সাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে টানা মৌসুমী বৃষ্টিতে সাতক্ষীরার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। গত ১৮ অক্টোবর সকাল ৬ থেকে ১৯ অক্টোবর সকাল পর্যন্ত টানা বর্ষণে সাতক্ষীরার সদর, তালা, কলারোয়া, আশাশুনি, দেবহাটা, কালিগঞ্জ ও শ্যামনগর উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাাবিত হয়েছে। পানিতে তলিয়ে গেছে সাতক্ষীরা পৌরসভার নিম্নাঞ্চল। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে শতাধিক পরিবার। ভেসে গেছে জমির ফসল, আমন বীজতলা, মাছের ঘের ও পুকুর।
এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষগুলো। বিশেষ করে দৈনন্দিন উপার্জনের উপর নির্ভরশীল দরিদ্র পরিবারগুলো নিদারুন কষ্টে পড়েছেন। বৃষ্টির কারণে উপার্জন বন্ধ থাকায় স্ত্রী-সন্তান নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তারা।
সাতক্ষীরার সদর উপজেলার ধুলিহর, ফিংড়ি, ব্রহ্মরাজপুর, লাবসা, বল্লী, ঝাউডাঙ্গা ইউনিয়নের অধিকাংশ বিলগুলোতে সদ্য রোপা আমন ও বীজতলা পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে। শতশত মাছের ঘের ও পুকুর ভেসে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
এছাড়া নিম্ন অঞ্চলের বিভিন্ন শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান ও ঘরবাড়িতে পানি উঠেছে।
সাতক্ষীরা পৌর এলাকার পারভেজ আলম জানান, গত ২৪ ঘন্টার টানা বৃষ্টিতে বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে সাতক্ষীরা পৌর এলাকার কামালনগর, ইটাগাছা, খড়িবিলা, বদ্দিপুর কলোনী, শহরতলীর বকচরা, কাশেমপুর, সরকারপাড়া, আমতলার মোড় সবই এখন পানিতে তলিয়ে রয়েছে। পানি অপসারণের কোন পথ না থাকায় বৃষ্টির পানি বাড়িঘরে উঠতে শুরু করেছে।
সাতক্ষীরা শহরের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া প্রাণসায়ের খালও পানি টানতে পারছে না।
ভ্যান চালক গোলাম রহমান বলেন, রোজগার করতে না পারলে সংসার চলে না। গতকাল থেকে টানা বৃষ্টিতে ভ্যান নিয়ে শহরে বের হলেও কেউ ভ্যানে উঠেনি। ফলে খালে হাতেই গতরাতে বৃষ্টিতে ভিজে বাড়ি ফিরেছি। আজও ফিস ফিস করে বৃষ্টি হচ্ছে। যাত্রীরা কেউ ভ্যানে উঠতে চান না। সকলেই ইজিবাইকে উঠে। বৃষ্টির কারনে আমরা চরম ভোগান্তিতে পড়েছি।
দিন মজুর আব্দুল মজিদ বলেন, প্রতিদিন সকালে সাতক্ষীরা শহরের পাকাপুলের মোড়ে গিয়ে কাজের জন্য বসে থাকি। সেখান থেকে কাজের চুক্তিতে কাজ করি জীবিকা নির্বাহ করি। কিন্তু বৃষ্টির কারনে দুই কেউ কাজে নিতে আসেনি। ফলে চরম দুর্ভোগে পড়েছি আমরা। এদিকে গত ২৭ জুলাই থেকে ২৯ জুলাই পর্যন্ত টানা ভারি বর্ষণে সাতক্ষীরা জেলা শহরসহ জেলার প্রায় প্রতিটি উপজেলার নিম্নঞ্চল প্লাবিত হয়।
