জি.এম আবুল হোসাইন, সাতক্ষীরা: আজকের শিশু আগামী দিনের কর্ণধার এ কথা আমরা সকলে বিশ্বাস করি। একজন শিশুর ভিতরে থাকে বিশ্ব জয় করার অপার সম্ভাবনা। তবে সেই সম্ভাবনা তৈরি করে দেওয়ার দায়িত্ব আমাদেরকেই নিতে হবে।
একজন শিশুর সব ধরনের বিকাশ নিশ্চিত করতে আমাদের সমাজ, রাষ্ট্র, স্থানীয় প্রশাসন সহ ব্যক্তি পর্যায় থেকে কাজ করতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে একজন শিশু শারীরিক ও মানসিক বিকাশ লাভের মধ্য দিয়ে বেড়ে না উঠলে দেশ ও জাতির উন্নয়ন সম্ভব হয় না। শিশুর পরিপূর্ণ বিকাশের পাশাপাশি তাদের সু-নাগরিক এবং নেতৃত্বদানের যোগ্যতা তৈরি করে দেওয়ার মাধ্যমে তাদেরকে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে সুযোগ দিতে হবে।
শিশুদের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অংশগ্রহণের মনোভাব তৈরি করতে হবে এবং সমাজের উন্নয়নমূলক বিভিন্ন কর্মকান্ডের সাথে সম্পৃক্ত থেকে কাজ করতে হবে। শিশুরা আজকাল ছোট ছোট কাজ করার মাধ্যমে সমাজের উন্নয়নে অনেকটা এগিয়ে আসছে।
শিশুরা এখন তাদের নিজ অধিকার আদায়ে অনেক বেশি সচেতন। বিশেষ করে সাতক্ষীরায় শিশুরা শিশু দল গঠন করার মধ্য দিয়ে তাদের অধিকার আদায়ে কাজ করছে। শিশুরা প্রতিমাসে একটি নির্দিষ্ট দিনে এক জায়গায় সমবেত হয়ে তাদের এলাকার নানা শিশু কেন্দ্রিক সমস্যা চিহ্নিত করে এই গ্রুপে এসে আলোচনা করে এবং সমস্যাগুলো কিভাবে সমাধান করা যায়, কার কাছে গেলে সমাধান পাওয়া যাবে সে বিষয়ে তারা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে।
তাছাড়া শিশু ফোরামের সদস্যরা তাদের এলাকার বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ, যৌন হয়রানি প্রতিরোধ, ঝরে পড়া শিশুদের স্কুল গামী করা, শিশুদের স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেটের ব্যবস্থা, প্রতিবন্ধি ভাতা, এলাকার রাস্তা সংস্কার, স্কুলের নানা সমস্যা সমাধানের স্বক্রিয় ভূমিকা পালন করে। তাছাড়া শিশু ফোরামের সদস্যরা তাদের এলাকার মানুষকে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক সমস্যার বিষয়ে সচেতন করে থাকে এবং বিভিন্ন তথ্য প্রদান করে।
শিশু ফোরামের সদস্যরা প্রতি তিন মাস অন্তর তাদের এলাকায় শিশু কেন্দ্রিক সমস্যা গুলো তুলে আনার জন্য শিশু অধিকার পরিস্থিতি মনিটিরিং করে এবং সমস্যা সমাধানের জন্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করে। শিশু ফোরামে ২০ জন সদস্য তাদের এলাকার একজন উন্নয়ন সৈনিক হিসেবে কাজ করছে।
শিশুরা তাদের এলাকা থেকে চিহ্নিত অর্থাৎ মনিটরিং করার পরে তুলে আনা সমস্যা গুলো কিভাবে সমাধান করা যায় সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়। তারা চিহ্নিত সমস্যা গুলো তাদের স্থানীয় সরকার তথা ইউনিয়ন পরিষদের জনপ্রতিনিধিদের নিকটে বিভিন্ন মাধ্যম দিয়ে তুলে ধরে। প্রথমত শিশুরা ইউনিয়ন পরিষদের প্রতিনিধিদের সাথে শিশুদের ডায়লগ সেশন হয়।
