যাত্রীদের সবাই রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে ছিলেন।
মাঝসাগরে বিপদগ্রস্ত এই রোহিঙ্গাদের বাঁচাতে ভারত মহাসাগরের উপকূলবর্তী চার দেশ থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও ভারতকে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে আসিয়ানের মানবাধিকার বিষয়ক সংস্থা আসিয়ান পার্লামেন্টারিয়ানস অব হিউম্যান রাইটস (এপিএইচআর)। মঙ্গলবার সংস্থাটির পক্ষ থেকে একটি বিবৃতিও দেওয়া হয়েছে।
ভারতের সংবাদমাধ্যম দ্য কুইন্টের বরাত দিয়ে আলজাজিরা বলেছে, গত ১ ডিসেম্বর বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলার টেকনাফ থেকে নারী ও শিশুসহ ২০০ রোহিঙ্গাকে নিয়ে মালয়েশিয়ার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেছিল ইঞ্জিনচালিত নৌকাটি। কিন্তু মালাক্কা প্রণালী পার হয়ে আন্দামান-নিকোবর দ্বীপুঞ্জের কাছাকাছি আসার পর সেটির ইঞ্জিন বিকল হয়ে যায়।
গত তিন সপ্তাহে সেই ইঞ্জিন মেরামত করতে পারেননি নৌকার মাঝিরা। এদিকে টানা ২০ দিন সমুদ্রে ভাসতে থাকা নৌকাটির খাবার ও পানির মজুত শেষ হয়ে গেছে কয়েকদিন আগেই। ক্ষুধা ও পানিশূন্যতায় ইতোমধ্যে কয়েকজন যাত্রীর মৃত্যুও হয়েছে।
পরিস্থিতি বেগতিক দেখে রোববার নৌকাটির প্রধান মাঝি তার আত্মীয় এবং কক্সবাজার রোহিঙ্গা শিবিরে আশ্রিত শরণার্থী মোহাম্মদ খান রেজওয়ানের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে বলেন, ‘আমরা এখানে মারা যাচ্ছি, আমাদের বাঁচান।’
পরে মোহাম্মদ খান রেজওয়ান শরণার্থী শিবির কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে সাগরে ভাসতে থাকা রোঙ্গিাদের উদ্ধারে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানান।
দ্য প্রিন্টকে রেজওয়ান বলেন, ‘সেখানকার পরিস্থিতি খুবই উদ্বেগজনক। তাদের খাবার-পানি সব ফুরিয়ে গেছে।’
এপিএইচআরের বোর্ড সদস্য ইভা সুন্দারি বিবৃতিতে বলেন, ‘২০০ মানুষ নিয়ে দিনের পর দিন ধরে একটি নৌকা সমুদ্রে ভাসছে এবং খাবার ও পানির অভাবে সেই নৌকার লোকজন মৃত্যুর প্রহর গুণছে— ন্যূনতম বিবেকসম্পন্ন লোকজনের জন্যও এটা অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক একটি ব্যাপার।’
‘এই ক্ষুধার্ত-নিরাশ্রয় লোকজনদের অবহেলা করা মনুষ্যত্বকে অপমান করার শামিল।’
এদিকে, জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের নৌযাত্রার হার নাটকীয়ভাবে বেড়েছে। গত বছর মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার উদ্দেশে বাংলাদেশ থেকে যাত্রা করেছিলেন ২২১ জন রোহিঙ্গা। আর চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত সেই সংখ্যা ১ হাজার ৯২০ জনে পৌঁছেছে।
প্রকাশক : আরিফ মাহমুদ, প্রধান সম্পাদক : কাজী আবু ইমরান, সম্পাদক : আবু রায়হান মিকাঈল
ফেসবুক পেইজঃ facebook.com/kalaroanewsofficial, ই-মেইল : [email protected]