করোনা মহামারির মধ্যেও সাতক্ষীরায় এ ভাইরাস প্রতিরোধক টিকা নিয়ে শুরু হয়েছে হ-য-ব-র-ল অবস্থা। প্রতিদিন টিকা নিতে এসে ফিরে যাচ্ছেন শত শত মানুষ। নিবন্ধন করেও দিনের পর দিন টিকা নিতে না পেরে ক্ষুব্ধ হচ্ছেন তারা। জেলায় নিবন্ধন করে এসএমএস পেয়েও টিকা নিতে পারেনি প্রায় ৫ হাজার মানুষ। এ ছাড়া প্রথম ডোজ সম্পন্ন করে দ্বিতীয় ডোজের টিকা পাননি অন্তত ৩০ হাজার মানুষ।
জেলায় সরকারি হিসাবে করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৮১ জন। উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন ৪৬৮ জন। গ্রামেগঞ্জে বাড়িতে চিকিৎসাধীন যেসব মানুষ মারা যাচ্ছেন তারা এই হিসাবের বাইরে থেকে যাচ্ছেন। জেলায় এ পর্যন্ত মোট করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৪ হাজার ৯২৬ জন। বাড়িতে আইসোলেশনে থাকা রোগীর সংখ্যা ১ হাজার ১৯৫ জন মানুষ।
এখনো সাতক্ষীরায় করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার ঊর্ধ্বমুখী। এ অবস্থায় টিকা না পেয়ে আরও উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষ।
জানা গেছে, সাতক্ষীরায় প্রথম দফায় টিকার জন্য রেজিস্ট্রেশন করেন এক লাখ ৪হাজার ১৮২জন। এরমধ্যে অ্যাস্ট্রাজেনেকার ৮৩ হাজার ৭১৪ জন প্রথম ডোজ টিকা নেওয়ার সুযোগ পান। আর দ্বিতীয় ডোজের টিকা দেওয়ার সুযোগ পান ৫২ হাজার ২৭৫ জন। টিকা না থাকায় প্রথম ডোজ টিকা পেলেও দ্বিতীয় ডোজে নিতে পারেনি ৩১ হাজার ৪৩৯ জন।
কলারোয়া থানার মনোয়ারা খাতুন জানান, তিনি রেজিস্ট্রেশন করেছেন এবং ১৪ জুলাই সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে টিকা নেওয়ার এসএমএস পান অথচ তিনি প্রতিদিন গিয়ে ফিরে আসছেন। এখনো টিকা দিতে পারেননি। শহরের প্রাণসায়র এলাকার নিরুপম রায় বলেন, তিনি ১০ জুলাই রেজিস্ট্রেশন করেছেন এখনো এসএমএস পাননি। যে কারণে তিনি টিকা নিতে পারছেন না।
কাটিয়া সরকারপাড়া এলাকার শাহানা জামান জানান, তিনি গত ৮ এপ্রিল ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের টিকা নিয়েছেন। তার দ্বিতীয় ডোজের তারিখ ছিল ৬ জুন। কিন্তু তিনি এখনো পর্যন্ত টিকা নিতে পারেননি। আর কবে পাবেন তা জানেনও না।
এদিকে স্বাস্থ্য বিভাগের সূত্র মতে, জেলায় দ্বিতীয় দফায় সিনোফার্মের টিকা আসে ৪৩ হাজার। যার ১০ হাজার ৮০০ ডোজ সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল ও সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রাখা হয় এবং ৩২ হাজার ২০০ টিকা পাঠানো হয় ছয়টি উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে।
সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন ডা. হুসাইন সাফায়াত জানান, সাতক্ষীরায় জেলায় ৮টি কেন্দ্রে টিকা দেওয়া হচ্ছে। প্রথম দফায় কোনো সমস্যা না হলেও দ্বিতীয় দফায় মানুষের চাপ সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা। অনেক মানুষ কেবল রেজিস্ট্রেশন করে এসএমএস না পেয়েও চলে আসছেন টিকা দিতে। যে কারণে তাদের সমস্যা হচ্ছে। করোনা সংক্রমণ যাতে ছড়াতে না পারে এজন্য রোববার থেকে ১৫০ জনের তালিকা ফেসবুকে প্রকাশ করে সদর হাসপাতাল টিকা প্রদান কেন্দ্রে টানানো হয়েছে। এই তালিকার বাইরে আপাতত টিকা দেওয়া হবেনা বলে জানান তিনি।
এসএমএস পেয়েও টিকা নিতে পারছেন না এমন প্রশ্নের জবাবে সিভিল সার্জন বলেন, ‘আমরা প্রথম দিকে ৪০০ থেকে ৪৫০ জন মানুষকে টিকা দিয়েছি। কিন্তু মানুষের চাপ সামাল দিতে এই ব্যবস্থা করতে হয়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগের সক্ষমতার অনেক বেশী মানুষ ভিড় করছে টিকা কেন্দ্রে। যে কারণে তারা টিকা দিতে পারছেন না।’ এখনও ৫ হাজারের বেশী মানুষ এসএমএস পেয়েও টিকা নিতে পারেনি স্বীকার করে সিভিল সার্জন বলেন, ‘তাদের জন্য ঈদের পরে বিকল্প ব্যবস্থা করা হবে।’
প্রকাশক : আরিফ মাহমুদ, প্রধান সম্পাদক : কাজী আবু ইমরান, সম্পাদক : আবু রায়হান মিকাঈল
ফেসবুক পেইজঃ facebook.com/kalaroanewsofficial, ই-মেইল : [email protected]