আবু সাঈদ, সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরা পৌরসভার সিইও নাজিম উদ্দীন এর বিরুদ্ধে সাংবাদিক ও পৌরসভার কর্মচারী নির্যাতন করার অভিযোগ।রবিবার সকাল আনু: ১১ টায় সাতক্ষীরা পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) অফিস রুমে এ ঘটনাটি ঘটেছে।
ঘটনা সূত্রে জানা যায় শনিবার রাতে দৈনিক একটি পত্রিকার ওয়েবসাইটে ‘প্রতিবন্ধীর ভাসমান দোকান তুলে নিয়ে গেলো পৌরসভার কর্মীরা!’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এছাড়াও রবিবার সাতক্ষীরার স্থানীয় দৈনিক কালের চিত্র পত্রিকায় একই সংবাদ প্রকাশিত হয়। এরই প্রেক্ষিতে গত রবিবার সকালে সাতক্ষীরা পৌরসভার সিইও এর কাছে সাংবাদিক মুনসুরকে যেতে বলেন পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শফিকুল আলম বাবু। ঘটনার দিন উদীচী শিল্পগোষ্ঠী সাতক্ষীরা জেলা শাখার সভাপতি ও জেলা নাগরিক কমিটির সদস্য শেখ সিদ্দিকুর রহমান, প্রতিবন্ধী বায়জিদ হাসান, দৈনিক দৃষ্টিপাত পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার আবু বাক্কারসহ পৌর নির্বাহী প্রধান মোঃ লিয়াকত আলী, পৌরসভার আরো অনেকেই ঘটনার সময় উপস্থিত ছিলেন।
জানা গেছে, সিঁড়ি বেয়েই পৌরসভার দ্বিতীয় তলায় উঠে সিইও এর রুমের বাইরে সাক্ষাৎকার প্রার্থীদের বসার চেয়ারে সাংবাদিক মোঃ মুনসুর রহমানকে দেখেই সিইও নাজিম উদ্দীন বাস্টার্ড বলে গালিগালাজ করে এবং ঐ সাংবাদিক কে অফিসের মধ্যে ডেকে নিয়ে দাঁড় করিয়ে রাখে এবং কিছু সময় পরে বলে বান..দ, বোকা..দা তুই কনে লেখাপড়া করেছিস, তুই কোন পত্রিকায় কাজ করিস, তোর বাবা কি করে, তোর চেয়ে বড় সাংবাদিক আমার চেনাজানা। উত্তরে ভুক্তভোগী মুনসুর রহমান বলেন, সাতক্ষীরা সরকারী কলেজের অধীনে বাংলায় মার্স্টাস করেছি। সাপ্তাহিক সূর্যের আলো পত্রিকার বার্তা সম্পাদক ও স্থানীয় দৈনিক কালের চিত্র পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার হিসাবে কর্মরত। একপর্যায় সিইও বলে তোর বাবার নম্বর দে, ফোন দেবো। উত্তরে সাংবাদিক মুনসুর আলী বলেন, আমি তো অন্যায় করিনি। আমার বাবাকে কেন ফোন দিবেন। তখন সিইও নাজিম উদ্দিন বলেন তোর বাবার সাথে কথা বলবো কেমন সু-পুত্র বানিয়েছে। এরপরে সিইও নাজিম দৈনিক কালের চিত্র পত্রিকার সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু আহমেদকে ফোন দিয়ে লাউডে রাখেন। তিনি ফোন রিসিভ করতেই সিইও আবু আহমেদকে বলেন মুনসুরকে চেনেন। তখন উত্তরে আবু আহমেদ বলেন, হ্যাঁ আমাদের প্রতিনিধি। পরে সিইও আবু আহমেদকে বলেন মুনসুর জমির দখল করেছে, ও ছেলে ভালো না খারাপ। উত্তরে আবু আহমেদ বলেন, মুনসুর ভালো ছেলে। পরে সিইও মুনসুরকে বলল গতদিন আমার কর্মচারীর সাথে খারাপ ব্যবহার করেছিস কেন?
ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা পৌরসভার সচিব লিয়াকত আলী বলেন, আমাদের সাথে তর্ক করেছে। আমাদের কাজে বাঁধা দেওয়ার চেষ্টা করেছে এরই মধ্যে পৌরসভার সিইও অফিস রুমের গেটম্যানসহ আরও দুইজনকে ডেকে অকথ্যভাষায় গালিগালাজ করেন সিইও নাজিম উদ্দিন।
প্রত্যাক্ষদর্শী উদীচী শিল্পগোষ্ঠী সাতক্ষীরা জেলা শাখার সভাপতি ও জেলা নাগরিক কমিটির সদস্য শেখ সিদ্দিকুর রহমান এ প্রতিবেদক কে বলেন, সাতক্ষীরা পৌরসভার সিইও সম্পর্কে বিভিন্ন মানুষ বিভিন্ন রকম মন্তব্য করে,তার বাস্তব প্রমাণ আজ স্বচক্ষে দেখলাম আমি।
তিনি আরো বলেন, সিইও অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করতে করতে প্রতিবন্ধী বায়জিদকে বলে ছাগলের বাচ্চা তোর ধর্য্য নেই। তোর ধর্য এত কম কেন?