প্রতি ৩ মাস অন্তর শিশুদের সাথে ইউনিয়ন পরিষদ প্রতিনধিদের ডায়লগ মিটিং অনুষ্টিত হয় এবং উক্ত ডায়লগ মিটিং এ শিশুরা তাদের এলাকায় শিশু ফোরামের মাধ্যমে তুলে আনা সমস্যা গুলো ডায়লগ মিটিং এ তুলে ধরে এবং শিশু ও পরিষদের প্রতিনিধিরা মিলে একটি পরিকল্পনা তৈরি করে, সমস্যা সমাধান কিভাবে করা যায়। তাছাড়া তারা সমস্যা তুলেই ধরে না, বরং সেগুলো সমাধান হচ্ছে কিনা তা ফলোআপ করে। ইতিমধ্যে শিশুদের ডায়লগ মিটিং এর মাধ্যমে অনেক সমস্যা সমাধানের চিত্র দৃশ্যমান।
শিশুরা ডায়লগ মিটিং এ শুধু তাদের সমন্যা তুলে ধরে তারা আরো অনেক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাদের সমস্যা ও তাদের চাহিদার কথা তুলে ধরে। ওয়ার্ড সভা তেমনই একটি প্রক্রিয়া। ওয়ার্ড সভায় শিশুরা তাদেও এলাকা থেকে শিশু কেন্দ্রিক সমস্যা গুলো মনিটরিং এর মাধ্যমে তুলে এনে ওয়ার্ড সভায় তুলে ধরে যাতে বাজেটে উক্ত সমস্যা গুলো অন্তর্ভুক্ত করে। তাছাড়া শিশুরা ইউনিয়ন পরিষদে প্রি-বাজেট সভা এবং উন্মুক্ত বাজেট সভায় অংশগ্রহণ করে তাদের চাহিদা/মতামত তুলে ধরে।
তাছাড়া শিশুদের চাহিাদার প্রেক্ষিতে সাতক্ষীরা জেলার ৭৮টি ইউনিয়নে শিশুদের জন্য বাজেটে আলাদা করে টাকা বরাদ্দ রাখা হয়। যে গুলো শিশুদের কল্যাণে ব্যয় করা হয়। তাছাড়া শিশুরা ইউনিয়ন অভিযোগ বা মতামত বক্সের মাধ্যমে তাদের সমস্যা গুলো ইউনিয়ন পরিষদের প্রতিনিধিদের কাছে তুলে ধরে। অভিযোগ বা মতামত বক্স সাতক্ষীরা সদরের প্রত্যেকটা ইউনিয়ন পরিষদ মাসে ২ বার করে শিশুদের উপস্থিতে খুলে তাদের সমস্যা গুলো কিভাবে সমাধান করা হবে তার প্রতিশ্রতি প্রদান করে।
তাছাড়া ইউনিয়ন পরিষদ গুলো শিশুদের জন্য যে বাজেট রাখে সেগুলো সঠিক ভাবে ব্যয় হচ্ছে কিনা শিশুরা প্রতি ৩ মাস পর পর এটার মনিটরিং করে থাকে। অভিযোগ গ্রহণ ও সাড়া প্রদান প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শিশু এবং ইউনিয়ন পরিষদ প্রতিনিধিদের মধ্যে এখন একটি জবাবদিহিতার প্রক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে যার মাধ্যমে শিশুরা তাদের মতামত ও অভিযোগ সহজে দিতে পারছে। শিশুরা এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি সচেতন।
তারা এখন বুঝতে শিখেছে তাদের এলাকা এবং সমাজের জন্য কি করা উচিত। এখন শিশুরা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সামাাজিক সমস্যার সময় তাদেও এলাকায় বিভিন্ন সচেতনমূলক কর্মকান্ড পরিচালনা করে আসছে। করোনা, ডেঙ্গু, বৃক্ষরোপন, বাল্য বিবাহ প্রতিরোধ সহ নানা বিষয়ে সচেতনমূলক কর্মকান্ড পরিচালনা করে আসছে। শিশুরা এখন জানে কিভাবে তাদের অথিকার পেতে হয় এবং কিভাবে তাদের দ্বারা সমাজে, এলাকায় ছোট ছোট কাজের মাধ্যমে অবদান রাখা যায়। শিশুরা যেভাবে অংশগ্রহণ ও ক্ষমকায়ণ হয়েছে এই ধারা চলমান থাকলে আমাদের দেশ অবশ্যই তার কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছাবে।
প্রকাশক : আরিফ মাহমুদ, প্রধান সম্পাদক : কাজী আবু ইমরান, সম্পাদক : আবু রায়হান মিকাঈল
ফেসবুক পেইজঃ facebook.com/kalaroanewsofficial, ই-মেইল : [email protected]