নিজস্ব প্রতিনিধি : ৩২ বছরের বৈষম্য অবসান কল্পে অনার্স-মাস্টার্স শিক্ষকদের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ আদেশে এমপিওভুক্তির দাবিতে এবং ঢাকা শিক্ষা ভবনের সামনে কর্মসূচিতে শিক্ষকদের উপর পুলিশের অতর্কিত হামলার প্রতিবাদে সাতক্ষীরায় মানববন্ধন ও জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে "অ্যাপ্লিকেশন টু দ্যা চিপ অ্যাডভাইজার” কর্মসূচি পালন করেছে বাংলাদেশ বেসরকারি কলেজ অনার্স-মাস্টার্স শিক্ষক ফেডারেশন।
২৩ অক্টোবর বুধবার সকাল সাড়ে ১০ টায় শহরের খুলনারোড শহীদ আসিফ চত্বর মোড়ে বাংলাদেশ বেসরকারি কলেজ অর্নাস -মাষ্টার্স শিক্ষক ফেডারেশন সাতক্ষীরা জেলা কমিটির উদ্দ্যেগে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিভুক্ত বেসরকারি কলেজ সমূহে বিধিমোতাবেক নিয়োগপ্রাপ্ত ও নিয়মিত কর্মরত ৩৫০০ জন অনার্স-মাস্টার্স কোর্সে শিক্ষককে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ আদেশে এমপিওভূক্তির দাবিতে এবং গত ১৭ অক্টোবর ঢাকা শিক্ষা ভবনের সামনে কর্মসূচিতে শিক্ষকদের উপর পুলিশের অতর্কিত হামলার প্রতিবাদে শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন ও জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে "অ্যাপ্লিকেশন টু দ্যা চিপ অ্যাডভাইজার” কর্মসূচি পালন করা হয়।
সাতক্ষীরা জেলা কমিটির সভাপতি মোঃ আমিনুর রহমানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মোঃ মাসুম বিল্লাহ'র সঞ্চালনায় উক্ত মানববন্ধন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। জেলার ১৪ টি কলেজ হতে আগত শিক্ষক নেতৃবৃন্দ উক্ত কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন।
এসময় শিক্ষক নেতৃবৃন্দ বলেন, কোটা ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনে আবু সাঈদ সহ সকল বীর শহীদের প্রতি মাগফিরাত কামনা ও আহতদের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করছি। আমরা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত বেসরকারি এমপিওভুক্ত কলেজে অনার্স-মাস্টার্স কোর্সে নিয়োগপ্রাপ্ত নন-এমপিও শিক্ষক। ১৯৯২ সালে তৎকালীন বিএনপি সরকারের আমলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। রাজনৈতিক রোষানলে পড়ে গত ৩২ বছর ধরে আমাদের ৪৯৫টি বেসরকারি এমপিওভুক্ত কলেজে প্রায় ৩৫০০ জন নন-এমপিও অনার্স-মাস্টার্স শিক্ষককে কোন বেতন-ভাতা না দিয়ে এমপিওবিহীন করে চরম বৈষম্য সৃষ্টি করে রাখা হয়েছে। এর ফলে উচ্চ দ্রব্যমূল্যের বাজারে দীর্ঘদিন ধরে আমরা পরিবার-পরিজন নিয়ে চরম মানবেতর জীবন যাপন করছি।
শিক্ষকরা আরো বলেণ, জাতীয় বিশ্ববিদ্যলয় প্রতিষ্ঠার পর থেকে সারাদেশের বেসরকারি কলেজ সমূহে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারের লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থী কৃতিত্বের সাথে বিভিন্ন বিষয়ে অনার্স ও মাস্টার্স পাস করে দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রেখে চলেছে। বিগত সরকারগুলো অনার্স-মাষ্টার্স শিক্ষকদের জনবল কাঠামোতে অন্তর্ভুক্ত না করায় একদিকে যেমন এ সকল শিক্ষক এমপিওভুক্ত হতে পারছে না, অন্যদিকে প্যাটার্ন বহির্ভূত শিক্ষক হিসেবে কলেজ থেকে পূর্ণস্কেলে বেতন দেওয়ার কথা থাকলেও ইতঃপূর্বে কলেজ ভেদে ২০০০-১০,০০০ টাকার বেশি কখনই দেওয়া হয় নি।
এছাড়া করোনা প্রাদুর্ভাবের সময় থেকে অধিকাংশ কলেজগুলোতে বেতন বন্ধ ছিল। ফলে, উচ্চশিক্ষায় নিয়োজিত এ সকল শিক্ষক পরিবার পরিজন নিয়ে অত্যন্ত মানবেতর জীবনযাপন করছেন। একই প্রক্রিয়ায় নিয়োগ পেয়ে রাজনৈতিক বিবেচনায় সদ্য জাতীয়করণকৃত ৩০২টি কলেজের অনার্স-মাস্টার্স কোর্সের শিক্ষকগণ ক্যাডার/নন-ক্যাডারভুক্ত হয়েছেন, ডিগ্রিস্তরের ৩য় শিক্ষকগণ জনবল কাঠামোয় না থাকার পরও এমপিওভুক্ত হয়েছেন।