সেসময় গদাইবিল, ছাগলার বিল, শ্যাল্যের বিল, বিনেরপোতার বিল, রাজনগরের বিল, মাছখোলার বিল সহ কমপক্ষে ১০টি বিলে পানিতে তালিয়ে যায়। এসব বিলের মাছের ঘের ভেসে গেছে। বেতনা নদী তীরবর্তী এই বিলগুলির পানি নদীতে নিষ্কাশিত হতে পারছে না। এই পানি পৌরসভার দিকে এগিয়ে আসছে। অতিবৃষ্টিতে গ্রামাঞ্চলের সব পুকুর পানিতে তলিয়ে গেছে। বেরিয়ে গেছে শত শত টাকার মাছ। এছাড়া কাচা ঘরবাড়ি রয়েছে ঝুকির মধ্যে। সবজি ক্ষেত গুলি পানিতে টইটুম্বুর করছে।
এখনো পর্যন্ত সে সব এলাকার পানি নিস্কাশিত হয়নি। এসব এলাকার মানুষ চরম দুর্ভোগে দিন কাটাচ্ছিলেন। এর মধ্যেই আবারো গত ২৪ ঘন্টার টানা বর্ষনে সে দুর্ভোগ আরো দ্বিগুন বাড়িয়ে দিয়েছেন। এছাড়া তালার ইসলামকাটি, কুমিরা, পাটকেলঘাটা, মাগুরা, আশাশুনির প্রতাপনগর, আনুলিয়া, খাজরা, বড়দল, শ্রীউলা, আশাশুনি সদর, দরগাহপুর, কাদাকাটিসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল পানিতে থৈ থৈ করছে।
শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা, পদ্মপুকুর, কাশিমাড়ি, বুড়িগোয়ালিনী, কৈখালি, রমজাননগরসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে বলে জানান স্থানীয়রা। কালিগঞ্জ উপজেলার মৌতলা, মথুরেশপুর, ভাড়াশিমলাসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের মাছের ঘের ও পুকুর পানিতে ডুবে গেছে বলে খবর দিয়েছেন স্থানীয়রা।
সাতক্ষীরা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জুলফিকার আলী রিপন জানান, নিম্নচাপের সোমবার সকাল ৬টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৬টা পর্যন্ত সাতক্ষীরায় ৯১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।
আগামী দুদিন এভাবে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে বলে জানান তিনি। তবে পরশু থেকে বৃষ্টিপাত কমতে পারে।
সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো: নুরুল ইসলাম বলেন, এই বৃষ্টি ৭১০ হেক্টর আমনের ক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে। এছাড়া ১০২ হেক্টর শাক-সবজির ক্ষতি হয়েছে। আবহাওয়া অফিসের তথ্য মনে পরশু দিন থেকে বৃষ্টিপাত কমতে পারে। সেক্ষেত্রে এই বর্ষনে কৃষির উপর খুব বেশি প্রভাব পড়বে না বলে জানান তিনি।
অন্যদিকে, ঘুর্ণিঝড় ইয়াশের প্রভাবে ভেঙ্গে প্লাবিত হওয়া প্রতাপনগরের মানুষের দু:খ কষ্টকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে টানা বৃষ্টি।
এদিকে নদীর পানিতে তলিয়ে রয়েছে পুরো ইউনিয়ন। অন্যদিকে টানা বৃষ্টিতে আরো পানি বেড়ে যাওয়ায় চরম দুর্ভোগে সেখানকার মানুষগুলো।
প্রতাপনগর ইউপি চেয়ারম্যান জাকির হোসেন বলেন, এমনিতেই মানুষ ডুবে আছে। এতে আবার বৃষ্টি। মানুষের দু:খের যেন আর শেষ নেই।
সৌজন্যে: পত্রদূত।
প্রকাশক : আরিফ মাহমুদ, প্রধান সম্পাদক : কাজী আবু ইমরান, সম্পাদক : আবু রায়হান মিকাঈল
ফেসবুক পেইজঃ facebook.com/kalaroanewsofficial, ই-মেইল : [email protected]