সাজাপ্রাপ্ত ৯ আসামীকে যেতে হলো না কারাগারে, শর্ত পূরণ করায় মুক্তি


গৌর বিশ্বাস, স্কুলে যাওয়ার সুযোগ হয়নি কখনো। জীবনের একটা বিশেষ মূহুর্তে ক্ষনিকের ভুলে জড়িয়েছিলেন মাদকের জগতে। ফলে তার বিরুদ্ধে হয় মাদকের মামলা। বিচারিক আদালতের রায়ে তাকে ৮মাসের সশ্রম কারাদন্ড ও ২হাজার টাকা জরিমানা দন্ডে দন্ডিত করা হয়।
গৌর বিশ্বাসের মতই সাক্ষ্য প্রমানে দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় আদালত কর্তৃক বিভিন্ন মেয়াদে সাজা পেয়েছে জিল্লুর রহমান, আবুল কালাম আজাদ, মুন্না বিশ্বাস, আল আমিন মোল্যা, আজাদ কাজী, মনু মোল্যা, শাওন শিকদার, হেদায়েত মোল্যা ও আতিকুর রহমান।
এরা সকলেই নিজ নিজ পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। মাদকের করালগ্রাসে জীবনের দীর্ঘ সময় কেটেছে কোর্টের বারান্দায়, খরচ হয়েছে অর্থ। যখন নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে তখন তারা সাজাপ্রাপ্ত আসামী।
তবে কারাগারে যেতে হয়নি গৌর বিশ্বাসকে। কারাগারে যেতে হয়নি জিল্লুর রহমান বা আজাদদের।
দ্যা প্রবেশন অব অফেন্ডার অর্ডিন্যান্সের ৫ধারায় আদালত তাদের দন্ড স্থগিত রেখে জেলা প্রবেশন কর্মকর্তার তত্বাবধানে প্রদান করেন। তারা তাদের আপন গৃহে পরিবারের সাহচর্যে অন্যরকম সাজা ভোগ করেছেন। শর্ত ছিল তারা মাদক বা বেআইনী কোন কিছুতে জড়াবেন না, পরিবারের সদস্যদের সাথে ভালো ব্যবহার করবেন।
গৌর বিশ্বাস জীবনে কখনো লেখাপড়া করার সুযোগ পাননি। আদালত তাকে প্রবেশনের শর্ত স্বরূপ লেখাপড়া শিখতে বলেন।
এছাড়া মুন্না বিশ্বাস ও কিছু প্রবেশনারদের ঐতিহাসিক ৭মার্চ নিয়ে রচিত কবিতা, কবি নির্মলেন্দু গুণ রচিত কবিতা “স্বাধীনতা এই শব্দটি কিভাবে আমাদের হল” মুখস্থ করতে দেন।
যে গৌর একসময় মাদক নিত, সে এখন ভ্যান চালিয়ে জীবীকা নির্বাহ করেন।
গৌর ও জিল্লুরদের মাদকের হাত এখন শ্রমিকের হাত। সেই হাত দিয়েই কঠোর পরিশ্রম করে আজ তারা বেঁচে আছেন।
সাজাপ্রাপ্ত এসকল প্রবেশনাররা প্রবেশনের সকল শর্ত সুচারুরুপে পালন করায় প্রবেশন কর্মকর্তা তাদের মুক্তির ব্যাপারে সুপারিশ করেন।
নড়াইলের জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক আমাতুল মোর্শেদা বুধবার (২৯ ডিসেম্বর) বিকেলে প্রবেশন কর্মকর্তার রিপোর্ট ও সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে তাদের চুড়ান্ত মুক্তির আদেশ দেন।
আদালতের বেঞ্চ সহকারি আবুল কালাম আজাদ এ বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, এ আদালত থেকে ইতোপূর্বে ৬৬জন আসামীকে প্রবেশনে প্রেরণ করা হয়েছে, যাদের মধ্যে প্রবেশনের শর্ত নিষ্ঠার সাথে পালন করায় ৪০জন প্রবেশনারকে মুক্তি দেয়া হয়েছে।
এসময় তাদের ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান- জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ্যাডভোকেট উত্তম কুমার ঘোষ, অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর সঞ্জীব কুমার বসু, জেলা প্রবেশন কর্মকর্তা বাপ্পী কুমার সাহা।
আদালত থেকে ফুল হাতে বের হওয়ার সময় প্রবেশনারদের অনেকেরই চোখে ছিল আনন্দ অশ্রু। কারণ এ ছিল তাদের কাছে অন্যরকম মুক্তি।

কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
