সাতক্ষীরা প্রতিনিধি: সাতক্ষীরায় পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায় এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে বিভিন্ন প্রলোভনে নারীর অশ্লীল স্থিরচিত্র ও ভিডিও ধারণের অভিযোগ রয়েছে।
শুক্রবার (১২ জানুয়ারি) বিকাল সাড়ে পাঁচটার দিকে সাতক্ষীরা শহরের উত্তর কাটিয়া ঈদগাহর সামনের সড়ক থেকে পূর্বপরিকল্পিত ভাবে ফাঁদ পেতে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃত যুবকের নাম মারুফ হোসেন বাপ্পী (২৬)। সে সাতক্ষীরা পৌর এলাকার মুনজিতপুর গ্রামের মৃত আনোয়ারুল ইসলামের পুত্র।
সম্প্রতি দেশের স্বনামধন্য একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্রীকে ফাঁদে ফেলার চেষ্টা করে ওই যুবক। বিগত ২৫ ডিসেম্বর ২০২৩ তারিখে ওই ছাত্রীর পিতা সাতক্ষীরা সদর থানায় প্রতিকার চেয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। একই সাথে প্রতারক ওই যুবককে ধরতে পুলিশের সাথে পরামর্শক্রমে সুকৌশলে ফাঁদ পাতা হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ^বিদ্যালয়ে পড়ুয়া ওই ছাত্রী জানান, প্রথমে টেলিগ্রাম অ্যাপে এবং পরবর্তীতে হোয়্যাটস্অ্যাপ ম্যাসেঞ্জারে তাকে এবং তার বন্ধুদেরকে এ.আই দ্বারা প্রস্তুতকৃত কিছু কুরুচিপূর্ণ ছবি দিয়ে ব্ল্যাকমেইলের চেষ্টা করে গ্রেফতারকৃত মারুফ হোসেন বাপ্পী।
এঘটনায় ওই ছাত্রী ও তার পরিবার পুলিশের সাথে পরামর্শক্রমে বহু অপরাধের হোতা ওই যুবককে ধরতে সুকৌশলে বিশেষ ফাঁদ পাতে। প্রথমে তার ব্যবহারিত হোয়্যাটস্অ্যাপ নাম্বারের তথ্য যাচাই করে দেখা যায় সে সড়ক পরিবহন ও যোগাযোগ মন্ত্রাণালয়ের এক প্রশাসনিক কর্মকর্তার নামে রেজিষ্ট্রেশন করা মোবাইল নাম্বার ব্যবহার করে এমন প্রতারণা করেছে।
পরে সড়ক পরিবহন ও যোগাযোগ মন্ত্রাণালয়ের সেই প্রশাসনিক কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করে জানা যায় তার একজন নিকট আত্মীয়ও ওই প্রতারক যুবকের দ্বারা বø্যাকমেইলের স্বীকার হয়েছেন এবং ব্ল্যাকমেইলের মাধ্যমে তার সেই নিকট আত্মীয়ের কাছ থেকে তার নামে নিবন্ধন করা মোবাইল সিম হাতিয়ে নিয়ে দীর্ঘদিন বন্ধ রাখার পর আবার চালু করে এমন অপকর্ম শুরু করে ওই যুবক।
বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া ওই ছাত্রী আরও জানান, তার পাতা ফাঁদে পা দিয়ে গত ১২ জানুয়ারি ঢাকা থেকে সাতক্ষীরায় আসে ওই যুবক। পরবর্তীতে পূর্বপরিকল্পিতভাবে তার পরিবার এবং স্থানীয়রা ওই যুবককে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে।
পরে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ওই ছাত্রীর বাবা বাদী হয়ে গ্রেপ্তারকৃত যুবকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।
সাতক্ষীরা সাইবার ক্রাইম এলার্ট টিমের এডমিন শেখ মাহবুবুল হক জানান, মারুফ হোসেন বাপ্পী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চিকিৎসক পরিচয় দিয়ে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্রীদের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতেন। পরে তাদের কাছ থেকে ভিডিও কলে বা হোয়াটসএ্যাপ-ম্যাসেঞ্জার-টেলিগ্রামে ন্যুড ছবি সংগ্রহ করতেন। সুবিধামতো সময়ে তাদেরকে ছবি ফাঁস করে দেওয়ার হুমকি দিয়ে অর্থ হাতিয়ে নিতেন। কখনও কখনও তাদেরকে শয্যাসঙ্গী হতে বাধ্য করতেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সাতক্ষীরা সদর থানার এস.আই মোস্তাফিজুর রহমান জানান, গ্রেপ্তারকৃত বাপ্পী ‘ডা. আরমান হোসন নিলয়’ হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন নারীদের অন্তরঙ্গ মুহুর্তের ছবি ধারণ করে পরে তাদের সাথে প্রতারণা করতেন। কখনও অর্থ হাতিয়ে নিতেন, আবার কখনও শারীরিক সম্পর্কে জড়াতে বাধ্য করতেন।
সম্প্রতি সদর থানায় দায়ের করা একটি অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তে নামে পুলিশ। তদন্তে তার বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়। একাধিক আইডি ও অন্যের নামের মোবাইল সিম ব্যবহার করে তিনি প্রতারণার সাম্রাজ্য গড়ে তোলেন। পুলিশ তার কাছ থেকে দুটি মোবাইল ফোন জব্দ করে তা থেকে একাধিক নারীর অশ্লীল ছবি জব্দ করা হয়।
সাতক্ষীরা সদর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) নজরুল ইসলাম জানান, এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ওই ছাত্রীর পিতা বাদী হয়ে গ্রেপ্তারকৃত বাপ্পীর বিরুদ্ধে ২০১২ সালে প্রণিত পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনের ৮(১),/৮(৫)(ক) ধারায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা নং-১২। গ্রেপ্তারকৃত আসামীকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।
প্রকাশক : আরিফ মাহমুদ, প্রধান সম্পাদক : কাজী আবু ইমরান, সম্পাদক : আবু রায়হান মিকাঈল
ফেসবুক পেইজঃ facebook.com/kalaroanewsofficial, ই-মেইল : [email protected]