ফারুক রহমান, সাতক্ষীরা: অ্যাওসেড ও কেয়ার বাংলাদেশে যৌথভাবে বিএমজেড অর্থায়িত ম্যাপ-সিডিআরএফআই প্রকল্পের অধীনে সাতক্ষীরা কেন্দ্রিয় পাবলিক লাইব্রেরির মিলনায়তনে জেলা পর্যায়ের “জলবায়ু দুর্যোগ ঝুঁকি অর্থায়ন ও বীমা সংক্রান্ত পরামর্শ ও মতবিনিময় সভা” অনুষ্ঠিত হয়। উপকূলীয় অঞ্চলের তৃণমূল থেকে জেলা পর্যায়ের স্টেকহোল্ডারদের অভিজ্ঞতা ও সুপারিশ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নীতিনির্ধারণ প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে অনুষ্ঠিত সভার সভাপতিত্ব করেণ সাতক্ষীরা জেলা ম্যাপের যুগ্ম আহবায়ক মাধব চন্দ্র দত্ত।
সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের এডিশনাল ডেপুটি ডাইরেক্টর মোঃ জামাল উদ্দিন। সভা
সঞ্চালনায় করেন জেলা ম্যাপের সদস্য সচিব শরীফুল্লাহ কায়সার সুমন।
অ্যাওসেডের লার্নিং ও অ্যাডভোকেসি অফিসার বাহলুল আলম উপকূলীয় বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বহুমাত্রিক সংকট, প্রভাব ও প্রাসঙ্গিক বিশ্লেষণ বিষয়ক পেপার উপস্থাপন করেন। এতে উঠে আসে যে, Germanwatch-এর Global Climate Risk Index অনুযায়ী বাংলাদেশ বিশ্বের জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ দেশের মধ্যে ৭ম। খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা জেলার সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, লবণাক্ততার বিস্তার, অস্বাভাবিক বৃষ্টিপাত, নদীভাঙন ও ঘনঘন দুর্যোগে জীবন, জীবিকা ও পরিবেশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। Centre for Climate Justice, CARE ও AOSED (২০২৪) অনুসারে উপকূলীয় জনগণের ৭০.২% ঘরবাড়ি, ফসল, গবাদিপশু ও পানির উৎসে ক্ষতি ভোগ করছে।
সাতক্ষীরায় ৪১,৭৮৮ হেক্টর জমি প্লাবিত, যার মধ্যে ১৮,৩৪০ হেক্টর ফসল নষ্ট হয়েছে। প্রায় ৫০,০০০ মানুষ পানিবন্দি। বাগেরহাটে চিংড়ি ঘের, ধানক্ষেত ও শাকসবজি চাষে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি। বাঁধভাঙন ও ড্রেন অবরোধের কারণে পৌর ও গ্রামীণ এলাকা জলমগ্ন। IPCC ৬ষ্ঠ মূল্যায়ন প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, দক্ষিণ এশিয়ায় চরম বৃষ্টিপাত ও সামুদ্রিক ঝড় আগামী দশকে আরও বৃদ্ধি পাবে। উপকূলীয় অঞ্চলের প্রায় ১.৫২ কোটি মানুষ ২০৫০ সালের মধ্যে বসতবাড়ি হারাতে পারে, যাদের একটি বড় অংশ শহরমুখী হয়ে দারিদ্র্য ও সামাজিক অস্থিরতার ঝুঁকিতে পড়বে।
শরণখোলা উপজেলায় মিঠা পানির সংকট এবং লবণাক্ততার মাত্রা বৃদ্ধির কারণে নারী ও শিশুরা দীর্ঘ দূরত্ব অতিক্রম করে পানি সংগ্রহ করতে বাধ্য। দুর্যোগ ও খাদ্যসংকট নারীদের ওপর সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলছে। দারিদ্র্য ও জীবিকার সংকট বৃদ্ধি পেয়ে খুলনা বিভাগের দারিদ্র্য হার ২৪.৬%–এ পৌঁছেছে। সুন্দরবন বন এলাকা হুমকির মুখে; লবণাক্ততা বৃদ্ধি, ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের তীব্রতা সুন্দরবনের ইকোসিস্টেম ও স্থানীয় মৎস্যনির্ভর জনগোষ্ঠীর জীবিকাকে বিপন্ন করছে।
সভায় উপস্থিত থেকে আলোচনায় অংশগ্রহণ করেণ খুলনা বিভাগীয় MAP-এর যুগ্ম আহবায়ক শিরিনা বেগম, AOSED-এর হেড অব প্রোগ্রাম ও অপারেশন্স শংকর রঞ্জন সরকার, সাংবাদিক ও উন্নয়নকর্মী ফারুক রহমান, সাংবাদিক জুলফিকার রায়হান ,সাংবাদিক আমিনা বিলকিস ময়না, অ্যাডভোকেট নাজমুন নাহার, আবুল কালাম আজাদ, ডা. দিলারা বেগম, ভারতীশ্বরী বিশ্বাস, শেখ হেদায়েত উল্লাহ, আফজাল হোসেন, অ্যাডভোকেট মুনীর উদ্দিন, শেখ আবুল কালাম, দুলাল চন্দ্র দাস, আব্দুর সালাম, নাসরিন সুলতানা, এ কে এম আবু জাফর সিদ্দিকী, জান্নাতি মৌ, শম্পা গোস্বামী, আব্দুর সাবুর বিশ্বাস, রবিউল ইসলাম, মির্জা সুলতানা, শরিফুল ইসলাম, মোঃ আসাদুজ্জামান, শ্যামল কুমার বিশ্বাস, সুদীপ্ত বসু, মোঃ বাঘেদ, শাম্মি আক্তার কুমকুম, জয়ন্তী দাস, ইমরান সরদার, সুশান্ত মালিক, বিশ্বজিৎ মুন্ডা প্রমুখ।
প্রকাশক : আরিফ মাহমুদ, প্রধান সম্পাদক : কাজী আবু ইমরান, সম্পাদক : আবু রায়হান মিকাঈল
ফেসবুক পেইজঃ facebook.com/kalaroanewsofficial, ই-মেইল : [email protected]