১৯৯৩ সালে বিজিবি কলেজ, ঘাটাইল, টাঙ্গাইলের অনার্স-মাস্টার্স কোর্সের ০৮জন শিক্ষককে বিশেষ প্রজ্ঞাপনে এমপিওভুক্ত করা হয়েছিল। অন্যদিকে ফাজিল ও কামিল (মাস্টার্স সমমান) শ্রেণির শিক্ষকগণও জনবলকাঠামোভুক্ত হয়ে এমপিওভুক্ত হয়েছেন। অথচ বেসরকারি কলেজ সমূহে অনার্স-মাস্টার্স স্তরের শিক্ষকগণ এনটিআরসিএ সনদধারী হয়েও জনবল ও এমপিওনীতিমালায় অন্তর্ভুক্ত না থাকায় এমপিওভুক্ত হতে পারছেন না, যা চরম বৈষম্য ও সংবিধানের মৌলিক অধিকার পরিপন্থী।
শিক্ষক নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, এটা সর্বজনস্বীকৃত সত্য যে, বর্তমান বৈষম্য বিরোধী শিক্ষাবান্ধব ড. ইউনুস সরকার শিক্ষা সেক্টরে অনেক বৈষম্য দূর করছেন কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হলো, উচ্চশিক্ষায় নিয়োজিত সারাদেশে ৪৯৫টি বেসরকারি কলেজে মাত্র ৩,৫০০জন শিক্ষক এখনো এমপিওভুক্তির বাইরে রয়েছেন। অথচ, বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিগত সরকারের আমলে বিভিন্ন সময়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একাধিক নির্দেশনা, নবম ও দশম সংসদের শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সুপারিশ এবং জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০-এর অধ্যায়-০৮-এ বর্ণিত উচ্চশিক্ষার কৌশল বাস্তবায়নের জন্য এ সকল শিক্ষককে এমপিওভুক্ত করা অত্যন্ত যৌক্তিক ছিল।
তাই আমলাতান্ত্রিক জটিলতা নিরসন কল্পে বিধি মোতাবেক নিয়োগপ্রাপ্ত ও নিয়মিত কর্মরত ৩,৫০০জন শিক্ষককে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ আদেশের মাধ্যমে এমপিওভুক্ত করতে প্রতি মাসে ৯কোটি এবং বছরে ১০৮ কোটি টাকার বাজেটে ব্যয় বরাদ্দ করলেই আমাদের এমপিওভুক্তির ন্যায়সঙ্গত দাবির বাস্তবায়ন হয়।
শিক্ষক নেতৃবৃন্দ বলেন, এমপিওভুক্তির দাবিতে আমরা দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন সময়ে সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করে মানববন্ধন, অবস্থান কর্মসূচিসহ বিভিন্ন শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করার পরেও অদ্যবধি সরকারি বেতন-ভাতা থেকে বঞ্চিত রয়ে গেছি। এ ধারাবাহিকতায় গত ১৫ অক্টোবর ২০২৪ তারিখ থেকে ১৭ অক্টোবর ২০২৪ তারিখ পর্যন্ত ঢাকায় শিক্ষা ভবনের মূল ফটকের সামনে মানববন্ধন, অবস্থান কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে পালন করে ১৭ অক্টোবর ২০২৪ বিকাল সাড়ে ৪টায় আমরা 'মার্চ টু যমুনা' কর্মসূচি ঘোষণা করি।
এতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আমাদেরকে অগ্রসর হতে বাধা দেয়। ফলে আমরা রাস্তায় বসে পড়ি। এমন সময় পেছনের দিক থেকে পুলিশ আমাদের উপর লাঠিচার্জ করে এবং টিয়ার শেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। এতে আমাদের অনেক শিক্ষক আহত, রক্তাক্ত হয় এবং সমাবেশ পন্ড হয়। এ ঘটনার জন্য আমরা শিক্ষক সমাজ লজ্জিত। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ আদর্শ শিক্ষক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় নেতা ও সাতক্ষীরা জেলা সভাপতি মোঃ শহিদুল ইসলাম মুকুল, শিক্ষক গৌতম কুমার মজুমদার, তোফায়েল হোসেন, মোস্তফা কামাল, উত্তম কুমার, আমিমুল এহসান, পরিমল মন্ডল, আবু সাঈদ, নাজমুল ইসলাম, মোফাচ্ছিরুজ্জামান, বাহাউদ্দীন, কামরুল ইসলাম, তরুন সরকার, ডালিয়া, মাগফুরা, ডাঃ একরামুল, মাছুমা জুতিকা, ফারুক হোসেন, জাহাঙ্গীর হোসেন, পবিত্র কুমার মন্ডল, শিমুল হোসেন, ইমরুল হোসেন প্রমুখ।
প্রকাশক : আরিফ মাহমুদ, প্রধান সম্পাদক : কাজী আবু ইমরান, সম্পাদক : আবু রায়হান মিকাঈল
ফেসবুক পেইজঃ facebook.com/kalaroanewsofficial, ই-মেইল : [email protected]