বাংলাদেশে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী এখনও সঠিকভাবে মানবাধিকার সম্পর্কে জানে না। তাদেরকে সচেতন করতে হবে। শিক্ষকদের মধ্যে মূল্যবোধ আরও বৃদ্ধি করতে হবে। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে আরও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। দেশের বিভিন্ন স্থানে ঘটে যাওয়া সব ঘটনা সংবাদপত্রে প্রকাশিত হচ্ছে না। প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর সদস্যরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারনে সৃষ্ট অভিঘাতে প্রাকৃতিক দূর্যোগে উপকূলীয়া অঞ্চলের মানুষ জলবায়ুু উদ্বাস্তু হয়ে বাস্তুচ্যুত হওয়ায় তাদের মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে।
মহামারী করোনা ভাইরাসে বাংলাদেশে শিশুবিবাহ বেড়েছে। সাতক্ষীরায় বর্তমানে বাল্যবিবাহের হার ৭৭.০৭ শতাংশ। সরকার চেষ্টা করছে দরিদ্ররা যাতে ন্যায় বিচার পায়। জেলা পর্যায়ে লিগ্যাল এইড অফিসার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। মানবাধিকার পারিবারিকভাবে অনুশীলন করতে হবে। (১০ ডিসেম্বর) শনিবার শহরের কাটিয়াা টাউন বাজারস্থ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (খামারবাডি) হলরুমে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
‘সমতা, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা ও মানবাধিকার সুরক্ষায় আওয়াজ তুলুন’-শ্লোগানকে সামনে রেখে সিএসও এইচআরডি কোয়ালিশন, সাতক্ষীরা ও স্বদেশ’র আয়োজনে ইউএনডিপির সহযোগিতায় আয়োজিত আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভায় সিএসও-এইচআরডি কোয়ালিশন, সাতক্ষীরার সদস্য সচিব মানবাধিকারকর্মী মাধব চন্দ্র দত্তের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (খামারবাডি) উপ-পরিচালক কৃষিবিদ ড. মোঃ জামাল উদ্দীন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা সুভাষ সরকার, শিক্ষাবিদ অধ্যক্ষ আবদুল হামিদের, মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের আহবায়ক ও সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি আবুল কালাম আজাদ, জেলা নাগরিক কমিটির আহবায়ক আনিসুর রহিম, আশাশুনি উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান অসীম কুমার চক্রবর্তী, সুশীলনের উপ-পরিচালক জি এম মনিরুজ্জামান, কাটিয়া পুলিশ ফাঁিডর পরিদর্শক মিজানুর রহমান। আলোচনা সভায় প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সাংবাদিক ও উন্নয়নকর্মী ফারুক রহমান।
আলোচনা সভায় মুক্ত আলোচনায় অংশ নেয় বরসা'র সহকারী পরিচালক নাজমুল আলম মুন্না, উত্তরণের আইন কর্মকর্তা এডভোকেট মনিরউদ্দীন, ওয়ার্ল্ড ভিশনের জেলা সমন্বয়কারী প্রতিভা বিকাশ সরকার, সাংবাদিক রঘুনাথ খাঁ, সিডোর নির্বাহী পরিচালক শ্যামল কুমার বিশ্বাস, প্রতিবন্ধী উন্নয়ন সংগঠনের আবুল কালাম, হেড'র নির্বাহী পরিচালক লুইস রানা গাইন, জেলা বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ কমিটির প্রশাসনিক কর্মকর্তা সাকিবুর রহমান বাবলা, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ সাতক্ষীরা জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক জ্যোস্না দত্ত, নারী অধিকারকর্মী ও সিএসও এইচআরডি কোয়ালিশন, সাতক্ষীরার আহবায়ক মরিয়ম মান্নান প্রমূখ।