এ বিষয়ে সাংবাদিক মুনসুর আলী এ প্রতিবেদক কে বলেন, যেহুতু বায়োজিদ শারীরিক প্রতিবদ্ধী ও উচ্চ শিক্ষিত ছেলে তাই স্থানীয় কাউন্সিলর শফিকুল আলম (বাবুর) সাথে বিষয়টি নিয়ে কথা হলে তিনি ঐ জায়গাই জাওয়ার জন্য পরামর্শ দেন এবং সেই সুবাদে আমরা পৌরসভার সিইও অফিসে যায়।
তিনি আরো বলেন, রবিবার সকাল ১০ টা ৫০ মিনিটে সিইও এর অফিস রুমের সামনে যেয়ে দেখি তালাবদ্ধ রুম।। সেই প্রেক্ষিতে সিইও এর রুমের বাইরে সাক্ষাৎকার প্রার্থীদের চেয়ারে বসেছিলাম। কিছুক্ষণ পরেই উপরে উঠে আমাকে দেখেই গালাগালি দেওয়া শুরু করেন এবং সিইও এর অফিস রুমের মধ্যে ডেকে দাঁড় করিয়ে রাখে। এমনকি মারমুখী আচারণ করতে উদ্যত হয়।
তিনি আরও বলেন, জেলা প্রশাসকের জায়গায় অবস্থিত প্রতিবন্ধী বায়জিদের ভাসমান টলের দোকানটি গত প্রায় ৫দিন আটকে রেখেছে পৌরসভার সিইও। আজকে আমাকে ডেকে, আমার সাথে যে আচারণ করেছেন তা ঐ চেয়ারে বসে করতে পারেন কি না বোধগম্য নয়। আগামীতে আমার মতো কারও সাথে যেন এধরণের আচারণ না করতে পারে সেজন্য জেলা প্রশাসক সহ সংশ্লিষ্ট উদ্ধর্তন কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাতক্ষীরা পৌরসভার একাধিক ব্যাক্তি সাংবাদিক এর নিকট অভিযোগ করে বলেল ইতে পূর্বে সিইও নাজিম উদ্দিন পৌরসভার একজন কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে প্রকাশ্যে মারধর করার জন্য তেড়ে গেছেন এবং এক কর্মচারীকে অকর্ত ভাষায় গালিগালাজ করে রশি দিয়ে দুই হাত বেধে ব্যাপক ভাবে শারীরিক নির্যাতন করেছে। শুধু তাই নয় ঐ সিইও এর বিরুদ্ধে এধরণের ঘটনা নতুন কিছু নয় এর পূর্বের কর্মস্থলে সাংবাদিক সহ নিরিহ মানুষ কে নির্যাতনের একাধিক স্বচিত্র গনমাধ্যমে প্রকাশ পায়। শাস্তি মূলক বদলি হিসাবে সাতক্ষীরা সাতক্ষীরায় পাঠায়।
নির্ভর যোগ্য সূত্রে প্রকাশ নাজিমউদ্দিন একজন দূর্নীতিবাজ তার দূর্নীতি করার কারনে ও বিভিন্ন কর্মস্থলে কর্মরত অবস্থায় অপরাধ করার কারনে নাজিম উদ্দিন এর প্রমোশন হয়নি এবং একই ব্যাচের কর্মরত ব্যাক্তিরা উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ এডিসি পদমর্যাদা পেয়েছেন।
এবিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ও সিইও নাজিম উদ্দিন এর ব্যাচমেট বলেন তার অপরাধ এর কারনে প্রমোশন আটকে আছে।
একটি সূত্রে জানান, সিইও নাজিম উদ্দিন মাদকশক্ত ব্যাক্তি, তার ডোপটেষ্ট করলে প্রমাণ পাওয়া যাবে। লোক মূখে শোনা যায় নাজিম উদ্দিন যখন মাদক খায় তখন সে শারীরিক ভাবে অন্য মোনোশ্ক থাকে আর যখন মাল খায়না তখন উনার মাথায় কাজ করেনা তখন কর্মচারিদের উপর ক্ষেপে যায়।
সাতক্ষীরা পৌরসভার সিইও নাজিম উদ্দীন এর সাথে তার ব্যাবহিত মোবাইলে এ বিষয়ে কথা বললে তিনি বলেন, ঘটনাটি আমি মিমাংসা করার চেষ্টা করেছি। আমি সাংবাদিককে কিছু বলেনি বরং তিনি মিথ্যা বলেছেন এবং আপনি যদি নিউজ করেন সত্য করেন।
অপর এক প্রশ্নে সিইও নিজাম উদ্দিন বলেন, আমি সাতক্ষীরা পৌরসভার কর্মচারী নির্যাতন করিনি আপনি কালকে আমার অফিসে আসেন তার পর সব প্রশ্নের উত্তর দেব বলে মোবাইল ফোন সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।
এ বিষয়ে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোঃ হুমায়ুন কবির গনমাধ্যম কর্মীকে বলেন, ঘটনা তদন্ত করে আইনে ব্যাবস্থা নেব।
সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ বলেন, পৌরসভার সিইও একটি দায়িত্বশীল পদ। এই পদে যেই থাকুক তার কাছে এ ধরনের আচারণ প্রত্যাশা করি না আমরা। তিনি একজন সাংবাদিককে লাঞ্চিত করতে পারেন না।
প্রকাশক : আরিফ মাহমুদ, প্রধান সম্পাদক : কাজী আবু ইমরান, সম্পাদক : আবু রায়হান মিকাঈল
ফেসবুক পেইজঃ facebook.com/kalaroanewsofficial, ই-মেইল : [email protected]