সাতক্ষীরা জেলার নানা সমস্যার সমাধানের দাবিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে দুনীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ পথসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
দ্বিতীয় দিন (১৯ জুলাই) বুধবার সকাল ১০ টায় সাতক্ষীরা জেলা নদী, বন ও পরিবেশ রক্ষা কমিটি এবং জেলা ভুমিহীন সমিতির যৌথ উদ্যোগে নিউমার্কেট মোড়স্থ শহীদ স ম আলাউদ্দীন চত্বরে সাতক্ষীরা সুন্দরবন টেক্সটাইলস মিলস চালুসহ উচ্ছেদ হওয়া ভূমিহীনদের পূর্নবাসন, নদী ও খাল খননে অনিয়ম বন্ধ, বিনেরপোতা রাফসান গ্রুপের অবৈধ দখলকৃত সরকারি জায়গা উদ্ধার।
অপরিকল্পিতভাবে স্থাপন পরিবেশ দূষণকারী অবৈধ ইটভাটা বন্ধসহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সীমাহীন অনিয়ম বন্ধ ও স্বেচ্ছাসেবক কর্মীদের নিয়োগের ব্যবস্থা গ্রহণ, শিশু হাসপাতাল অব্যবস্থাপনায় পরিচালনা বন্ধ করে হাসপাতালের নবাজাতক শিশুদের উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থা গ্রহনপূর্বক জেলার নানা সমস্যার সমাধানের দাবিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দপ্তরে দুনীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ পথসভা অনুষ্ঠিত হয়।
পথসভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা ভূমিহীন সমিতির সভাপতি কওছার আলী।
জেলা ভুমিহীন সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাদ গাজীর সঞ্চলনায় প্রধান বক্তা হিসাবে বক্তব্য রাখেন, জেলা নাগরিক কমিটির আহবায়ক ও দৈনিক পত্রদুতের উপদেষ্টা সম্পাদক এড, আবুল কালাম আজাদ।
এছাড়াও অন্যান্যদের মধ্যে জাতীয় সমাজন্ত্রিক জাসদ জেলা শাখার সহ সভাপতি ও দৈনিক দক্ষিণের মশাল পত্রিকার প্রকাশক ও সম্পাদক অধ্যক্ষ আশিক এলাহী, জেলা নদী, বন ও পরিবেশ রক্ষা কমিটির সভাপতি আদিত্য মল্লিক, বাংলাদেশ জাসদ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ মোঃ ইদ্রিস আলী, নদ, বন ও পরিবেশ রক্ষা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, সাবেক সিবিএ নেতা শেখ শওকত আলী, মানবাধিকার কর্মী শেখ ফারুক হোসেন, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার আইনী সহায়তা কেন্দ্র আসক ফাউন্ডেশন সাতক্ষীরা জেলার সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ সেলিম হোসেন প্রমূখ।
পথ সভায় বক্তারা বলেন, সাতক্ষীরার ২২লক্ষ মানুষের প্রাণের প্রতিষ্ঠান সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল। দুই প্রতিষ্ঠানে অনিয়মের শেষ নেই। বিশেষ করে হাসপাতালে অনিয়মের পাশাপাশি রোগীদের ব্যাপক হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। হাসপাতালের পরিচালক ডা: শীতল চৌধুরী সপ্তাহে দুই দিন অফিস করে। ঠিকমত অফিসে আসেন না।
অথচ কোটি টাকার মূল্যের ব্যক্তিগত গাড়ী কিনে চড়ে বেড়াচ্ছে। হাসপাতালের স্টাফদের বেতন ছাড়াতে গেলেও পরিচালককে টাকা দিতে হয়।
মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা: রুহুল কুদ্দুস মেডিকেল কলেজ যোগদানের পর থেকে প্রতিষ্ঠানটি ধ্বংসের দ্বার প্রান্তে পৌছে গেছে। কলেজের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বাড়তি অর্থ দিতে হয় , অর্থের বিনিময়ে ইচ্ছামত মাস্টার রোলের কর্মচারী নিয়োগ দিয়ে তা আবার ইচ্ছামত নিয়োগ বাতিল করে এই সুচতুর ডাঃ রুহুল কদ্দুস। বিভিন্ন এলাকার বেকার ছেলে মেয়ে যুবক যুবতীরা একটু পিতা মাতা ভাই বোন ও ছেলে মেয়েদের দুমুঠো ভাত মুখে তুলে দেওয়ার স্বার্থে সাতক্ষীরা মেডিকেল হাসপাতালে একটু চাকুরী পাওয়ার আশায় ২০১৮ সাল থেকে এপর্যন্ত একাধিক স্বেচ্ছাসেবক কর্মীরা বিনা বেতনে হাসপাতালে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবায় শ্রম দিয়ে আসছে।