সভায় বক্তারা বলেন, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ কর্তৃক ১০ ডিসেম্বর ১৯৪৮ সাল থেকে দিবসটি উদযাপন করা হয়। সার্বজনীন মানবাধিকার সংক্রান্ত ঘোষণাকে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এ তারিখ নির্ধারণ করা হয়। সাম্য, ন্যায়বিচার, গণতন্ত্র ও সুশাসন নিশ্চিত করার অন্যতম হাতিয়ার হচ্ছে মানবাধিকার।
মানবাধিকার নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে সম্ভব একটি ন্যায়বিচার ভিত্তিক সমাজগঠন যা সমাজের প্রত্যেকটি মানুষের অধিকার সংরক্ষন করবে। এই অধিকার বলতে আমরা বোঝাতে চাই বেঁচে থাকার অধিকার, খাদ্য অধিকার, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের অধিকার, শান্তি ও সাম্যের অধিকার, গনতন্ত্র ও সুশাসনের অধিকার, মান ও সম্মানের অধিকার, নারী অধিকার, মত প্রকাশের অধিকার, সুসম বণ্টন এর অধিকার এবং সার্বিকভাবে সম অধিকার ভিত্তিক একটি সমাজে শান্তিময় জীবন যাপনের অধিকার। ১৯৯২ সালে জাতিসংঘ ঘোষণাপত্রে জাতীয়তা অথবা গোষ্ঠীগত, ধর্মীয় এবং ভাষাগত সংখ্যালঘুদের অধিকারে বলা হয়েছে জাতিসংঘ ঘোষিত সার্বজনীনন মানবাধিকার রক্ষাকবচে বলা হয়েছে-জাতি বা গোষ্ঠীগত, ধর্মীয় এবং ভাষাগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অধীনে যে কোন ব্যক্তির সম্পুর্নভাবে নিজস্ব সংস্কৃতি পালন বা উপভোগ এবং নিজস্ব সংঘ প্রতিষ্ঠা ও রক্ষণাবেক্ষণের অধিকার রয়েছে। কোনরূপ বৈষম্য ছাড়া সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের যে কোন ব্যক্তির একাকী অথবা সম্প্রদায়ের অন্য সদস্যদের সঙ্গে মিলে নিজেদের অধিকার চর্চা করার অধিকার রয়েছে।
সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের যে কোন ব্যক্তি যেন অবাধে সবধরনের মানবাধিকার মৌলিক স্বাধীনতার চর্চা করতে পারে। রাষ্ট্র সেই নিশ্চয়তার বিধান করবে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকেরা যেন তাদের সংস্কৃতি, ভাষা, ধর্ম, ঐতিহ্য এবং প্রথার বিকাশ ঘটাতে পারে এবং নিজেদের বৈশিষ্ট্য প্রকাশ করতে পারে। রাষ্ট্র সে লক্ষ্যে অনুকুল পরিবেশ গড়ে তুলবে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতিটি মানুষ যেন তাদের মাতৃভাষা শিক্ষার পর্যাপ্ত সুযোগসুবিধা পায় অথবা মাতৃভাষার নিদের্শনা লাভের সুযোগ পায়। রাষ্ট্র তার জন্য প্রয়োজনীয় সকল উদ্যোগ গ্রহন করবে।
সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকেরা যেন দেশে অর্থনৈতিক বিকাশ এবং উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় সম্পূর্নভাবে অংশ নিতে পারে। রাষ্ট্র তার যথাযথ উপায় নিশ্চিত করবে। মানবাধিকার সার্বজনীন ঘোষণাপত্র অনুযায়ী মানব পরিবারের সকল সদস্যের সমান ও অবিচ্ছেদ্য অধিকারসমূহ এবং সহজাত মর্যাদার স্বীকৃতিই হচ্ছে বিশ্বে শান্তি, স্বাধীনতা এবং ন্যায়বিচার ভিত্তি।
