সাতক্ষীরা শহরতলীর বাঁকাল খেয়াঘাট জেলেপাড়ায় হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও চারজনকে পিটিয়ে জখম করার ঘটনায় জেলা যুবলীগের আহবায়ক আব্দুল মান্নানকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ শেখ ফজলে সামস পরশ এর নির্দেশে গত ৩ আগষ্ট সংগঠণের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোঃ মঈনুল হোসেন নিখিল স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে তাকে বহিষ্কার করা হয়।
চিঠিতে উলেখ করা হয়েছে “বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ একটি সুসংগঠিত ও সুশৃঙ্খল সংগঠণ। সাতক্ষীরা জেলা যুবলীগের আহবায়ক আব্দুল মান্নানকে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়ি দখল ও সংগঠণ বিরোধী কার্যকলাপে জড়িত থাকার অভিযোগে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ এর নির্দেশে সংগঠণ থেকে বহিষ্কার করা হলো।”
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, সাতক্ষীরা শহরতলীর বাঁকাল থেয়াঘাট জেলেপাড়ার পুলিশ মাখাল ২০০৭ সালে মারা যাওয়ার আগে তার দু’ ছেলে ভারতে চলে যায়। এক ছেলে পরিতোষ দেশে থাকার পরও তিনি তার সকল সম্পত্তি স্থানীয়দের কাছে বিক্রি করেন। সুব্রত মাখাল মানবিক কারণে পুলিন মাখালের ছেলে পরিতোষকে তার একটি ঘরে বসবাসের সুযোগ দেন।
সূত্রটি আরো জানায়, শহরের দক্ষিণ কাটিয়ার সানাউলাহ গাজীর ছেলে মুজিবর পেশকার পুলিন মাখালের কাছ থেকে ২০০৫ সালে ১৫ শতক জমির জন্য পঁাচ লাখ টাকা দিয়েছেন এমন মৌখিক দাবিতে পরিতোষ ও তার ভারতীয় বাসিন্দা এক ভাইকে বিবাদী করে আদালদত থেকে ডিক্রী পেয়েছেন বলে চলতি বছরের মার্চ মাসের শেষের দিকে দাবি করে আসছিলেন। এ নিয়ে সুব্রত মাখাল ও তার শরীকরা স্থানীয়ভাবে, থানা ও আদালতের কয়েকজন জ্যেষ্ঠ আইনজীবীর মাধ্যম্যে শালিসি বৈঠক করেন। শালিসি বৈঠকে উপস্থিত না থাকলেও জেলা যুবলীগের আহবায়ক আব্দুল মান্নান মুজিবর পেশকারের পক্ষ নেন। শুভ, স্থানীয় রমিজ ড্রাইভার, তার ছেলে আলমগীর হোসেনসহ কয়েকজন চলতি বছরের ৮ জুন রাতে তাদের পাড়ায় এসে রাতের মধ্যে হিন্দুদের দেশ ছেড়ে যাওয়ার হুমকি দিয়ে যায়। তা না হলে যুবলীগ নেতা মান্নানের সহায়তায় তাদেরকে দেশছাড়া করার হুমকিও দেওয়া হয়।
একপর্যায়ে ৯ জুন সকালে ওইসব হুমকিদাতাসহ কয়েকজন সুকুমার বিশ্বাসসহ কয়েকজনের বাড়িতে হামলা ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। বাধা দেওয়ায় জয়দেব মাখাল, সহাদেব মাখাল, বিশ্বজিৎ মাখাল, শ্যামলী বিশ্বাস ও সরজিত কাজীকে পিটিয়ে জখম করে। তাদেরকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনায় সুকুমার বিশ্বাস গত ৯ জুন বাদি হয়ে মুজিবর ড্রাইভারসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে থানায় এজাহার দেন। একপর্যায়ে শালিসের রায় মুজিবর পেশকারের বিপক্ষে গেলেও আইনজীবীদের মতামতকে উপেক্ষা করে জুলাই মাসের ১৫ তারিখে ঈদের পর তিনি নিজে সংখ্যালঘুদের নিয়ে বসে সমস্যার সামধান করে দেবেন বলে জানিয়ে দেন।
বাঁকাল খেয়াঘাট জেলেপাড়ার নিরঞ্জন মাখাল বলেন, যুবলীগ নেতা মান্নানের নেতৃত্বে ৩০/৪০জন ৩০ জুলাই সন্ধ্যার পর তার বাড়ি ও পূর্ণিমার বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়।
ভাঙচুর ও লুটপাটে বাধা দেওয়ায় তাকে, তার স্ত্রী অহল্যা, সহদেব মাখাল ও বলরাম মাখালকে পিটিয়ে জখম করা হয়। হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের পর তারা ঝাঁটা মিছিল নিয়ে সড়ক অবরোধ করলে মুজিবর ও তার ছেলেকে পুলিশ আটক করলেও আওয়ামী লীগ নেতাদের কথায় ছেড়ে দিয়ে শুক্রবার সকালে থানায় আলোচনায় বসার কথা বলেন। অথচ শুক্রবার হামলাকারিপক্ষ থানায় আসেনি।
এ ঘটনায় ৩০ জুলাই বৃহষ্পতিবার রাতে নিরঞ্জন মাখাল বাদি হয়ে যুবলীগ নেতা আব্দুল মান্নানসহ পঁাচজনের নাম ও অজ্ঞাতনামা ১৬জনকে আসামী করে এজাহার দেন। পহেলা আগষ্ট মামলা রেকর্ড করা হয়।
যুবলীগের দলীয় একাংশের অভিযোগ, আব্দুল মান্নানের জেলা ব্যাপি চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, অন্যের জমি দখল, ঘের দখলসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে।
সাংবাদিক আবেদ খানের জমি দখলের অভিযোগে ২০০৬ সালে মান্নানকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। এরপরও তিনি উর্দ্ধতন নেতৃবৃন্দকে ম্যানেজ করে আবারো স্বপদে বহাল হন।
প্রকাশক : আরিফ মাহমুদ, প্রধান সম্পাদক : কাজী আবু ইমরান, সম্পাদক : আবু রায়হান মিকাঈল
ফেসবুক পেইজঃ facebook.com/kalaroanewsofficial, ই-মেইল : [email protected]