ফারুক রহমান, সাতক্ষীরা: 'আত্মনিয়ন্ত্রাধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে তরুণরাই মুল শক্তি'-শ্লোগানকে সামনে রেখে ৯ আগস্ট বুধবার বিকাল ৪টায় সাতক্ষীরা শহরের ম্যানগ্রোভ সভাঘরে স্থানীয় সংগঠন স্বদেশ, উত্তরণ, সুশীলন, সুন্দরবন ফাউন্ডেশন, সৃজনী মহিলা লোককেন্দ্র, অর্জন ফাউন্ডেশন ও আদিবাসী বিষয়ক জাতীয় কোয়ালিশনের আয়োজনে আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস উপলক্ষে রালি ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মানবাধিকারকর্মী মাধব চন্দ্র দত্তের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতিত্ব করেন শিক্ষাবিদ আবদুল হামিদ।
অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এড আবুল কালাম আজাদ, পবিত্র মোহস দাস, জেলা নাগরিক কমিটির আহবায়ক আজাদ হোসন বেলাল। স্বাগত বক্তব্য রাখেন এড, মুনিরুদ্দীন।
অন্যান্যদের মধ্য বক্তব্য রাখেন অমল মাহাতো, আফজাল হোসেন, মহুয়া মঞ্জুরী, ল স্টুডেন্ট ফোরামের নাসির উদ্দিন, প্রভাষক সদানন্দ দাস, অধ্যাপক ইদ্রিস আলী, দুলাল চন্দ্র দাশ ও যুব প্রতিনিধি রানা প্রমুখ।
সভায় বক্তারা বলেন, প্রতি বছরের ৯ আগস্ট তারিখটি আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস হিসেবে সারাবিশ্বে পালিত হয়ে থাকে। জাতিসংঘ ঘোষিত এ দিবসটি ১৯৯৪ সাল থেকে সারাবিশ্বের প্রায় ৩০ কোটি আদিবাসী পালন করে। ১৯৯২ সালে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের উন্নয়ন ও সংরক্ষণ উপ-কমিশনের কর্মকর্তারা তাদের প্রথম সভায় আদিবাসী দিবস পালনের জন্য ৯ আগস্টকে বেছে নেয়।
আদিবাসী জনগণের মানবাধিকার, পরিবেশ উন্নয়ন, শিক্ষা ও সংস্কৃতি সম্পর্কিত বিরাজমান বিভিন্ন সমস্যা নিরসনের লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সুদৃঢ় করা ও গণসচেতনতা সৃষ্টি করাই বিশ্ব আদিবাসী দশক, বর্ষ ও দিবস পালনের মূল উদ্দেশ্য। বিশ্বের প্রায় ৭০টি দেশে প্রায় ৩০ কোটির অধিক আদিবাসী জনগণ বসবাস করে। এই অধিকারবঞ্চিত আদিবাসী জনগোষ্ঠীর প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করতে জাতিসংঘ প্রথমবারের মতো ১৯৯৩ সালকে 'আদিবাসী বর্ষ' ঘোষণা করে। পরের বছর (১৯৯৪) জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে প্রতিবছর '৯ আগস্ট'কে 'বিশ্ব আদিবাসী দিবস' হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
এ ছাড়া জাতিসংঘ ১৯৯৫-২০০৪ এবং ২০০৫-২০১৪ সালকে যথাক্রমে প্রথম ও দ্বিতীয় আদিবাসী দশক ঘোষণা করে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের আদিবাসীরাও দিবসটি বেসরকারিভাবে নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে পালন করা হয়। আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকারসহ আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদান, পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি যথাযথভাবে বাস্তবায়ন, আদিবাসীদের জন্য সামাজিক ও অর্থনৈতিক নীতিমালা প্রণয়ন, পৃথক ভূমি কমিশন গঠন, আইএলও কনভেনশন পুরোপুরি বাস্তবায়ন, ইউনিয়ন, উপজেলা ও জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত আসন রাখা ইত্যাদি দাবিকে সামনে রেখে প্রতিবছর এই দেশে বসবাসকারী ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীগুলো আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস ফালন করে। আদিবাসী দিবসে এবারের জাতীসংঘ ঘোষনায় তারুণ্যের অগ্রযাত্রার
প্রতি বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। কারন,তরুনরাই পরিবর্তনকামী, তারাই অধিকার অর্জন ও সমাজ পরিবর্তনে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে। দেশ ও জাতি গঠনে তরুণদের সৃষ্টিশীল ভুমিকা তাদের কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছে দিবে এই আকাঙ্খা থেকেই এবারের আদিবাসী দিবস পালিত হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবসে' ১১ দফা দাবি :
১. আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকারসহ 'আদিবাসী'দের সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিতে হবে ও বাদপড়া আদিবাসীদের গেজেটে যুক্ত করতে হবে;
২. 'আদিবাসী'দের রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক ও ভূমির অধিকার নিশ্চিত করতে হবে;
৩. 'আদিবাসী' নারীর অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে;
৪. পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। এ লক্ষ্যে সময়সূচিভিত্তিক রোডম্যাপ ঘোষণা করতে হবে। ভূমি কমিশন আইন অবিলম্বে কার্যকর করতে হবে;
৫. সমতল অঞ্চলের 'আদিবাসী'দের পৃথক মন্ত্রণালয় ও ভূমি কমিশন গঠন করতে হবে;
৬. 'আদিবাসী'দের ভূমিতে তাদের স্বাধীন পূর্বসম্মতি ছাড়া ইকোপার্ক, সামাজিক বনায়ন, টুরিজম, ইপিজেড বা অন্য কোনো প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা চলবে না;
৭. 'আদিবাসী'দের ওপর সব নিপীড়ন-নির্যাতন বন্ধ করাসহ সব মিথ্যা মামলাঅবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ২০০৭ সালে গৃহীত 'আদিবাসী' বিষয়ক ঘোষণাপত্র ও আইএলও ১৬৯ নম্বর কনভেনশন অনুসমর্থন ও আইএলও কনভেনশন ১০৭ বাস্তবায়ন করতে হবে;
৯. জাতীয় সংসদে 'আদিবাসী'দের জন্য বিশেষ কোটা সংরক্ষণ বা আসন বরাদ্দ রাখতে হবে;
১০. সরকারি প্রথম শ্রেণিতে পূর্বের মতো 'আদিবাসী কোটা' সংরক্ষণ করতে হবে
এবং অন্যান্য চাকরিসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি কোটা যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে;
১১. রাষ্ট্রীয়ভাবে 'আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস' উদযাপন করতে হবে।
প্রকাশক : আরিফ মাহমুদ, প্রধান সম্পাদক : কাজী আবু ইমরান, সম্পাদক : আবু রায়হান মিকাঈল
ফেসবুক পেইজঃ facebook.com/kalaroanewsofficial, ই-মেইল : [email protected]