বাংলাদেশে সংবিধানের ১১ অনুচ্ছেদে বলা আছে প্রজাতন্ত্র হইবে একটি গণতন্ত্র, যেখানে মৌলিক মানবাধিকার ও স্বাধীনতার নিশ্চয়তা থাকিবে। মানবসত্তার মর্যাদা ও মূল্যের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ নিশ্চিত হইবে। এখানেই প্রশ্ন আমাদের বিবেকের কাছে আমরা কি পেরেছি আমাদের প্রান প্রিয় বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের মানবাধিকার নিশ্চিত করতে? আমরা কি পেরেছি আমাদের সংবিধানকে সমুন্নত রাখতে? জাতি বা গোষ্ঠীগত, ধর্মীয় এবং ভাষাগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অধীনে যে কোন ব্যক্তির সম্পূর্ণভাবে নিজস্ব সংস্কৃতি পালন বা উপভোগ এবং নিজস্ব সংঘ প্রতিষ্ঠা ও রক্ষণাবেক্ষণের অধিকার রয়েছে।
কোনরূপ বৈষম্য ছাড়া সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের যে কোন ব্যক্তির একাকী অথবা সম্প্রদায়ের অন্য সদস্যদের সঙ্গে মিলে নিজেদের অধিকার চর্চা করার অধিকার রয়েছে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের যে কোন ব্যক্তি যেন অবাধে সবধরনের মানবাধিকার মৌলিক স্বাধীনতার চর্চা করতে পারে। রাষ্ট্র সেই নিশ্চয়তার বিধান করবে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকেরা যেন তাদের সংস্কৃতি, ভাষা, ধর্ম, ঐতিহ্য এবং প্রথার বিকাশ ঘটাতে পারে এবং নিজেদের বৈশিষ্ট্য প্রকাশ করতে পারে।
রাষ্ট্র সে লক্ষ্যে অনুকুল পরিবেশ গড়ে তুলবে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতিটি মানুষ যেন তাদের মাতৃভাষা শিক্ষার পর্যাপ্ত সুযোগসুবিধা পায় অথবা মাতৃভাষার নিদের্শনা লাভের সুযোগ পায়। রাষ্ট্র তার জন্য প্রয়োজনীয় সকল উদ্যোগ গ্রহণ করবে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকেরা যেন দেশে অর্থনৈতিক বিকাশ এবং উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় সম্পূর্ণভাবে অংশ নিতে পারে। রাষ্ট্র তার যথাযথ উপায় নিশ্চিত করবে।
সভায় সুপারিশ:
শিক্ষা ও স্বাস্থ্যকে মৌলিক মানবাধিকার হিসাবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিতে হবে।
শিক্ষাখাতে জনসাধারণের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে এবং শিক্ষাখাতের বেসরকারিকরণ বন্ধ করতে হবে।
সমাজের অন্যান্য নাগরিকদের তুলনায় যেসব নাগরিক তাঁদের ধর্ম বিশ্বাসের কারণে সংখ্যালঘু, তাঁদের জানমালের সুরক্ষা দিতে হবে এবং তাঁদের ধর্ম ও সংস্কৃতি চর্চার ক্ষেত্রে তাঁদের পূর্ণ অধিকার নিশ্চিত করার জন্য সরকারকে বিশেষ আইনী ব্যবস্থা নিতে হবে।
নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধে দ্রুততার সঙ্গে বিচার করে অপরাধীদের শাস্তি দিতে হবে এবং গণমাধ্যমকে সর্বস্তরে নিয়মিত সচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করাসহ সীমান্ত রক্ষীদের নারী ও শিশুপাচার রোধে বিশেষ প্রশিক্ষণ দিতে হবে এবং কমিউনিটি ওয়াচ গ্রুপ তৈরি করতে হবে।
ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সম্পদের অধিকার এবং ভূমির অধিকার নিশ্চিত করা।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে একটি স্বাধীন ও দক্ষ প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।
প্রকাশক : আরিফ মাহমুদ, প্রধান সম্পাদক : কাজী আবু ইমরান, সম্পাদক : আবু রায়হান মিকাঈল
ফেসবুক পেইজঃ facebook.com/kalaroanewsofficial, ই-মেইল : [email protected]