সাতক্ষীরায় কোরবানীর ঈদে পশুর চামড়া কিনে বিপাকে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। ঈদের এক সপ্তাহ অতিবাহিত হলেও কেনা চামড়ার একটিও বিক্রি করতে পারেননি তারা। এছাড়া অবিক্রিত অবস্থায় পড়ে আছে মসজিদ ও মাদ্রাসায় সংরক্ষিত দানকৃত চামড়া । এদিকে ভারতে চামড়া পাচার রোধে সীমান্তে কঠোর নজরদারি রেখেছে বিজিবি। খবর পত্রদূতের
জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা যায়, জেলায় ১৭ হাজার গরু কোরবানি হয়েছে। আর ছাগল কোরবানি হয়েছে ৩৪ হাজার। গরুর চামড়ার সরকারি দাম ধরা হয়েছে ৫৫ টাকা বর্গফুট হিসেবে। আর ছাগলের চামড়ার দাম ধরা হয়েছে ২২ টাকা বর্গফুট দরে।
স্থানীয় সূত্রমতে, চামড়া কেনায় সরকারি রেট মানা হয়নি কোথাও। তিন শত থেকে সর্বোচ্চ ছয় শত টাকায় গরুর চামড়া কিনেছেন ব্যবসায়ীরা। অধিকাংশ ছাগলের চামড়া বিক্রি না হওয়ায় সেগুলো মসজিদ ও মাদ্রাসায় দান করা হয়েছে। এছাড়া মসজিদ ও কওমী মাদ্রাসার তহবিলে গরুর চামড়া দান করা হয়েছে। এগুলো অবিক্রিত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা গেছে।
এবিষয়ে সাতক্ষীরা মাগুরা গ্রামের ব্যবসায়ী এসএম রুবেল জানান, আমি এক লাখ টাকা মূল্যের একটি গরু ও একটি ছাগল কোরবানি করেছিলাম। ন্যায্য মূল্যে চামড়া বিক্রি করতে পারবনা বিধায় পাশেই একটি কওমী মাদ্রাসায় দান করেছিলাম।
শহরের দক্ষিণ কাটিয়ার মাদরাসাতুস সাহাবাহ নামক কওমী মাদ্রাসার শিক্ষক ইউসুফ জামিল বলেন, আমাদের মাদ্রাসায় এলাকার লোকেরা ২১৩টি গরু ও ২২০ টি ছাগলের চামড়া দান করেছিলেন। গরুর চামড়াগুলো গড়ে ৪৭৫ টাকা বিক্রি করা সম্ভব হয়েছিল। সাতক্ষীরার চামড়া ক্রেতারা নিয়েছিলেন। আর ছাগলের চামড়া ক্রেতারা কিনতে চাচ্ছিলেননা। সবশেষ প্রতি পিচ মাত্র দশ টাকা দরে ছাগলের চামড়াগুলো বিক্রি করা হয়েছে।
তবে সাতক্ষীরা সিটি কলেজ এলাকায় অবস্থিত কওমী মাদ্রাসায় পাঁচ শতাধিক গরুর চামড়া পড়ে আছে। রক্ষণাবেক্ষণ করতে যা খরচ হচ্ছে, তাতে বিক্রি না হলে মারাত্মক ক্ষতিতে পড়ার আশঙ্কা করছেন মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ।
মাদ্রাসার শিক্ষক মাওলানা হাবিবুর রহমান জানান, বড় একটি অর্থের উৎস দানের চামড়া। এবছর ৫ শতাধিক চামড়া মাদ্রাসায় এসেছে। লবণ দিয়ে প্রতিদিন প্রক্রিয়াজাতকরণের কাজ চলছে। তবে ক্রেতারা যোগাযোগ না করায় দুশ্চিন্তায় রয়েছি।
সাতক্ষীরা পলাশপোল এলাকার ব্যবসায়ী আবুল হাশেম বলেন, আমি ২০ বছর ধরে চামড়ার ব্যবসা করি। গতবছর কিছু চামড়া কিনেছিলাম। হাতে-পায়ে ধরে যশোরের ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করেছিলাম। কিন্তু টাকা পাইনি। এবার তাই লোকসানের ভয়ে চামড়া কিনিনি।
সাতক্ষীরা সুলতানপুর বড়বাজার এলাকার ব্যবসায়ী জামালউদ্দীন বলেন, আমি এবার প্রায় দেড় হাজার চামড়া কিনেছি। কিন্তু ঈদের এক সপ্তাহ পার হলেও একটি চামড়া বেঁচতে পারিনি। ঢাকা থেকে এখন পর্যন্ত কেউ যোগাযোগ করিনি।
তিনি আরও বলেন, গড়ে এক একটি চামড়া ৫শ’ টাকায় কিনেছি। মাসব্যাপী লবণ দিয়ে প্রক্রিয়াজাত করতে ২শতাধিক টাকা খরচ হবে। এরপরেও বিক্রি করতে পারব কিনা জানিনা।
জামালউদ্দীন আরও বলেন, সাতক্ষীরার চামড়ার ক্রেতা মুলত যশোর ও ঢাকার ব্যবসায়ী ও ট্যানারি মালিকেরা। গতবছর তারা চামড়া নিয়েছে, তবে বিপুল পরিমাণ টাকা অনাদায়ী পড়ে আছে। লবণ মেশানোর পরেও ১মাস পরে চামড়া নষ্ট হয়ে যাবে। একদিকে চামড়া বিক্রি করতে না পারার শঙ্কা, অন্যদিকে বিক্রিত চামড়ার টাকা প্রাপ্তির অভরসা, সবমিলিয়ে খুবই দুশ্চিন্তায় আছি। দীর্ঘদিনের পেশা বলে চামড়া ব্যবসা ছাড়তেও পারছিনা।
সাতক্ষীরা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ সহিদুল ইসলাম জানান, জেলায় এবছর ৫০ হাজার পশু কোরবানি হয়েছে। যার মধ্যে ১৭ হাজার বিভিন্ন সাইজের গরু। বাকীটা ছাগল। মাইকিং করে জনগণকে চামড়ার দাম জানানো হয়েছে প্রাণিসম্পদ অফিসের পক্ষ থেকে। গরুর চামড়ার সরকারি রেট ৫৫ টাকা প্রতি বর্গফুট। আর ছাগলের চামড়া ২২ টাকা প্রতি বর্গফুট। তবে বর্গফুট হিসেবে না কিনে মোট হিসেবে কিনেছেন ক্রেতারা বলে শুনেছি।
এদিকে সীমান্তবর্তী জেলা হিসেবে চামড়া পাচারের বিষয়ে কড়া নজরদারি রেখেছে বিজিবি। ভারতে চামড়ার দাম ভাল পাওয়া যায় বলে সেখানে পাঠাতে আগ্রহী সাতক্ষীরার ব্যবসায়ীরা।
এবিষয়ে ৩৮ বিজিবি’র অধিনায়ক লেঃ কর্নেল আল মাহমুদ জানান, কোরবানির ঈদে ভারতে চামড়া পাচারের একটা সম্ভাবনা থাকে। সেই কারণে আমরা সীমান্তে কড়া নজরদারি রেখেছি। কোনভাবে ভারতে চামড়া পাচার করতে দেওয়া হবেনা বলে দৃড় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন বিজিবি অধিনায়ক।
প্রকাশক : আরিফ মাহমুদ, প্রধান সম্পাদক : কাজী আবু ইমরান, সম্পাদক : আবু রায়হান মিকাঈল
ফেসবুক পেইজঃ facebook.com/kalaroanewsofficial, ই-মেইল : [email protected]