কিন্তু তাদেরকে এখনো পর্যন্ত আউটসোর্সিং নিয়োগে চাকুরী দেওয়া হয়নি। কিছু আমলাবাজ দালালদের ও প্রশাসনিক কর্মকর্তার দৌরত্ব অবহেলার কারনে স্বেচ্ছাসেবক কর্মীদের নিয়োগ হচ্ছে না। অথচ আমলাবাজ দালালরা ও কর্মকর্তারা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নানা অনিয়ম ও দুনীতির করে গাড়ি বাড়ি ও সম্পদ বানিয়ে যাচ্ছে। অবিলম্বে ওই দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণপূর্বক স্বেচ্ছাসেবক কর্মীদের নিয়োগের মাধ্যমে চাকুরী দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে বলে সংশ্লিষ্টদের কাছে দাবি জানান বক্তারা।
সাতক্ষীরার একটি নবজাতক শিশু হাসপাতাল রয়েছে। বর্তমান এ হাসপাতালটি পরিচালনায় দায়িত্ব রয়েছে জেলা প্রশাসক। কিন্তু হাসপাতালে একজন প্রশাসন কর্মকর্তা দায়িত্ব থাকার স্বর্থেও হাসপাতালটি অব্যবস্থাপনায় পরিচালনা হয়। হাসপাতালে নবজাতক শিশুরা সুচিকিৎসা পায় না। চিকিৎসার অভাবে ধুকে ধুকে অনেক শিশুরা মারাও যায়। হাসপাতালে নেই কোনো ভাল চিকিৎসক, নার্স ও পরিক্ষা নিরিক্ষার যন্ত্রপাতি। অবিলম্বে হাসপাতালটি অব্যবস্থাপনা পরিচালনা বন্ধ করে হাসপাতালে নবজাতক শিশুদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে বলে সংশ্লিষ্টদের কাছে দাবি জানান বক্তারা।
শহরের ব্যাঙের ছাতারমত ছেয়ে গেছে অসংখ্য বেসরকারি হাসপাতাল ক্লিনিক। অনেকের নিবন্ধন নেই। জেলার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে কোনো রকম অনুমতি নিয়ে এবং তাদের ম্যানেজ করে বেসরকারি হাসপাতাল ক্লিনিক পরিচালনা করছেন। কিন্তু তারা পরিচালনা করলেও বেসরকারি হাসপাতাল ক্লিনিকে সারাক্ষণ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার ও অভিজ্ঞ নার্স থাকে না। এছাড়াও বেশীরভাগ বেসরকারি হাসপাতাল ক্লিনিকে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে পরিচালনা করা হয়। অবিলম্বে এসমস্ত বেসরকারি হাসপাতাল ক্লিনিক গুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে বলে সংশ্লিষ্টদের কাছে দাবি জানান বক্তারা।
বক্তারা আরো বলেন, বেতনানদী খননের নামে ভুমিহীনদের উচ্ছেদ করা হয়। ভুমিহীনদের উচ্ছেদকৃত সরকারি জায়গাটি সাতক্ষীরা রাফসান গ্রুপ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের মালিক আবু হাসানের এখন দখলে। আবু হাসান ভুমি অফিস ও পানি উন্নয়ন বোর্ডকে ম্যানেজ করে সেখানে বহুতলা ভবন নির্মাণের কাজ করছেন। বিষয়টির বিরুদ্ধে ইতোপূর্বে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন আন্দোলনসহ ভূমিহীন সমিতির পক্ষ থেকে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক ও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হলেও তা এখনো পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। প্রকৃত ভুমিহীনদের ঘর দেওয়া হয় না।
টাকা ছাড়া প্রকৃত ভুমিহীনরা ঘর পাই না। অবিলম্বে দখলকৃত সরকারি জায়গা উদ্ধার করে প্রকৃত ভুমিহীনদের পুনর্বাসন করতে হবে বলে প্রশাসনের কাছে দাবি জানান বক্তারা।
