গাজী হাবিব, সাতক্ষীরা: সাতক্ষীরার সাবেক পুলিশ সুপার ও ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক উপকমিশনার কাজী মনিরুজ্জামানকে সাময়িক বরখাস্ত করায় সাতক্ষীরাজুড়ে বিএনপি ও জামায়াত নেতাকর্মীদের মধ্যে আনন্দ-উল্লাসের সৃষ্টি হয়েছে। নির্যাতিতরা আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করেছেন এবং জেলার বিভিন্ন স্থানে মিষ্টি বিতরণ করেছেন।
২০২২ সালের আগস্টে সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার হিসেবে যোগ দেওয়ার পর থেকেই কাজী মনিরুজ্জামান বিএনপি ও জামায়াত নেতাকর্মীদের জন্য এক “আতঙ্ক” হয়ে ওঠেন। ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায়, স্বর্ণ লুট, বিরোধী মত দমনসহ নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
এর আগেও, ২০১৩ সালে সাতক্ষীরা (সদর) সার্কেল এসপি হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে তৎকালীন “ফাটাকেস্টখ্যাত” এসপি চৌধুরী মঞ্জুরুল কবিরের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন তিনি। পরবর্তীতে এসপি হয়ে এসে রাজনৈতিক প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন এবং খুলনা রেঞ্জের “শ্রেষ্ঠ পুলিশ সুপার” উপাধি পান।
বিভিন্ন ভুক্তভোগী জানান, দেড় বছরে তিনি শতকোটি টাকার বেশি লুট করেছেন। সাতক্ষীরার আদালতগুলোতে তার বিরুদ্ধে ডজনখানেক হত্যা মামলা হয়েছে।
তালা উপজেলার এক সাংবাদিক জানান, ডিবি পুলিশের মাধ্যমে আটক করে তার কাছে ১০ লাখ টাকা দাবি করা হয়, পরে ৭ লাখ টাকা দিয়ে মুক্তি পান।
সদর উপজেলার আবু হাসান অভিযোগ করেন, এসপি মনিরুজ্জামান ফিল্মি স্টাইলে স্বর্ণের চালান গায়েব করে পাচারকারীর কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিতেন।
সাতক্ষীরা পৌর বিএনপির সভাপতি মাসুম বিল্লাহ শাহীন দাবি করেন, ২০২৩ সালের ২৭ মে হাইকোর্ট এলাকা থেকে অপহরণের পর চোখ বেঁধে সাতক্ষীরায় নিয়ে যাওয়া হয় এবং ক্রসফায়ারের ভয় দেখানো হয়।
আলিপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা আব্দুর রউফ জানান, বিভিন্ন সময়ে আটক করে তার কাছ থেকে মোট ১ কোটি ৪০ লাখ টাকা নেয়া হয়।
সাংবাদিক হাসানুর রহমান বলেন, গুম ও ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে তার পরিবারের কাছ থেকে ২৬ লাখ টাকা আদায় করা হয়, ফলে তারা নিঃস্বপ্রায় হয়ে পড়েছেন।
পুলিশ সূত্র জানায়, মনিরুজ্জামানের নির্দেশে বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের আটক করে মধ্যরাতে তার সামনে হাজির করা হতো। আটক ব্যক্তির অর্থনৈতিক অবস্থা দেখে ৫০ হাজার থেকে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত আদায় করা হতো। টাকা দিতে না পারলে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে হয়রানি করা হতো। এমনকি গরু বিক্রি, মেয়ের বিয়ে বা ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলনের খবর পেলেই তার লোকজন পৌঁছে যেত এবং অর্থ হাতিয়ে নিত।
গত রোববার (১০ আগস্ট) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের পুলিশ-১ শাখা থেকে কাজী মনিরুজ্জামানকে সাময়িক বরখাস্তের প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। প্রজ্ঞাপনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনির স্বাক্ষর রয়েছে। অভিযোগ করা হয়, ২০২৩ সালের ২৫ নভেম্বর থেকে কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকার কারণে সরকারি কর্মচারী বিধিমালা অনুযায়ী ‘অসদাচরণ ও পলায়ন’ অপরাধে তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
তার বরখাস্তের খবর ছড়িয়ে পড়তেই সাতক্ষীরার বিভিন্ন স্থানে ভুক্তভোগীরা আনন্দ প্রকাশ করেন এবং মিষ্টি বিতরণ করেন। তাদের ভাষ্য- বিচারের পথে প্রথম ধাপ শুরু হয়েছে।
প্রকাশক : আরিফ মাহমুদ, প্রধান সম্পাদক : কাজী আবু ইমরান, সম্পাদক : আবু রায়হান মিকাঈল
ফেসবুক পেইজঃ facebook.com/kalaroanewsofficial, ই-মেইল : [email protected]