সম্প্রতি সাতক্ষীরায় নদী ও খাল খনন চলছে। এসব খাল ও নদী খননে ব্যাপক অনিয়ম হচ্ছে। কোটি কোটি টাকা পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা খননের বরাদ্দ টাকা ভাগবাটোয়ারা করে নিয়ে পকেট ভরছে। প্রাণসায়ের খাল খননের পর আবারও খালে পরিণত হয়েছে ময়লা আবর্জনা। অবিলম্বে নদী ও খাল খননের অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণসহ ময়লা আবর্জনা পরিস্কারের ব্যবস্থা করতে হবে বলে বক্তারা দাবি জানান।
জেলায় কৃষি জমিতে ও ঘনবসতি ঘরবাড়ি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এলাকায় অপরিকল্পিতভাবে স্থাপন হয়েছে একাধিক অবৈধ ইটভাটা। ইটভাটার কালো ধোয়ায় এলাকায় পরিবেশ দূষিত হয়ে মানুষ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। অনেক ইটভাটার মালিকদের নিবন্ধিত নেই। তারা পরিবেশ অফিসকে ম্যানেজ করে ইটভাটা পরিচালনা করে আসছে। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে পরিবেশ অধিদপ্তর কোন ব্যবস্থা নেই না। অবিলম্বে এসমস্ত ইটভাটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে বলে সংশ্লিষ্টদের কাছে দাবি জানান বক্তারা।
পৌরসভার যানজট ও পরিবেশ দূষণ মুক্ত করার দায়িত্ব পৌরসভার কর্তৃকপক্ষ। কিন্তু পৌরসভা সেদিকে নজর না দিয়ে কিভাবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ট্যাক্স, পানির বিল বাড়ানো যায় সেটি নিয়ে তারা ভাবতে থাকে। অথচ দিনের পর দিন শহরে যানজটে মানুষ ভোগান্তি পাচ্ছে, চারিদিকে ময়লা আবর্জনায় পরিবেশ দূষণ হচ্ছে সেইদিকে তাদের কোনো নজর নেই। তাই অবিলম্বে পৌরসভার রাস্তা ধারে অবৈধ দখল উচ্ছেদসহ প্রাণ সায়ের খালের ময়লা আবর্জনা দূষণ মুক্ত ও যানজট মুক্ত করতে হবে বলে সংশ্লিষ্টদের দাবি জানান বক্তারা।
সাতক্ষীরার একটি ঐতিহ্যবাহী কর্মমূখি প্রতিষ্ঠান সুন্দরবন টেক্সটাইলস মিলস। প্রতিষ্ঠানটি দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে। ফলে সেখানে কর্মরত অনেক শ্রমিক আজ বেকার। শ্রমিকরা কষ্টে দিনাতিপাত করছেন। কর্মহীন শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের জন্য অবিলম্বে প্রতিষ্ঠানটি চালু করতে হবে বলে সংশ্লিষ্টদের কাছে জোর দাবি জানান বক্তারা।
এদিকে এসমস্ত সমস্যার সমাধানসহ দুনীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে আগামী দিনে আরো বেগমান আন্দোলন করা হবে বলে আয়োজিত সংগঠনের নেতৃবৃন্দরা পথসভায় ঘোষণা করেন। অপরদিকে প্রথমদিনে দুই সংগঠনের পথ সভার বেগমান আন্দোলনের খবর শুনে ১৮ জুলাই বন্ধ হওয়া সাতক্ষীরা সুন্দরবন টেক্সটাইলস মিলস্ পরিদর্শন করেছেন বাংলাদেশ কর্পোরেশনের (বিটিএমসি) চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান।
পথসভায় উপস্থিত ছিলেন, রহমত আলী, শেখ হাফিজুর রহমান, শাহাজান আলী ছোট বাবু, লাবসা ইউপি ৮ নং মেম্বার নজিবুর রহমান টুটুল, আলমগীর হোসেন, ইউসুফ আলী সরদার, আরমান আলী, শাহানারা খাতুন রিনা, রেজাউল করিম রেজা, সোহরাব হোসেন, ময়নাসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের আরোও নেতৃবৃন্দ প্রমূখ।
প্রকাশক : আরিফ মাহমুদ, প্রধান সম্পাদক : কাজী আবু ইমরান, সম্পাদক : আবু রায়হান মিকাঈল
ফেসবুক পেইজঃ facebook.com/kalaroanewsofficial, ই-মেইল : [email protected]